রিকশার প্যাডেল মাড়িয়েও স্বপ্ন বুনছেন মিন্টু
কালা পিচ ঢালা সড়কে দুই পায়ে রিকশার প্যাডেল মাড়িয়ে যাত্রী নিয়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত ছুটে চলেন মিন্টু। সময় পেলে চোখ বন্ধ করে মনে মনে স্বপ্ন বুনেন সুন্দর আগামীর। যেখানে থাকবে না অভাব, ছোট ভাই-বোন পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, দরিদ্র বাবা-মার মুখের ফুটবে স্বচ্ছলতার হাসি।
বলছি, মিরপুর পলিটেকনিকে টেক্সটাইল চতুর্থ সেমিস্টারে পড়া মিন্টু বর্মনের কথা। ট্রেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারে পড়া মিন্টু নিজের ও ছোট ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগতে ক্লাস শেষে রিকশা চালিয়ে খরচ যোগান।
মিন্টু বর্মন নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার খামার বামুনিয়া গ্রামের বিকাশ বর্মন ও কনিকা রানী বর্মনের ছেলে। তিনি মিরপুর দেশ পলিটেনিকের টেক্সটাইলে চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র। ক্লাস শেষে মিরপুরে, ঈদ-পূজায় মির্জাপুরে এসে রিকশা চালান মিন্টু।
সহায়-সম্বলহীন বিকাশ বর্মনের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মিন্টু বর্মন বড়। বিকাশ বর্মনের বসতভিটা ছাড়া কোন জমি না থাকায় রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষনসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন। মনে মনে স্বপ্ন দেখা মিন্টু ২০১৫ সালে নীলফামারীর মটুকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা মিরপুর দেশ পলিটেকনিকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। কিন্ত দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা বিকাশ বর্মনের পক্ষে মিন্টুকে ঢাকায় রেখে পড়াশোনা করানো ছিল অসম্ভব। কিন্তু অদম্য মিন্টু যে থেমে থাকার পাত্র নয়। তিনি নিজ চেষ্টায় ওই বছরই মিরপুর দেশ পলিটেনিকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হন। থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ার খরচ যোগাতে কলেজ সময়ের পর মিরপুরে রিকশা চালাতে শুরু করেন।
এছাড়া মিন্টুর চাচা প্রদীপ বর্মন মির্জাপুরে থেকে ভ্যান চালান। ঈদ ও পূজায় লম্বা ছুটি পেলে চাচার বাসায় থেকে মির্জাপুর শহরে রিকশা চালান মিন্টুও। এভাবে রিকশা চালিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচের ব্যবস্থার পাশাপাশি নবম শ্রেণিতে পড়া ছোট ভাই জীবন বর্মন ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া বোন লিপি রানী বর্মনের লেখাপড়ার খরচেও সহযোগিতা করেন তিনি।
বুধবার মির্জাপুর বাজারের কলেজ রোডে রিকশা চালানোর সময় কথা হলে মিন্টু বর্মন জানান, সকাল থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত কলেজে ক্লাস শেষ করে মিরপুরে রিকশা চালান। এতে যে আয় হয়- তা দিয়ে কলেজের বেতন, ম্যাস ভাড়াও খাওয়া খরচ মিটিয়ে কিছু কিছু টাকা-পয়সা ছোট ভাই-বোনকে পাঠান।
এছাড়া ঈদ ও পূজার লম্বা ছুটি পেলে চাচার বাসায় থেকে রিকশা চালান তিনি।
তিনি জানান, পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি করব। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করব। এছাড়া মিন্টু স্বপ্ন দেখেন, ছোট ভাই-বোনকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার এবং দরিদ্র মা-বাবার মুখে একটু স্বচ্ছলতার হাসি ফুটানোর। দুই পায়ে রিকশার প্যাডেল ঠেলা জীবনযুদ্ধের অদম্য সৈনিক মিন্টুর এই স্বপ্ন কি বাস্তবে রূপ পাবে?
(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/প্রতিনিধি/এলএ)