ওদের বোয়াজিজি, আমাদের শামীম শিকদার?

কাওসার শাকিল
 | প্রকাশিত : ০২ জুলাই ২০১৭, ১২:১৭

খবরটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম। ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ২০১১ সালে সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তিউনিসিয়ার সিদি বৌজিদ শহরের এক তরুণ সবজিওয়ালা, নাম তার মোহাম্মদ বোয়াজিজি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন।

বোয়াজিজির বয়স যখন তিন তখন তার রাজমিস্ত্রী বাবা মারা যান। ১০ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরে বোয়াজিজি। পড়ালেখার পাশাপাশি ফল, শাকসবজি ঠেলাগাড়িতে করে বিক্রি করতেন রাস্তায়।

বোয়াজিজির সাথে পুলিশের প্রায়ই বাধাবাধি হতো। ঘুষ না দিলে রাস্তার হকারদের ভীষণ জ্বালাতন করত তিউনিসিয়ার পুলিশ, আর কষ্টের কামাই থেকে বোয়াজিজি ঘুষ দিতে চাইতেন না। ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ সকালবেলা ধার করে কেনা টাকায় ফল-সবজি ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে রাস্তায় বিক্রি করতে বসলে স্থানীয় পুলিশ পারমিট না থাকার অজুহাতে বোয়াজিজির ঠেলাগাড়িটা আটকে দিল। বোয়াজিজি ঘুষ দেবেন না বলে প্রতিবাদ করলেন। তখন শহর প্রশাসনের এক নারী অফিসার তাকে প্রকাশ্যে চড় মারলেন তার গালে।

তখন বোয়াজিজি বিচার দিতে গেলেন গভর্নরের অফিসে। গভর্নরের এতো সময় কই যে রাস্তার এক ঠেলাওয়ালার সাথে দেখা করে তার দুঃখের বয়ান শুনবে? তার সাথে দেখাই করলেন না গভর্নর। তখন বোয়াজিজি এক টিন গ্যাসোলিন জোগাড় করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন গভর্নরের অফিসের সামনেই। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আঠারো দিন পর তিনি মারা গেলেন।

বোয়াজিজির মৃত্যুর পর গোটা আরব বিশ্বে আগুন লাগলো যেন।

আরব রাজনিতীর একনায়কতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের সূচনা করলেন মুহাম্মদ বোয়াজিজি নামের এক সবজি বেচা হকার।

ইতিহাস থেকে আমরা শিখেছি যে ইতিহাস থেকে কখনোই কেউ কিছুই শেখে না। আরববিশ্বের সেই উত্তাল বসন্ত এখনো পুড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বকে।

শামিম শিকদারের ঘটনার সাথে বোয়াজিজির ঘটনার এতো মিল, যে এক পর্যায়ে খবরটা পড়তে পড়তে আমি চমকে চমকে উঠেছি। তামাম দুনিয়ার শাসক গোষ্ঠী বোঝে না যে জনতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তাকত, সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবার মত তীব্র অঙ্গার। সেই অঙ্গারের সূচনা যে কোন স্ফূলিঙ্গ থেকে হবে সেটা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। চোখের পলকে তিউনিয়সিয়ার বোয়াজিজি হয়ে উঠতে পারে শামিম শিকদারেরা। অতএব, খুব সাবধান হে মান্যবর! খুব খেয়াল করে! তাওয়া কিন্তু তেতে আছে! তেল পড়লেই ছ্যাত করে জ্বলে উঠবে! খুব সাবধান!

লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :