সঞ্চয়পত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত ১৫ জুলাইয়ের পর

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০১৭, ০৮:১৩

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমছে, এটা এখন নিশ্চিত প্রায়। কিন্তু কী পরিমাণ কমবে সুদ? অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ জুলাইয়ের পরই এই বিষয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে। সেদিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে বসে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা আর। সেই নির্দেশনানুযায়ী কাজ করবে কমিটি।

গত ২৯ জুন বাজেট পাসের দিন সংসদে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমছে সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি এও বলেছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য কী করা যায়, সেটাও দেখছেন তারা। কিন্তু এ নিয়ে আর এর পর কোনো কথা হয়নি।

সরকার বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় যেসব কৌশল হাতে নেয়, তার একটি সঞ্চয়পত্র বিক্রি। জনগণের কাছ থেকে নির্ধারিত সুদে টাকা তোলা হয় এই সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে। ব্যাংক সুদের হার বেড়ে গেলে সঞ্চয়পত্রের দিকে জনগণের ঝোঁক কমে, আর ব্যাংক সুদের হার কমলে এই ঝোঁক বাড়ে।

গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের সুদের হার কমতে কমতে এখন তা পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন ১১ শতাংশের বেশি। আর ব্যাংকের তুলনায় দ্বিগুণ সুদ পাওয়া যায় বলে মানুষ ব্যাপকহারে সঞ্চয়পত্র কিনছে। আর এ কারণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কয়েকগুণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ফলে সরকারের সুদ ব্যবস্থাপনায় সমস্যার তৈরি হয়েছে।

গত অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নিট গ্রহণের পরিকল্পনা ছিল ১৯ হাজার ২০৭ কোটি। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার ২৯০ কোটি টাকার।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূলত ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার কমার কারণে সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এই বাস্তবতার বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি।’

আগামী অর্থবছরের বিশাল আকারের বাজেটের অর্থায়নের জন্য অর্থমন্ত্রী এবার ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ঘোষণা দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে তা দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছেন। আবার ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকেও কিছুটা পিছু হটতে হয়েছে। এই দুটি সিদ্ধান্তই হয়েছে বাজেট ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে।

অর্থমন্ত্রী এর আগে জানিয়েছেন, ব্যাংক ঋণের ‍সুদের চেয়ে দুই শতাংশ বেশির মধ্যে রাখতে চান তিনি। এই হিসাব অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সাত শতাংশের মত হওয়ার কথা। কারণ ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে এখন পাঁচ শতাংশের কম।

তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া এত সহজ নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুটি বিষয়ের মত সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর ঘোষণা নিয়েও সমালোচনার মুখে আছেন অর্থমন্ত্রী। সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই পরিকল্পনা করায় অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। গত ১৫ জুলাই তিনি বলেন, ‘সমাজের অনেক শ্রেণির লোককে ভর্তুকি দিই। যা তাদের প্রাপ্য না। অথচ যাদের প্রাপ্ত, তাদের বঞ্চিত করতে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যদি ঋণ খেলাপিদের বোঝা নিতে পারি, তাদের তোয়াজও করতে পারি, তাহলে কেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা আমরা নেব না?’

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর যে আলোচনা চলে আসছে বেশি কিছুদিন ধরে সেটি নিয়ে ফের ভাবনায় পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছে, এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হলে তা নিয়ে আবার আলোচনার মাঠ গরম হতে পারে। সামনে নির্বাচন আসছে। তাই এটাতে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে সরকার।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সঞ্চয়পত্রকে একটা কাঠামোর মধ্যে আনতে চায় সরকার। এজন্য প্রশাসনিক সংস্কার করা হতে পারে। কারা কারা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন, কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত টাকার কিনতে পারবেন সেই বিষয়টিও নির্দিষ্ট করে দেয়া যায় কি না সে বিষয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নজমুস ছাকিব ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘সঞ্চয়পত্র নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ১৫ তারিখের পর এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে নজমুস ছাকিব বলেন, ‘এটি খুবই সেনসেটিভ বিষয়। এটি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। মন্ত্রী মহোদয় যেভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করব।’

তবে নিম্ন মধ্যবিত্তরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিনে লক্ষ্য রাখার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। গত ২৯ জুন সংসদে তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণের কারণে কোনো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় থাকবে।’

সঞ্চয়পত্র সবাই কিনতে পারবে না-এমন ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তা যেন সঠিক ব্যক্তিরা পায়। সে জন্য আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করব, যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের তথ্যকে সম্পৃক্ত করা হবে।’

ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/এমএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

বয়কটের ডাকে অর্ধেকে নেমেছে তরমুজের দাম, তবুও ক্রেতা নেই

দুঃস্থ ও অসহায়দের মাঝে জনতা ব্যাংকের ইফতার সামগ্রী বিতরণ

ঈদ উৎসব মাতাতে ‘ঢেউ’য়ের ওয়েস্টার্ন সংগ্রহ

৮ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে

সিটি ব্যাংকের ২০২৩ সালের মুনাফা ৬৩৮ কোটি টাকা, বেড়েছে ৩৩%

ঈদ অফারে বিনামূল্যে মিনিস্টারের রেফ্রিজারেটর পেলেন আসাদুজ্জামান সুমন

সোনালী ব্যাংকে ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনাসভা

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭টি নতুন উপশাখার উদ্বোধন

স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শ্রদ্ধা

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে কর্মসংস্থান ব্যাংকের শ্রদ্ধা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :