আপিল বিভাগের রায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল হতাশ, দুঃখিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৭, ১৩:০৬ | প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০১৭, ১২:৪০
ফাইল ছবি

বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে হতাশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম ।তিনি বলেন, ‘সংবিধানের মূলে ফিরে যাওয়ার যে অভিপ্রায় ছিল ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তা যেতে পারেনি। এতে আমি হতাশ, দুঃখিত।’

সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপিল খারিজ করে রায় দেয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ কথা বলেন। আপিল বিভাগের রায়ের পর নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমেই প্রমাণ হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই এ রায় দিতে পেরেছে।’

উচ্চ আদালতের এই রায় সরকারের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগেও সংবিধানের সংশোধন উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সেই সংশোধনী আনা হয়েছিল জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সেনা শাসনের সময়। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত বিএনপির শাসনামলে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনীও অবৈধ ঘোষণা হয়েছে সংসদে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আনা সংবিধানের সংশোধনী এবারই প্রথম চ্যালেঞ্জে পড়লো।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘১৯৭১ সনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ লোক তাদের প্রাণ দিয়েছিলেন এবং দুই লক্ষ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই সংবিধান সম্পর্কে বলেছিলেন এই সংবিধান রক্তের আক্ষরে লেখা। আমাদের স্বপ্ন সংবিধানের মূল ধারাতে ফিরে যাওয়া। এবং এই ধারাগুলোতে আমরা ফিরেও গিয়েছিলাম। পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলার রায়ের মাধ্যমে। কিন্তু আমি অত্যন্ত হতাশ। আজকে এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যে আশা ছিল, স্বপ্ন ছিল সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ ৯৬ তে ফিরে যাবো সেটা আর হলো না। আমি অত্যন্ত দুঃখ অনুভব করছি।’

সংবিধানতো পরিবর্তনশীল, বিভিন্ন সময় সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে এই বিষয়টি নিয়ে আপনারা এত হতাশ হচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘হতাশ এই জন্য যে এটা তো পরিবর্তনের প্রশ্ন না। এটা হলো আগের জায়গায় যাওয়া। পুনঃস্থাপন করা। তার চেয়ে বড় কথা সুপ্রিম জুডিশিয়ালের বিষয়টি যা একমাত্র পাকিস্তান আর আমাদের দেশে সামরিক সরকার এসে জিয়াউর রহমানের আমলে অন্যায়ভাবে সংবিধান সংশোধন করেছিল। কাজেই আমাদের কথা হলো আমরা সংবিধান থেকে সামরিক শাসনে যা করেছিল এগুলোকে মুছে ফেলতে চাই।’

মূল সংবিধানের ফিরে যেতে না পারায় কী ক্ষতি হলো জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, এটা একটা প্রক্রিয়া কথা। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে সংসদে বা সংবিধানে যেটা আছে। সেখানে ফিরে যাওয়া এটা সবারই প্রত্যাশা। পৃথিবীর কোন দেশেই কিন্তু মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বাধা সৃষ্টি হয়নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ বিষয়টি শুধু কাটিং অ্যান্ড পেস্ট করা হয়েছে। বিচারপতি অপসারণ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তই হয়নি। ১৬ তম সংশোধনীতে আইনমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন আমরা ৯৬ অনুচ্ছেদে ফিরে যেতে চাই।’

রায়ের ফলে বিচাপতি অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে গেল কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমার মতে পুনর্বহাল হয়নি। আমার মতে সংবিধানের যে অনুচ্ছেদ সংসদ বাতিল করেছে সেটা আপনাআপনি রেস্টর (পুনস্থাপন) হবে না। এই অবস্থায় আমার মতে শূন্যতা বিরাজ করছে। সংসদের কাজ তো আর কোর্ট করতে পারে না।’

এ রায়ের ফলে সংসদের সঙ্গে বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে গেল কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘দ্বন্দ্বের কথা আমি বলব না। আমার কথা হলো আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, আমরা মূল সংবিধানের ফিরে যাব। যে সংবিধান আমরা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছিলাম। যেটিকে বঙ্গবন্ধু রক্তের আক্ষরে লেখা বলেছিলেন। এখানেই আমার হতাশা।’

এ রায়ে সরকার এবং প্রশাসনের মধ্যে কোন প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সরকার তো চলে শাসনতন্ত্র মেনে। এখন দেখা যাক বিচারপতিদের অপসারণের ব্যাপারে কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।’

এ রায়ের পর এখন আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এখন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে, সরকারের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংসদে পাস হয়। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়।

সংবিধানের এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।

মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিলের অনুমতি দেয়। ওই বছরের ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। গত ১ জুন ১১তম দিনের শুনানি নিয়ে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এছাড়া আদালতের নিয়োগকৃত ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে ১০ জন তাদের মতামত দেন। তাদের বেশিরভাগই বিচারপতির অপসারণ ক্ষমতা সংসদের বদলে সেনা শাসনের সময় প্রবর্তিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে রাখার মত দেন।

উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতেও অ্যাটর্নি জেনারেল ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন। তবে রিটকারী আইনজীবী এবং শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং অন্য বিচারক আশঙ্কা করেন, এই বিধান থাকলে উচ্চ আদালতকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

বাংলাদেশের জন্মের পর করা সংবিধানে বিভিন্ন উন্নত বিশ্বের মতো বিচারপতির অপসারণের ক্ষমতা সংসদে রখো হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের সময় এই বিধান পরিবর্তন করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এই বিধান অনুযায়ী কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগ এলে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে এই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হবে। প্রধান বিচারপতি এবং প্রবীণতম দুই বিচারপতির নেতৃত্বে এই কাউন্সিলই তদন্ত করে রাষ্ট্রপতিকে প্রতিবেদন দেবেন এবং তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

(ঢাকাটাইমস/০৩জুলাই/বিইউ/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

ড. ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল

সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনা: আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড

অরিত্রীর আত্মহত্যা: চতুর্থ বারের মতো পেছাল রায় ঘোষণার দিন, কী কারণ?

অরিত্রীর আত্মহত্যা: ভিকারুননিসার ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ

বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে হলের সিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

আত্মসমর্পণের পর ট্রান্সকমের ৩ কর্মকর্তার জামিন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :