পুরাকীর্তির আলোয় ঢাকার ইতিহাস-৩

মুঘল ঢাকার মসজিদ মন্দির গির্জা

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০১৭, ০৮:৪৩ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭, ১০:৩৯

খন্দকার মাহমুদুল হাসান
ছবিতে করতলব খাঁর মসজিদ

ঢাকায় মুঘল আমলে রাজধানী ছিল ১০০ বছরের (১৬০৮-১৭১৭) মতো। ঢাকা শহরে পুরাকীর্তি হিসেবে যেসব স্থাপনাকে শনাক্ত করা যায়, তার মধ্যে মুঘল আমলের কীর্তি অনেক। মুঘল, কোম্পানি ও ইংরেজ আমলের যেসব নির্মাণ নিদর্শন ছড়িয়ে আছে শহর ঢাকায়, তার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ টিকে থাকা নিদর্শনগুলো মুঘল আমলের। এর আগে দুই কিস্তিতে বিভিন্ন নিদর্শনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আজ তৃতীয় ও শেষ কিস্তিতে থাকছে মুঘল আমলের মসজিদ, মন্দির ও গির্জার কথা।

দারা বেগমের মসজিদ

ধানমন্ডি ঈদগার দুই কিলোমিটারের মতো দক্ষিণে সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলের রীতিতে তৈরি একটি ইমারত দারা বেগমের মসজিদ নামে পরিচিত। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ ইমারতটির দক্ষিণমুখী প্রবেশপথ ছাড়াও পশ্চিম দিকে একটি প্রবেশপথ আছে। সমাধিসৌধ হলে পশ্চিম দেয়াল এবং দক্ষিণ দেয়ালে প্রবেশপথ থাকার সম্ভাবনার কথা মানা চলে। ধারণা করা হয় যে, মুঘল আমলে এটি সমাধিসৌধ হিসেবে নির্মিত হলেও পরে এটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে।

মরিয়ম সালেহার মসজিদ

ঢাকা নিউমার্কেটের পূর্ব দিকে অবস্থিত এ মসজিদের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের ওপরের শিলালেখর বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদটির নির্মাণকাল ১৭০৬ সাল। নির্মাণ করেছিলেন বিবি মরিয়ম সালেহা, যিনি ছিলেন বাগু দিওয়ানের পৌত্রী এবং আব্দুল্লাহর কন্যা। এ মসজিদের ছাদে আছে ৩টি গম্বুজ। ৪ কোনায় আছে ৪টি ৮ কোনাকার মিনার। প্রতিটি মিনারের শীর্ষভাগে রয়েছে একটি করে ছোট গম্বুজ। মসজিদটির ভেতরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার, প্রস্থ প্রায় ৪ মিটার। মসজিদটির ৫টি প্রবেশপথের মধ্যে ৩টি পূর্ব দেয়ালে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে একটি করে প্রবেশপথ।

চকবাজার শাহি মসজিদ

উঁচু প্লাটফর্মের ওপর নির্মিত এ মসজিদটি মুঘল ঢাকার প্রাণকেন্দ্র চকবাজারে অবস্থিত। শিলালেখর বর্ণনা অনুযায়ী শায়েস্তা খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্লাটফরমটি ছিল তিন মিটার উঁচু। মসজিদটি প্রায় ১৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট। মূল মসজিদটি ছিল তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এখন এটির চেহারায় বেশ পরিবর্তন এসেছে।

হাজিবেগ জামে মসজিদ

তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটির অবয়বে মুঘল রীতি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তবে এতে পরবর্তীকালে বহু সংস্কার হয়েছে। মসজিদটির অবস্থান পলাশী এলাকায় এবং ঢাকেশ্বরী রোডে ঢুকতেই বাঁ দিকে। গম্বুজগুলোর মধ্যে মাঝেরটি বড়। প্রতি গম্বুজের নিচে আছে আট কোনাকার ড্রাম, শীর্ষে আছে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে ওপরে উঠে যাওয়া অংশ। পূর্ব দেয়ালের তিন প্রবেশপথের মধ্যে মাঝখানেরটি বড়। মসজিদটির মেহরাবের সংখ্যাও তিনটি। এ মসজিদে ফারসি ভাষায় লেখা যে শিলালেখ আছে, তা অনুযায়ী এটির নির্মাণকাল ১১০৩ হিজরি মোতাবেক ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দ বলে ঢাকার দৈনিক প্রথম আলো’তে ২০১৭ সালের ৫ মে তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়।

চুড়িহাট্টা মসজিদ

পুরান ঢাকায় মুঘল আমলে কাচ দিয়ে চুড়ি তৈরিকারক মুসলিম সম্প্রদায়ের পেশাজীবীরা যে মহল্লায় বাস করতেন সেটি চুড়িহাট্টা মহল্লা নামে পরিচিত। এখানে মুঘল আমলে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এ মসজিদের প্রাঙ্গণে ১৯০৬ সালে মাটির নিচ থেকে একটি বাসুদেব মূর্তি আবিষ্কৃৃত হয়েছিল। সুবাদার শাহ্ সুজার সময়ে মহম্মদ বেগ ১৬৫০ সালে এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তিন প্রবেশপথ, তিন মেহরাব ও চার মিনারবিশিষ্ট এ মসজিদের ছাদ চৌচালা ঘরের মতো ছিল বলে ‘বাঙলাদেশের প্রতœসম্পদ’ গ্রন্থে (২০০৭, পৃ. ৫২৭) আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া মত দিয়েছেন। কিন্তু মূল মসজিদটি আর নেই। সেখানে রয়েছে সম্পূর্ণ আধুনিক এক মসজিদ।

আরমানিটোলা মসজিদ

পুরান ঢাকার আরমানিটোলা এলাকার শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডে এ মসজিদটি অবস্থিত। শিলালেখ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী খানজানি নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

খাজা আম্বরের মসজিদ

১৬৮০ সালে শায়েস্তা খানের আমলে খাজা আম্বর নির্মাণ করেছিলেন এ মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটিতে রাজমহল থেকে আনা কালো পাথরের ব্যবহার হয়েছিল। মসজিদটির প্রাঙ্গণে একটি পাকা কুয়ো নির্মিত হয়েছিল। মসজিদের অঙ্গনে নির্মাতা খাজা আম্বরের সমাধি আছে। কারওয়ান বাজার এলাকায় এটি অবস্থিত।

করতলব খাঁর মসজিদ

মুর্শিদকুলি খাঁর অন্য নাম ছিল করতলব খাঁ। ঢাকায় অবস্থানকালে ১৭০০ থেকে ১৭০৩ সালের মধ্যে তিনি এ পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি বানিয়েছিলেন। উঁচু প্লাটফরমের ওপরে অবস্থিত মসজিদটি বেগম বাজার রাস্তার মোড়ে অবস্থিত বলে অনেকে একে বেগম বাজার মসজিদও বলে থাকেন। মসজিদের উত্তর দেয়ালের বাইরের পাকা দোচালা ইমারতটি এ মসজিদকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। এটির ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে আছে পাঁচটি মেহরাব। পূর্ব দেয়ালে পাঁচটি প্রবেশ পথ ও চার কোনায় আছে চারটি আট কোনাকার মিনার। মির্জা গোলাম পীর এ মসজিদটির সংস্কার করেছিলেন।

লালবাগ শাহী মসজিদ

সুবাদার আজিমউশ্শানের পক্ষে ঢাকায় অবস্থান করে ফররুখশিয়ার শাসনকাজ চালানোর সময় (১৭০৩-১৭০৭ খ্রি.) এ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট মসজিদটি ছিল মুঘল ঢাকার একটি উল্লেখযোগ্য মসজিদ। এই ফররুখশিয়রই পরে দিল্লির স¤্রাট হয়েছিলেন।

নবরায় লেন মসজিদ

ইসলামপুর সড়কের নিকটে নবরায় লেন সড়কে মুঘল আমলে উঁচু ভিত্তিবেদীর ওপরে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে এটি নির্মিত হয়েছিল এবং তা বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। দেয়ালের ৩টি মেহরাবে অলংকরণ ছিল। মসজিদটির প্রবেশপথ ছিল তিনটি।

শায়েস্তা খাঁর মসজিদ

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন দিকে সুবাদার শায়েস্তা খাঁর নির্মিত মসজিদটি অবস্থিত। তবে আদি মসজিদটির জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সংস্কারকৃত প্রায় নতুন আদলের মসজিদটি। শিলালেখ থেকে এটির নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। বুড়িগঙ্গা তীরের এ মসজিদটি ৩ গম্বুজ, ৩ প্রবেশপথ, ৩ মেহরাব ও ৪ মিনারবিশিষ্ট।

হায়াত আলী ব্যাপারি মসজিদ

অধ্যাপক আহমদ হাসান দানির সূত্রে এ মসজিদটি সম্পর্কে জানা যায়। ১৬৪৪ সালে এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি হায়াত আলী ব্যাপারি তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। মসজিদটির অবস্থানস্থল ছিল অধুনালুপ্ত নারিন্দা পুলের একটু দক্ষিণে।

আলাকুরির মসজিদ

কোনো শিলালিপির অভাবে নির্মাণশৈলী দেখে মনে করা হয় যে, এটি শায়েস্তা খানের আমলের মসজিদ। মোহাম্মদপুর এলাকার সাত গম্বুজ মসজিদের উত্তর-পূর্ব দিকে এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি অবস্থিত। এটি একটি ছোট বর্গাকার মসজিদ, যার ভেতরের দিকে প্রতি বাহুর দৈর্র্ঘ্য ৩.৭৮ মিটার। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দেয়ালে একটি করে প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব আছে। চার কোনায় আছে চারটি আট কোনাকার মিনার। প্রতিটি মিনারের শীর্ষে আছে একটি করে ছোট গম্বুজ।

সাতগম্বুজ মসজিদ ও অজানা সমাধিসৌধ

সাতগম্বুজ মসজিদটি মোহাম্মদপুর এলাকার জাফরাবাদে অবস্থিত। মুনশি রহমান আলি তায়েশ ও অধ্যাপক আহমদ হাসান দানির মত অনুযায়ী ১৬৮০ সালের নিকটবর্তী কোনো সময়ে শায়েস্তা খান এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। নির্মাণকালে বুড়িগঙ্গা ছিল মসজিদটির প্রায় পেছন দিকে। কিন্তু এখন বুড়িগঙ্গা অনেক দূরে। মূল মসজিদের ওপরে তিনটি এবং চার কোনায় চারটি মিনারের ওপরে চারটি, এভাবে (৩+৪) মোট সাতটি গম্বুজ থাকায় এ মসজিদের এমন নাম হয়েছে। দ্বিতলবিশিষ্ট প্রতি মিনারের প্রতি তলায় একটি করে কক্ষ আছে। এভাবে চারটি মিনারের মোট কক্ষসংখ্যা দাঁড়ায় ৮টি। এ মসজিদের প্রায় ৯০ মিটার উত্তর-পূর্ব দিকের মুঘল আদলে আধুনিককালে নির্মিত একটি সমাধিসৌধ আছে। মনে করা হয় যে, সমাধিটি মুঘল আমলের। কিন্তু কে সমাহিত আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

খান মুহাম্মদ মিরধার মসজিদ

১৭০৪-১৭০৫ সালে লালবাগ দুর্গের অনতিদূরে খান মুহাম্মদ নির্মাণ করেছিলেন একটি মসজিদ। উঁচু একটি প্লাটফরমের ওপরের পশ্চিমভাগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। এটি প্রায় ১৫.২৬ মিটার লম্বা ও প্রায় ৭.৫৬ মিটার চওড়া। ছাদে তিনটি গম্বুজের প্রতিটি বসানো আছে আট কোনাকার ড্রামের ওপর। গম্বুজ তিনটির মধ্যে মাঝেরটি সবচেয়ে বড়। আর চার কোনায় আছে চারটি আট কোনাকার মিনার। ভূমি থেকে প্লাটফরমের ওপরে ওঠার জন্যে সিঁড়ি আছে।

মুসা খাঁর মসজিদ

পুরাতন হাইকোর্ট এলাকার বিপরীতে কার্জন হলের পেছন দিকে এ মসজিদটি অবস্থিত। মুঘল আমলের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব মুসা খঁাঁর নামানুসারে এ মসজিদের নামকরণ হয়েছে। তাঁর সমাধি মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে। মসজিদটি উঁচু প্লাটফরমের ওপর নির্মিত এবং এর ছাদে আছে তিনটি গম্বুজ।

খাজা শাহবাজের মসজিদ

মুসা খাঁর মসজিদ থেকে এ মসজিদটি খুব বেশি দূরে নয়। পুরনো হাইকোর্ট এলাকার পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে এটির অবস্থান। এ মসজিদে রয়েছে তিনটি গম্বুজ, তিনটি মেহরাব, চারটি মিনার ও পঁঁচটি প্রবেশপথ। মসজিদের পূর্ব দিকে সমাধিসহ একটি পাকা দোচালা ইমারত রয়েছে। সমাধিটি এ মসজিদের নির্মাতা হাজী খাজা শাহবাজের। তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। সুবাদার মোহাম্মদ আজমের আমলে ১৬৭৯ সালে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।

তারা মসজিদ

এটিকে মুঘলকীর্তি বলা যায় না। তবে ঢাকার একটি দর্শনীয় ও কারুকার্যখচিত মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটির নির্মাণরীতিতে মুঘল প্রভাব লক্ষণীয়। মির্জা গোলামপির অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে এটি নির্মাণ করেছিলেন।

মুঘল আমলে বাংলার রাজধানী শহরটি যে বাস্তবিকই প্রাচ্যের একটি উজ্জ্বল মহানগর ছিল তার স্মারক এ প্রতœকীর্তিগুলো। এগুলো শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহেরও সাক্ষী।

জয়কালী মন্দির

জয়কালী মন্দির বলতে ঠাঠারিবাজারের পূর্ব দিকে দুটো মন্দিরকে বোঝায়। এদের মধ্যে বড়টি শেষ মুঘল যুগে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এটি একটি পঞ্চরত্ন মন্দির। ছোট মন্দিরের বাইরের দিকের দেয়ালে মূর্তি উৎকীর্ণ দেখা যায়। এটি কোম্পানি আমলের আগেকার কীর্তি নয় বলে মনে হয়।

সুজাতপুর গুরুদুয়ারা

জনশ্রুতি আছে যে, বাদশাহ জাহাঙ্গীরের আমলে (১৬০৫-১৬২৮) শিখগুরু আলমাস্ত এটি নির্মাণ করেছিলেন। মুঘল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সুজাতপুরে এটি নির্মিত হয়েছিল। তবে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের যে গুরুদুয়ারাটি অবস্থিত, সেটি বেশ আধুনিক এবং তার নির্মাণকাল ১৮৩৩ সালে। বর্গাকার মন্দিরটির প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৭.০৬ মিটার।

ঢাকেশ্বরী মন্দির

এ মন্দিরকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তি আছে। কেউ মনে করেন, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন, আবার কেউ মনে করেন দিল্লির স¤্রাট আকবর এ মন্দিরের নির্মাতা। অবশ্য তেমন প্রাচীন মন্দির টিকে নেই। ১৯০৬ সালে প্রকাশিত ‘রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল’ গ্রন্থে এফ বি ব্রাডলি বার্ট লিখেছেন যে এটি ২০০ বছরের পুরোনো মন্দির। এ মন্দিরের নামানুসারে ঢাকেশ্বরী রোডের নামকরণ হয়েছে। সড়কটির উত্তর দিকে পুব থেকে পশ্চিমে পাশাপাশি চারটি ছোট মন্দির এবং সেগুলোর পুব দিকে দক্ষিণমুখী ঢাকেশ্বরী মন্দির অবস্থিত।

সঙ্গতটোলা

শিখ ধর্মগুরু তেগ বাহাদুর ১৬৬৫ সালের দিকে ঢাকায় অবস্থানকালে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। দোতলা মন্দিরে তেগ বাহাদুরের চিত্র সংরক্ষিত রয়েছে। তবে বর্তমান ইমারত অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের বলে ধারণা করা হয়। এখানে স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে শিখ মন্দির নির্মিত হওয়ার কথা জানা যায়। এ নামে (সঙ্গতটোলা) পুরান ঢাকায় একটি মহল্লা রয়েছে। শিখসঙ্গত থেকে নামটি এসেছে।

তেজগাঁও গির্জা

ঢাকার তেজগাঁ এলাকায় ১৬৭৭ সালে মুঘল আমলে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী পর্তুগিজদের উদ্যোগে এ গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল। ঢাকা শহরের সবচেয়ে পুরোনো গির্জা এটি। এই গির্জাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো গির্জাগুলোর একটি। এটি বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে এবং বিশাল আকারে নির্মিত হয়েছে। এ গির্জার ভেতরের দেয়ালের গায়ে সাঁটা রয়েছে পাথরের তৈরি অনেকগুলো পুরোনো সমাধিফলক। তাতে দেখা যায় যে, গির্জাসংলগ্ন কবরস্থানে অষ্টাদশ-উনবিংশ বহু ইউরোপীয় নাগরিকের সমাধি ছিল। এককালে গির্জার ছাদ কাঠের ছিল। তবে এখন পুরো গির্জাটি পাকা। এটির নির্মাণরীতি মুঘল, ভারতীয় ও ইউরোপীয় শৈলীর অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/মোআ)