সোনালী ব্যাংকের ৩১ কোটি টাকা মেরে দিয়ে ব্যবসায়ী উধাও

শওকত আলী, চাঁদপুর
| আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৭, ২২:৪০ | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০১৭, ২২:২১

চাঁদপুর শহরের মেসার্স সী ফুড করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদুর রহমান চৌধুরী সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হওয়ায় তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তবে কেউ এই সম্পত্তি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এই অবস্থায় ব্যাংকের টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সবশেষ ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেননি। ২০১৫ সালে শেষ বারের মতো ঋণ নবায়ন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবুও টাকা পাওয়া যায়নি।

পরে গত ৩১ মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় শাহিদুর রজমান চৌধুরীর সম্পত্তি নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আরোপিত ও অনারোপিত সুদসহ ব্যাংক পাওনা আছে ৩১ কোটি ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৮২ টাকা। যদিও নিলাম বিজ্ঞপ্তির অনুকূলে কেউ কোনো দরপত্র জমা দেয়নি।

এর অন্যতম কারণ হিসেবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বের হয়ে এসেছে কিছু কর্মীর সহযোগিতায় মেসার্স সী ফুড করপোরেশনকে জমা রাখা সম্পত্তির অন্তত পাঁচগুণ বেশি অর্থ ঋণ দেয়ার তথ্য। ২০১০ সালে সোনালী ব্যাংকের চাঁদপুর শাখার ব্যবস্থাপক আলী আহম্মেদ মিজি (বর্তমানে অবসরে আছেন), ঋণ কর্মকর্তা আবুল কালামের (বর্তমানে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গাজীপুর শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত) নাম উঠে এসেছে সহযোগী হিসেবে।

ওই বছর ২২ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে শাহিদুর রহমান বন্ধক হিসেবে যে জমি রেখেছিলেন তার দাম পাঁচ কোটি টাকাও হবে না। এছাড়া আত্মগোপনে যাওয়ার আগে শহরের মিশন রোডে নিজস্ব বাড়িও বিক্রি করে দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। সী ফুড করপোরেশনের শেয়ারও তিনি বেচে দিয়েছেন সঞ্জয় কুমার রায় নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে। তিনিও এখন মালিকানা জটিলতায় পড়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজের করে নিতে পারছেন না।

এই অবস্থায় গত ১৯ মে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সোনালী ব্যাংকের নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সী ফুড করপোরেশনের হিমাগারে বিভিন্ন গ্রেডের হিমায়িত গলদা চিংড়ি আছে ২০ হাজার ৬৭৬ কেজি, বাগদা চিংড়ি আছে ছয় হাজার ৫০১ কেজি। এ ছাড়া দুইটি রেফ্রিজারেটর কাভার্ড ভ্যান, চান্দিনা ভিটি হালে ফেক্টরি আঙিনা একুনে পৌনে ৮৬ শতাংশ জমি ও দালান, কারখানার যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও আসবাবপত্র ইত্যাদি। গত ১৪ জুন টেন্ডার বক্স খোলা হলেও কোনো দরপত্র পরেনি। দ্বিতীয় দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের চাঁদপুর শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল মতিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ব্যাংক তার সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে মামলা প্রক্রিয়ায় যাবে। তার আগে নিলাম সম্পন্ন প্রক্রিয়া চলছে। আমরা যেকোনো ভাবেই হোক ব্যাংকের টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চলাবো।’

সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার উপমহাব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন আব্বাসী বলেন, ‘ঋণের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত আছে কি না-তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দিয়ে কয়েক দফায় তদন্ত করা হয়েছে। ঢাকাটাইমস/০৫জুলাই/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :