স্পর্শের আগে: এক গুচ্ছ কবিতা
একজন বিপ্লবী
সূর্য’দা বরাবরই ডানপিটে, স্বভাবে
স্বেচ্ছাচারী - স্কুল পেরোনোর আগেই
শিখেছিলেন ইয়াংকি নাচ। আরও কিছু--
ধনাঢ্য পরিবারের মা হারানো সূর্য’দা
পিতার প্রতি খুব অভিমানী ছিলেন।
নাচের আসরের
শিল্পী বুলবুলিই ছিলেন সূর্য’দার মা।
যিনি সূর্য’দার জন্মের পর আত্বহত্যা
করেন। পিতার সীমাহিন স্নেহ আদরেই
বেড়ে উঠেন সুর্য রঞ্জন ভাদুরি,
রেণু ছাড়া প্রায় সবারই অপ্রিয় ছিলেন।
প্রেমিক সূর্য’দা রেণুকে ভালবাসতেন প্রচণ্ড
কাছে পেলেই জড়িয়ে ধরতেন,
সূর্য’দার নিখাদ ভালোবাসা রেণু বুঝতেন
প্রশ্রয় দিতেন। বেধেছিলেন মায়ার বাধনে।
রেনুর স্নেহের কাছেও মেধাবী সূর্য’দা
ছিলেন বড্ড জেদী। একদিন বিকেলে রেনুকে
ধমকে দিলেন, কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? দে।
ব্রিট্রিশ খেদানো বিপ্লবী সূর্য’দার প্রচন্ড
শক্তির হুংকারে কেপে উঠে রেনুর বুক।
লুকিয়ে রাখা পিস্তল ফেরত দিয়ে -
অভিমানী কন্ঠে রেণু বলছিলেন
এসব বাদ দাও সূর্য’দা।বাদ দিবেনা বলো?
বিদেশি ফৌজের গুলিতে সূর্য’দা
মরলেন রেনুর শ্বশুরবাড়ির সামনেই।
রক্তাত্ত্ব লাশ দেখে আতকে উঠলেন রেনু
চিৎকার করে কাঁপিয়ে দিলেন আকাশ।
ভেংগে পড়লো আকাশ রেণুর শুন্য বুকে।
নিথর নিস্তব্ধ সূর্য’দাকে ঘিরে আছে ব্রিটিশ ফৌজ।
শুন্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে রেনু
স্পর্শের আগে...
অনেক অন্ধকার পথ পেরিয়ে তবেই
একদিন এসেছিলাম।
বসতে চেয়েছিলাম কাছাকাছি।
একটু ঘনিষ্ঠতা, কিছু গল্প
কিছু বিভ্রান্তি,কিছু অনুযোগ অথবা
অভিমান গুলোর সুরাহা করতে।।
১৯ শে মে’র বৃষ্টিস্নাত বিকেলে
অফিসের করিডর থেকে নেমে আসতে
তোমার খুব কষ্ট হবে জেনে,
আমিই ফিরে আসি।
সন্ধ্যার শহর তখনো আলোয় ভরে উঠেনি।
সাকুরার ওয়েটাররা তখনো বিমর্ষ বেকার
তখনো থামেনি রৌদ্রের উত্তাপ
তখনো শুরু হয়নি রক্তক্ষরণ।।
শুধু হুটহাট বৃষ্টি নেমে এলো সমতলে।
খুব সহজেই কাদায় সিক্ত হলো শহুরে পথ
বৃষ্টি,কিছুটা ভিজিয়ে দিয়ে গেলো আমাকেও।
এই প্রথম অনুভব করলাম অবহেলা।
পাছে তুমি রাগ করো, তাই
তোমাকে বিরক্ত না করার সুপ্ত অভিমানে
পুড়তে থাকি আমি, হয়তো তুমিও।
ইত্যবসরে তুমি অবিরত আসো
চেয়ে চেয়ে দেখি তোমার চোখের নিজস্ব ভাষা।
দেখি শুন্যতা শুধু চারদিকে,
বিষাদে বিরহের তুমুল আয়োজন।
দেখি তোমার চোখের মলিনে মিলনের
দ্বিতীয় উৎসব রেখা।
অথচ দিব্যি তুমি হেসে হেসে
আমার সন্নিকটে এসে, যাও উধাও।
প্রতিবার রাতেও অন্ধকার সাথে নিয়ে,
আসছো বৃষ্টি হয়ে। দিনের সব প্রহরে।
দূর দিগন্ত থেকেও ভেসে আসে তোমার
অভিমানী চোখের তীব্র আহ্বান
অব্যক্ত অনুভবে ভরে উঠে হৃদয়।
সুর ছন্দে মেতে উঠে মন।।
যাচ্ছে দিন। দিন যাচ্ছে তোমারই সুরে
অনুযোগ অভিমানের মর্মার্থ বুঝে
চোখের কোণে লেগে থাকা ভালবাসার,রং দেখে।
তোমার মনের গহীনের স্পর্শে
প্রতিক্ষণের তীব্র প্রলোভনে,
প্রতিক্ষায়, অপেক্ষায়। তোমার স্পর্শের আশায়।
পথের মধ্যে দেখা হয়ে গেলো
তাই তুমি খুব করে জানালে
যেদিন
সেদিনের কথা ভেবেও আপ্লুত
হই।
আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে
আমাকেই খুঁজে নিলে।
এরপর আরো একদিন
হঠাৎ তোমার কাছে যাই।
কিছুটা না ভেবেই। কিছুটা অভিমান
সেদিনও কমতে পারতো।
কিছুটা বৃষ্টি সেদিনও হতে পারত আকাশজুড়ে
বৈমানিক হয়ে কিছুটা সময় পাখির মতো
উড়ে উড়ে, স্পর্শ করতে পারতে আকাশ।
কিন্তু অভিমানী, স্পর্শের আগেই
তোমার এমন অভিমানে বিষন্ন গোলাপ
অজস্র ঝরে, মেঘে ঢাকা পড়ছে আকাশ।
পুড়ে যাচ্ছে
বিকেলের ঘাসফুল।
স্পর্শের আগের অভিমানে...