যে পল্লীর পেশা পকেটমার-শেষ পর্ব

চেলোপাড়ার একজন নূরী বেগম

প্রতীক ওমর, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০১৭, ০৮:২৯

বগুড়া শহরের হার্ড পয়েন্টে একটা পাড়া চেলোপাড়া। শহরের মধ্যে যেন অচেনা আরেক শহর। দেশের বহমান কৃষ্টি-কালচারের বাইরে থেকে তারা চলে নিজেদের মতো করে। সমাজ, সামাজিকতা সবকিছু তাদের আলাদা। তাদের বেশির ভাগ বংশপরম্পরায় পকেটমার। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ সবাই জড়িয়ে যায় এই কাজে।

তাদেরই একজন নূরী বেগম। বয়স ২৮ থেকে ৩০ বছর। চেহারায় লাবণ্য এখনো ফিকে হতে শুরু করেনি। ভোর হলেই বেরিয়ে পড়েন শহরের রাস্তায়। ব্যস্ত গলি, মার্কেট অথবা কোর্ট প্রাঙ্গণ তার বিচরণের জায়গা। তীব্র দৃষ্টি নিয়ে তার দুই চোখ ঘুরে বেড়ায় লোকের পকেট, মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগের ওপর। সুযোগ পেলেই হাতিয়ে নেয় টাকা, মোবাইল ফোন।

পরিচিত লোকজন পকেটমার হিসেবেই চেনে নূরীকে। বাস করেন শহরের পকেটমারপল্লী বলে খ্যাত উত্তর চেলোপাড়ায়। সামাজিকভাবে স্বীকৃতি নেই তাতে কী। আলাদাভাবেই নূরী বেগমরা তাদের একটা সমাজ তৈরি করে নিয়েছেন। সেই সমাজ চলে তাদের নিয়ন্ত্রণেই। সর্দার আছে, প্রশিক্ষক আছে, আছে অনুগত অনুসারীও।

নূরীরা সংঘবদ্ধভাবে মাঠে-ঘাটে কাজ করে বেড়ায়। কখনো বিপদে পড়লে সামাজের কিছু প্রভাশালী ব্যক্তি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। এরাই তাদের নিয়ন্ত্রক। ওরা তাদের সর্দার বলে মানে। সর্দারদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য থাকায় কখনো কোনো পকেটমার ধরা পড়লে তাদের ছাড়িয়ে আনতে সবকিছুই করে থাকে তারা।

গত বছর ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের ব্যস্ততম সাতমাথা এলাকায় এক মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগে আঙুল চালানোর সময় ধরা পড়েন নূরী বেগম। শুরু হয় গণপিটুনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কর্তব্যরত পুলিশ। জনরোষের হাত থেকে রক্ষা করে তাকে ধরে নিয়ে যায় সদর থানায়। এই সময়েই তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় এই প্রতিনিধির। প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও তার হয়ে কাজ করার আশ্বাস দিলে খোলামেলা কথা বললেন নূরী বেগম। তাতে বেরিয়ে আসে তার জীবনের চাঞ্চল্যকর খবর।

জন্মগত পরিচয় বরাবরই আড়ালে রেখে কথা বলেন নূরী। তবে জন্ম যেখানেই হোক, যেভাবেই হোক, শৈশবে বেড়ে ওঠার পরিবেশটা মোটেও ভালো ছিল না তার এটুকু বোঝা যায় তার সঙ্গে কথা বলে। নূরী বেগম যখন ৭-৮ বছরের শিশু, তখন থেকেই তিনি পকেটকাটার কাজে জড়িয়ে পড়েন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে ওঠেন দক্ষ পকেটমার। এখন নূরী বেগম এ লাইনের ২০ বছরের একজন অভিজ্ঞ কৌশলী পকেটমার। আর এটাই তার পেশা।

জানা গেল, নূরী বেগম বগুড়ার নিউমার্কেট, সাতমাথা এবং কোর্ট এলাকায় নিয়মিত পকেট মারেন। তাকে সহযোগিতা করার জন্য থাকে একটা দল। সেই দলে আছে ছয়-সাতজন কিশোরী ও মহিলা। মোট আটজনের এই দলের নেতা নূরী। সারা দিনে অন্যের পকেট থেকে তুলে আনা টাকা ভাগ হয় রাত ১১টার পরে। মোট টাকার অর্ধেক নিজে নিয়ে বাকিটা অন্যদের মধ্যে সমান ভাগ করে দেয়া হয়।

সব দিনেই কাজ এক রকম হয় এমনটি নয়। তবে সপ্তাহে দুই-তিন দিন কাজ হলেই ভালো চলে যায় নূরী বেগমদের।

তার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নূরী বেগমের বিয়ে হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কোথাও সংসার করতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে অনৈতিক কাজসহ মাদক ব্যবসায়ীদের নেশাদ্রব্য খুচরা বেচার কাজও করে থাকে নূরী বেগম ও তার দলের লোকজন। নিজেরাও নেশা করে তারা। বেশির ভাগ রাতেই তাই এরা মাতাল হয়ে রাস্তায় চলাফেরা করে বলে জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা।

নূরী বেগমের মতো আরো শতাধিক কিশোরী ও নারী বগুড়া শহরে বাস করে। তাদের অধিকাংশের বাস চেলোপাড়া এলাকায়। এ ছাড়া শহরের মালতিনগর, বাদুড়তলা, কাটনারপাড়া এলাকাতেও এদের দেখা যায়। নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী সব মিলে পকেটমারের সংখ্যা তিন শতাধিক হবে বলে জানান নূরী বেগম। পকেট কাটার অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মাঝেমাধ্যে গ্রেপ্তার হলে ১-২ মাসের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে আবার মাঠে নামে তারা।

নূরী বেগম এখন জেলের বাইরে। শহরের অলিগলি, মার্কেটে এখন তার বিচরণ।

ঢাকাটাইমস/২৯জুন/কেএস/মোআ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :