বাবরি মসজিদ নাকি রাম মন্দির নিয়ে ভোটাভুটি কি বাণিজ্য?

রাজিব হাসান
| আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৭, ১৬:৪১ | প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০১৭, ১৫:৩২

বাবরি মসজিদ হবে নাকি রাম মন্দির? এমন একটা অনলাইন ভোটাভুটির লিংক যারা ইনবক্স করছেন, তাদের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই:

১. এই ভোট হলে কী হবে? ভোটের আয়োজনের উদ্দেশ্য কী? পরিণতি কী?

২. ধরেন ভোটে জিতল ওখানে মসজিদ বানানোর পক্ষে বেশির ভাগ ভোটদাতা, তাহলে ভারতের সরকার সেখানে মসজিদ বানাবে, আপনার তা-ই মনে হয়? ভারতের সরকার এমন ঘোষণা দিয়েছে? কবে দিল?

৩. যারা এই ভোটের আয়োজন করছে, তারা কে? জাগোইন্ডিয়ান.কম ভারতের কোন সাইট? অ্যালেক্সার র‌্যাঙ্কিংয়ে দেখলাম সারা বিশ্বের মধ্যে সাইট হিসেবে তাদের অবস্থান ২১ লাখ ৩০ হাজার ৮৪৫। এত বড় স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে ভোট করার অধিকার এই সাইটটি কে দিল?

৪. এটা কি ওই সাইটের হিট বাড়ানোর ব্যবসা? ফাঁকের ওপর ২০ কোটি হিটও যদি পায়, ঘরে বসে বিনা পরিশ্রমে কয়েক লাখ টাকা আয়!

এরই মধ্যে ৮০ লাখ ভোট পড়েছে। ভোটিং অপশনের ঠিক নিচে বসানো আছে গুগলের অ্যাডসেন্স (বিজ্ঞাপন থেকে যেকোনো সাইটের গুগল থেকে আয় করার উপায়)। ডিজিটাল মার্কেটিং অভিজ্ঞরা বলতে পারবেন, এই ৮০ লাখ ভোট (ধরে নিলাম ১ কোটি হিট) থেকে মোট কত আয় করেছে তারা?

***

আমি সত্যিই উত্তরগুলো জানতে চাই। কারণ যারা আমাকে ইনবক্স করেছেন এই ভোটের লিংক, তাদের কেউই উত্তরগুলো দিতে পারেনি। বেশির ভাগের বক্তব্য ছিল, তাকে কেউ ভোট দিতে বলেছে, যেহেতু মসজিদের ব্যাপার, তাই ভোট দিয়েছে।

চলুন দেখে আসি এই অনলাইন ভোট নিয়ে ভারতের প্রধান দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস কী বলছে: Fake UP govt website conducts poll on Ram Mandir-Babri Masjid dispute, গত এপ্রিলে এটা ছিল পত্রিকাটির একটি খবরের শিরোনাম। যে খবরে বলা হয়েছে, ইউপি সরকারের সরকারি ওয়েবসাইটি হুবহু নকল করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে প্রায় একই রকম ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস বানিয়ে কে বা কারা একটি সাইট খুলেছে। এমনকি মূল সরকারি সাইটে যেভাবে ইউপির মূখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া আছে, একইভাবে ভুয়া সাইটটিও সেই ছবি দিয়ে রেখেছে।

হিন্দুস্তান টাইমস তদন্ত করে দেখেছে, সাইটটি নিবন্ধন একজনের নামে, ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে আরেকজনের নামে। যার ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি দাবি করেন, এই সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। কে বা কারা তার নম্বর ব্যবহার করে এমনটা করল।

এ নিয়ে তখন অনেক লেখালেখি হলে সেই সাইটটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এবার গজিয়ে উঠেছে আরও কিছু সাইট। ভোটিংয়ের মহৎ উদ্দেশ্য থাকলে তার যে কেন অ্যাডসেন্স এর ব্যবসাটা ওখানে রেখেছে?

***

এটাই আমাদের সমস্যা। ধর্ম নিয়ে কেউ কিছু বললেই আমাদের জিহাদি জোশ খলবল করে ওঠে। ঠান্ডা মাথায় কিছু ভাবি না। চলো রে বলে নিজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আরেক জনকেও উদ্বুদ্ধ করতে থাকি। এটারই ফায়দা লোটে কেউ কেউ। আমরা বুঝতে চাই না।

ভারতে হিন্দুত্ববাদী একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। গরুর মাংস বিক্রি বা ফ্রিজে রাখার 'অপরাধে' পিটিয়ে মারা হচ্ছে মুসলিমদের। এই হিন্দুত্ববাদী ইমোশনের ফায়দা নিচ্ছে ধুরন্দর ব্যবসায়ীরা। তারা কেউ ওয়েবসাইট বানায়, কেউ বানায় রাজনীতির দল।

আমাদের দেশেও ছবিটা খুব একটা ভিন্ন নয় বোধ হয়! যখন একজন আইটি ফার্মে কর্মরত ব্যক্তিকেও দেখি আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য এই লিংকটা পাঠায়। আর আমি কিছু প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়, তা তো ভেবে দেখিনি...!

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :