কথা রাখতে পারলেন না মেয়র খোকন

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৯:৩৪ | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:০৭
বুধবার বৃষ্টির পর রাজধানীর চিত্র

বর্ষায় এবার রাজধানীর শান্তিনগরে কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা থাকবে না- গ্রীষ্মে জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। এক দিন নয়, একাধিক দিন একই কথা বলেছিলেন তিনি। এমনকি ভারী বর্ষণের অপেক্ষাতেও ছিলেন। কিন্তু মেয়রের কথা আর বাস্তবতা ভিন্ন। অন্যান্য বছরের মতোই মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে শান্তিনগর এলাকা।

অবশ্য কেবল শান্তিনগর নয়, বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর আরও বিভিন্ন এলাকা। যেসব কারণে জলাবদ্ধতা হয়, সেই কারণগুলোর সুরাহা হয়নি। পানি নিষ্কাষনের নালাগুলো ভরাট হয়েই আছে কাদা আর ময়লায়। খালগুলোতেও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়নি। দখলদারদের উচ্ছেদ বা সাজা দেয়া যায়নি, পাশাপাশি পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। ফলে এগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে পানি সরে যাওয়ার পথ।

গত ৬ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই বছর মেয়াদ পূর্তিতে ‘এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ ঢাকা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মেয়র খোকন বলেন, ‘শান্তিনগরের জলাবদ্ধতার জন্য ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ ৮০ ভাগ সমাপ্ত হয়েছে। আগামী জুন-জুলাইয়ের বর্ষায় শান্তিনগরে কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা হবে না। এখন একটা ভারী বর্ষণ হলেই বিষয়টি দৃশ্যমান হবে।’

কিন্তু ভারী বৃষ্টি লাগে না, মাঝারি বৃষ্টিতেই শান্তিনগর তলিয়ে যাচ্ছে। তবে কেবল শান্তিনগর নয়, আশেপাশের মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার ওয়্যারলেস, রাজারবাগ এলাকাও তলিয়ে যাচ্ছে যখন তখন। এর ভিড়ে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও তার আশেপাশের দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল থেকে ফকিরাপুল এলাকা ডুবে যাচ্ছে বৃষ্টিতে।

মধ্য ঢাকায় গ্রিন রোড, যাত্রাবাড়ীর আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও সিপাইবাগ, রামপুরার বাসিন্দারাও ভোগান্তিতে পড়ছে যখন তখন।

জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীতে প্রকল্পের অভাব নেই। ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ৫৩০ কোটি টাকায় তিনটি প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এ ছাড়াও চলমান আছে বিভিন্ন প্রকল্প। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথাও একাধিকবার জানিয়েছেন মেয়র খোকন। কিন্তু ঘোষিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি এই কাজও।

আবার ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নন্দীপাড়া ত্রিমোহনী খাল মুক্ত করার মধ্য দিয়ে ১১টি খালের দখলমুক্তির অভিযান শুরু করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সেই অভিযানও থিতিয়ে এসেছে এবং খালগুলো দিয়ে আগের মতোই পানি নামতে পারছে না স্বাভাবিক গতিতে।

এই সমস্যায় বৃষ্টি এলেই চরম ভাগান্তিতে পরে অফিসগামী আর স্কুলগামীরা। আর রাস্তা ভাঙা থাকলে তো কথাই নেই। বিশেষ করে রিকশা যাত্রীরা আছে বিপাকে। খানাখন্দে চাকা পড়লেই রিকশা উল্টে যায়। পানির কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না বলে রাস্তায় দীর্ঘ যানজটও বাধে।

শান্তিনগর এলাকার আসিফ ইকবাল রাস্তায় জলাবদ্ধতার কারণে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে মেয়র বলেছিলেন এই বর্ষায় আমাদের এলাকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে। কিন্তু মেয়রের সেই কথা রাখতে পারলেন না। দেখেন গতকালের বৃষ্টিতেই শান্তিনগরের পুরো রাস্তাজুড়েই জলাবদ্ধতা হয়েছে। রাস্তাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পথচারী ও যানবাহনের ব্যাপক সমস্যা হয়েছে।’

দৈনিক বাংলা থেকে মতিঝিলের রাস্তায় থৈ থৈ পানির মধ্যে ফুটপাত ধরে যা্চ্ছিলেন পথচারী ইব্রাহিম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এই রাস্তায় যে পানি, তাতে টাকা খরচ করে আর কক্সবাজারে সৈকত দেখতে যাওয়া লাগবে না। মতিঝিলের রাস্তাই এখন সমুদ্র সৈকত হয়েছে।’

ঘোষণা দিয়েও কেন কথা রাখতে পারলেন না- জানতে মেয়র সাঈদ খোকনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান মেয়র এখন বিদেশে অবস্থান করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা পুরোপুরি দূর করা কখনই সম্ভব নয়, কারণ নতুন করে ড্রেন করার জায়গা নেই।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীর এমন একটা অবস্থা, চারিদিকে বাঁধ থাকায় একটা পাত্রের মতো হয়েছে। পাম্প করে পানি বের করে দেয়া হয়, সেখানে পানি যেতে তো সময় লাগে। তার ওপর ড্রেনগুলো অপরিস্কার থাকছে, মানুষ যত্রতত্র ময়লা ফেলছে। সবমিলিয়ে পানিটা সরতে একটু সময় লাগবে।’

খান মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, ‘রাজধানীর পাঁচ ছয়টি জায়গা চিহ্নিত হয়েছে জলাবদ্ধতা। সেখানে আমাদের পাইপ লাইনের কাজ চলছে। এগুলো শেষ হলে জলাবদ্ধতা কিছুটা নিয়ন্ত্রেণে আসবে। তবে জলাবদ্ধতার সমস্যাগুলো এড্রেস করা হচ্ছে, নতুন নতুন সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে। একটা সমস্যা সমাধান হচ্ছে, আর একটা সমস্যা সষ্টি হচ্ছে।’

‘আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ন, এটার কারণে সমস্যাগুলো হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নকে কন্ট্রোল করতে হবে, সেটা যদি সম্ভব হয় তবে অনেক সমস্যাই কমে যাবে।’

ঢাকা উত্তরও ভুগছে একই সমস্যায়

তবে জলাবদ্ধতা কেবল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমস্যা নয়। ঢাকা দক্ষিণের তুলনায় খালি জায়গা বেশি হলেও বা তুলনামূলক বেশি পরিকল্পিত নগরায়ন হলেও ঢাকা উত্তরের মিরপুর, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা, বিমানবন্দর সড়ক, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা, ক্ষিলক্ষেত, বাড্ডা এলাকাও প্রায়ই তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। এর মধ্যে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চরম দুর্ভোগে আছে খিলক্ষেতবাসী। কিন্তু সিটি করপোরেশনের দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো পদক্ষেপই নেই।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/জিএম/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সামরিক মহড়ায় বাংলাদেশে আসছে চীন আর্মি, নজর রাখছে ভারত

বাংলাদেশে বৃষ্টির নামাজের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে

ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোকে সহায়তার আহ্বান

রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস

উপজেলা নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির

‘পৃথিবীর কোনো দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পারফেক্ট নয়’  

ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল ব্যবহার বন্ধ না হওয়ায় উদ্বেগ

কৃষির সব স্তরে উন্নত প্রযুক্তি আবশ্যক: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়: রাষ্ট্রদূত

চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :