পুরুষাঙ্গে পেরেক ঢুকিয়ে শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৭, ২০:৫৩ | প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০১৭, ২০:২৭

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এক শিশু শ্রমিককে পুরষাঙ্গে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে পারভেজ হোসেন (১৪) এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোমহর্ষক এই নির্যাতনের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও সংবাদকর্মীদের তৎপরতায় ১০ দিন পর তা ফাঁস হয়ে যায়।

পারভেজ হোসেন মাগুরার শালিকা উপজেলার সিমাখালীর পিয়ারপুর গ্রামের শিমুল হোসেনের ছেলে। সে কালীগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর গ্রামে তার নানা জিল্লুর রহমানের বাড়িতে থাকতো।

অভিযোগ উঠেছে, ভয়াবহ এই নির্যাতনের পরও কালীগঞ্জ থানা মামলা রেকর্ড করতে গড়িমসি করছে। এজাহারে প্রভাবশালীদের নাম থাকায় পুলিশ এখনো মামলা রেকর্ড করেনি বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিশুর মা পারভিনা খাতুন। দুইবার এজাহার কাটাছেঁড়া করে অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন পারভেজের মা।

পারভীনা বেগম জানান, পারভেজ ও তার চাচাতো ভাই গত ২২ জুন বিকাল ৫টার দিকে কালীগঞ্জের দাসবায়সা গ্রামের আজিজুল ইসলামের মেয়ের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এ সময় মেয়ের বাবা আজিজুল ও তার লোকজন এসে পারভেজকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান। পারভেজের সঙ্গে থাকা তার চাচাতো ভাই নাজমুল পালিয়ে এসে বাড়িতে এ খবর দেয়। এরপর পরিবারের লোকজন দাসবায়সা গ্রামে গিয়ে পারভেজকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে আসে।

পারভেজের মা আরও বলেন, ওইদিন সারারাত আজিজুল ও তার লোকজন আমার ছেলের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। পরদিন ২৩ জুন দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাগর বিশ্বাস আমাদেরকে ফোনে জানান তোমাদের ছেলেকে পাওয়া গেছে, এসে নিয়ে যাও। এরপর পরিবারের লোকজন গিয়ে দেখে পারভেজ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। নির্যাতনের ফলে আমার ছেলে মলমুত্র ত্যাগ করে।

পারভেজের মা বলেন, ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে ২৩ জুন দুপুর ২টার দিকে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পারভেজের অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তাররা তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর রাতেই ডাক্তাররা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

বর্তমানে পারভেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০নং ওয়ার্ডের ইউনিট-২ এর বি-৪০ নং বেডে চিকিৎসাধীন। সাত দিন পর পারভেজের জ্ঞান ফিরলেও তার শরীর এখনো স্বাভাবিক হয়নি। কয়েক দফা অপারেশন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কোলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে ঘটনাটি অস্বীকার করেন। পরে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় মেরে স্থানীয় ২/৪ জন নেতা ঘটনাটি মীমাংসা করে ছেড়ে দিয়েছেন। পরে তিনি ছেলের অভিভাবকদের ডেকে শিশু পারভেজকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে পারভেজের পরিবারের দাবি দারোগার উপস্থিতিতেই আহত পারভেজকে অজ্ঞান অবস্থায় ভ্যানের ডেকে তুলে দেয়া হয়।

স্থানীয় কোলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাফর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারা কিভাবে নির্যাতন করেছে এটা আমি বলতে পারবো না। তবে পারভেজের চিকিৎসার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ১২ হাজার টাকা এবং গ্রাম থেকে লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছি।’

কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, এ ঘটনায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। মামলা রেকর্ড করার বিষয়ে তিনি বলেন, পারভেজের মা ও নানা বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বলেছেন। এজন্য মামলা রেকর্ড করা হয়নি।

তবে নির্যাতিত শিশুটির নানা জিল্লুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি কোনো মীমাংসার কথা বলিনি। আমি নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

পারভেজের আরেক নানা লিটন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো মীমাংসার মধ্যে নেই। আমরা সুবিচার চাই।’ যেভাবে পারভেজকে পুরুষাঙ্গে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তা নজিরবিহীন বলেও তিনি দাবি করেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(ঢাকাটাইমস/০৩জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :