চিনাদী বিলে ঈদ আনন্দ

এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী
| আপডেট : ৩০ জুন ২০১৭, ১৯:৪২ | প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০১৭, ১৯:৪০

নরসিংদী জেলার সাধারণ মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বিনোদনকেন্দ্র নেই। স্বাধীনতার পূর্বাপর ৬০ বছরেও নরসিংদী শহর বা শহর সংলগ্ন আশপাশের এলাকায় কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতা উত্তরকালে সাধারণ মানুষ ঈদ উৎসব, পূজা পার্বণ, জাতীয় দিবসের ছুটির দিনগুলোতে একটু নির্মল আনন্দের জন্য নদ-নদীর পারে ঘুরাফেরা করতে যেতেন।

শহরের ধনবানরা এই নির্মল আনন্দটুকু কেড়ে নিয়েছে। আগে নদীর পাড়ে গিয়ে মানুষ বুক ভরে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারত। কিন্তু এখন সে সুযোগ আর নেই। হাড়িধোয়া, আড়িয়ালখাঁ, শীতলক্ষা, পুরনো ব্রহ্মপুত্র এমনকি মেঘনার পানি পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন এই নদীর পাড়গুলোতে গেলে মানুষের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

আর এই অবস্থায় ঈদ এলে মানুষ একটু আনন্দের জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বেড়ায়। গত ২-৩ বছর যাবত ঈদ এলে মানুষ ছুটে যায় শিবপুরের অজপাড়া গাঁ বিল চিনাদী গ্রামে। সেখানে রয়েছে স্বচ্ছ টলমলে পানির এক বিশাল প্রকৃতিক জলাশয়। কমবেশি তিন কিলোমিটার লম্বা এবং প্রায় সমপরিমাণ প্রস্থ এই চিনাদী বিল ছিল এক সময়ে মাছের জন্য বিখ্যাত। এই বিলের মাছ ছিল খুবই সুস্বাদু।

নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ ও নরসিংদীর বাজারগুলোতে মাছ কিনতে গেলে জেলেরা বলতো চিনাদী বিলের মাছ। চিনাদী বিলের মাছের নাম শুনলেই ক্রেতারা বিনা দর কষাকষিতেই মাছ কিনে নিত। কিন্তু আজকে মানুষের বিনোদনের প্রয়োজনে চিনাদী বিল হয়ে উঠেছে এক নতুন পর্যটনকেন্দ্র।

প্রতি ঈদের দিন বিকাল থেকেই শুরু হয় চিনাদী বিলের কিনারে কিনারে মানুষের আনাগোনা। ঈদের পর কয়েকদিন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের পদভারে চিনাদী বিল এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। নারী, শিশু, আবাল, বৃদ্ধ বনিতা সকলেই বিষাদময় জীবন থেকে একটু নিষ্কৃতির জন্য ছুটে যায় চিনাদী বিলের ধারে। সেখানে দেখার মত ঐতিহাসিক কোন স্থাপনা বা খেলাধুলার কোন অবলম্বন না থাকলেও রয়েছে চিনাদী বিলের এক মায়াময় নৈসর্গিক দৃশ্য। যা মানুষকে মায়াপুরীর মতই আকর্ষণ করে। স্বচ্ছ টলটলে পানিতে ভাসমান কচুরিপানা, শাপলা, শালুক, পদ্মপাতা, শিংরাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের ফাঁকে ফাঁকে মাছদের খেলা এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়।

এছাড়া এ বিলের চারদিকে রয়েছে জেলেপাড়া- যারা এই বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই জেলেদের বাড়িগুলোতে রয়েছে যুগযুগের আবহমান বাংলার এক প্রাকৃতিক গেয়ো দৃশ্য। যা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

সাধারণ সচেতন মানুষ সেখানে গিয়ে আবহমান বাংলার সেই চিরায়ত দৃশ্যকে অবলোকন করার সুযোগ পায়। মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে যায় শিকড়ে।

চিনাদী বিলে ভ্রমন করতে যাওয়া কয়েকজন পর্যটকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ঘর থেকে বেরিয়ে একটু স্বচ্ছ টলমলে পানি দেখার আনন্দ অনেক। কারণ নরসিংদী শহর ও আশেপাশের এলাকায় কোথাও কোনে স্বচ্ছ পানির জলাশয় নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যে নদীটি সামনে পড়ে তার নাম হাড়িধোয়া। এই নদীর পানি কলকারখানার বর্জ্যে কালো বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই নদীর পানিতে দিকে তাকানো যায় না। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিয়ে সাথে সাথেই উল্টি আসে।

তারা জানান, বছর দুয়েক পূর্বে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সাধারণ মানুষের বিনোদনের সুবিধার জন্য চিনাদী বিলকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেখানে পর্যটকদের জন্য এখনো কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। একটি ডাকবাংলো দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণাধীন অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে কোন হোটেল-মোটেলও নেই। নেই খেলাধুলার কোন সুযোগও। প্রচণ্ড রোদ, বৃষ্টি বা কোন প্রকৃতিক দুর্যোগের সময় পর্যটকদের আশ্রয়েরও কোন জায়গা নেই। বেসরকারি উদ্যোগে সেখানে কয়েকটি স্পিডবোট এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে। মানুষ এতে চড়েই আনন্দ লাভ করে।

এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বা শিবপুর উপজেলা প্রশাসন যদি চিনাদী বিলকে একটি স্থায়ী পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে, সেখানে এসব সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়- তবে নরসিংদীর সাধারণ মানুষ তথা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসবে বলে আশা তাদের।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :