বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উপচেপড়া ভিড়

আবুল হাসান, গাজীপুর
| আপডেট : ২৯ জুন ২০১৭, ১৮:৩০ | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০১৭, ১৮:২৩

ঈদের ছুটি শেষ হলেও রেশ যেন কাটেনি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আসা দর্শনার্থীদের। এখনো হাজার হাজার পযর্টকের ভিড়ে মুখরিত সাফারি পার্ক। তাদের ওপচেপড়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিবেশ নিয়ে পর্যটকরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও গাড়ি রাখার সঙ্কট ও থাকার জায়গা নিয়ে তাদের রয়েছে কিছুটা ক্ষোভ।

তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এবারের ঈদে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য তারা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে থাইল্যান্ডের সাফারি পার্কের আদলে নির্মিত পার্কটি ২০১০ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো ও বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, জিরাফসহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণি দেখতে বিভিন্ন বয়সী পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ার মত। সাফারি পার্কে বর্তমানে বড় আকারের বাঘ রয়েছে ৯টি। সিংহ রয়েছে ২৩টি, ভাল্লুক ১৫টি, জিরাফ ১০টি। এছাড়া মরুভূমির প্রাণি উট পাখি, ক্যাঙ্গারো, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, প্রজাপতি দর্শকদের মোহিত করে। প্রতিদিন পার্কের বিভিন্ন বন্যপ্রাণির নৈপূণ্য ও খেলাধুলা দেখতে ভিড় জমায় হাজার হাজার দর্শনার্থী। পর্যক্ষেণ টাওয়ারে উঠে দর্শনার্থীরা সুবিশাল সবুজ প্রকৃতি দেখতেও ভিড় জমান।

এখানে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে কোর সাফারি পার্কে। প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, হরিণ, জিরাফ এবং জেব্রাসহ বিভিন্ন প্রাণির অবাধ বিচরণ দর্শকরা গাড়ির ভেতরে অবস্থান নিয়ে দেখতে পান। খুব নিকটে থেকে বাঘ-সিংহের বিচরণ দেখে উল্লসিত এবং শিহরিত হন দর্শকরা। এছাড়া প্রজাপ্রতি, পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কুমির, বোটে চড়ে হাঁস দেখা এবং হাতিতে চড়েও আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

কোর সাফারি: এখানে গাড়ি ছাড়া কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন না। পর্যটক বা দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট ১০০ টাকা ফি পরিশোধ করে গাড়ি বা জিপে করে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে রাখা বন্যপ্রাণি দেখতে পারবেন। ১২শ ১৭ একর জায়গা বিস্তৃত ‘কোর সাফারি’ পার্কের মধ্যে ২০ একরে বাঘ, ২১ একরে সিংহ, ৮ দশমিক ৫০ একরে কালো ভাল্লুক, ৮ একরে সিংহ, ৮ একরে আফ্রিকান চিতা, ৮১ দশমিক ৫০ একরে চিত্রা হরিণ, ৮০ একরে সাম্বার ও গয়াল, ১০৫ একরে হাতি, ৩০ একরে মায়া ও প্যারা হরিণ আছে।

আফ্রিকান সাফারি: আফ্রিকান সাফারি পার্কের জন্য বরাদ্দ ২৪০ একর। যার মধ্যে বাঘ, সিংহ, সাদা সিংহ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়ার্ল্ডবিস্ট, অরিক্স, ভাল্লুক ও অন্যান্য বন্যপ্রাণি।

সাফারি কিংডম: ৫শ ৫৬ একরের মধ্যে তৈরি করা এই অংশে ঢুকতে গেইটের পাশেই ম্যাকাও ল্যান্ড। এখানে আছে নীল-সোনালি ম্যাকাও, সবুজ ম্যাকাও, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, টিয়া, পেলিকেন, লুটিনো রিংনেক প্যারটসহ প্রায় ৩৪ প্রজাতির পাখি। ম্যাকাও ল্যান্ডের পাশেই মেরিন অ্যাকুরিয়াম। রয়েছে গোল্ডেন ফিস, ক্রোকোডিল ফিস, টাইগার ফিসসহ প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। এছাড়া এখানে চিকলেট মাছ রয়েছে যা ২০ সেকেন্ড পরপর রং পরিবর্তন করে।

এছাড়া প্রজাপতি সাফারিতে প্রায় ২৬ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, জিরাফ ফিডিং স্পট, আইল্যান্ড, বোটিং ও লেইক জোন। তাছাড়া অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্নার, এগ ওয়ার্ল্ড, ক্যাঙারু, হাতি শো গ্যালারি।

সাফারি কিংডমের পশ্চিমে অংশে আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালি তিনটি পাখিশালা। ধনেশ পাখিশালায় রয়েছে প্রায় আট প্রজাতির পাখি। এরইমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্যারট, ফিজেন্ট ধনেশ, ফ্লেমিংগো, ব্লাক সোয়ান ও বিরল প্রজাতির মান্ডারিন ডাক ছাড়া হয়েছে। এখানে বিরল প্রজাতির কিছু প্রাণি আছে যেগুলো এশিয়া অঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় না। এগুলোর মধ্যে আল পাকা, ক্ষুদ্রকায় ঘোড়া, ওয়ালাবি, ক্রাউন ক্রেইন, মান্ডারিং ডাক ইত্যাদি।

বঙ্গবন্ধু স্কয়ার: পার্কের প্রবেশ পথে পার্কিং এলাকা, বিনোদন উদ্যান ও প্রশাসনিক কাজে ৩৮ একর এলাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে বিশাল পার্কিং এলাকা। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় মুরাল ও মডেলসহ প্রধান ফটক, ফোয়ারা, জলাধার ও লেক। তথ্যকেন্দ্র, পার্ক অফিস, ডরমেটরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ঐরাবতী ও ময়ূরী বিশ্রামাগার, ইকো-রিসোর্ট, ডিসপ্লে ম্যাপ, আরসিসি বেঞ্চ ও ছাতা। এছাড়াও রয়েছে দুটি বিশাল আকারের পর্যবেক্ষণ রেস্তোরা ‘টাইগার রেস্তোরাঁ’ এবং সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। এই দুটো রেস্টুরেন্টে বসেই কাচের ভেতর দিয়ে সিংহ এবং বাঘ দেখতে দেখতে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

পার্কে নরসিংদী থেকে আগত তমাল জানান, বন্ধু-বান্ধবের সার্কেল নিয়ে তিনি সাফারি পার্কে এসেছেন। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ার দেখে বিমোহিত তিনি।

তার ভাষ্য, বাঘ, সিংহ এতদিন শুধু টেলিভিশনে দেখেছি। প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কাছ থেকে আজ দেখলাম। গাড়ির ভেতরে থাকলেও ভয় ও উত্তেজনা ছিল সবার মধ্যে।

পার্কের এনিমেল কিপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পার্কে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য এখানে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা জরুরি। তাছাড়া এখানকার গভীর বনাঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক খুব দুর্বল। ফলে দর্শনার্থী ও পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে যোগাযোগ করতে খুবই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

পার্কের রেঞ্জার মো. মোতালেব হোসেন জানান, ঈদের দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। তবে সরকারি ছুটি শেষ হলেও পার্কের দর্শনার্থী কমেনি। পার্কে অধিকাংশ দর্শনার্থীদেরই ‘কোর সাফারি পার্কে’ ভিড় করতে দেখা গেছে। কোর সাফারি পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভেতর উন্মুক্তভাবে বিচরণ করে। এসব প্রাণি দেখতে নির্ধারিত ফি দিয়ে দর্শনার্থীদের পার্কের নির্ধারিত মিনিবাস-গাড়িতে চড়ে যেতে হয়। তবে কোর সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। পার্কে এখন দর্শনার্থীদের জন্য ২৮ আসনের ছয়টি মিনিবাস রয়েছে। এ কারণে সাফারি পার্কের একাংশ দেখতেই দর্শনার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ করা দরকার। পার্কের এতসব আয়োজন দেখভালের জন্য দরকার ২০০ জনবল সেখানে রয়েছেন মাত্র ৪৭ জন কর্মচারী, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। এজন্য ২০১৫ সালে লোকবল চেয়ে পার্কের প্রকল্প কর্মকর্তা তপন কুমার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত লোকবল নিয়োগ হয়নি বলে জানান মোতালেব হোসেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :