নতুন আম ‘রাঙা সিঁদুর’

রিমন রহমান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:২৬ | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:২২

গাছে কাঁচা আমের রঙ সিঁদুরের রঙের মতো লাল। পাকলে সে রঙ আরও গাঢ়। তাই স্থানীয়ভাবে আমটির নাম দেয়া হয়েছে ‘রাঙা সিঁদুর’। আম গবেষকরা বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত এমন রঙিন আম আর নেই। রঙ ছাড়া এ আমের অন্যান্য গুণাগুণও বেশ ভালো।

রাজশাহীর একটি বাগানে আমটির সন্ধান পাওয়া গেছে। গাছটিতে এবারই প্রথম মুকুল এসেছিল। ধরেছে ২৫টি আম। গাছের মালিক জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক। তার দাবি, এখন পর্যন্ত এটিই দেশের সবচেয়ে বেশি রঙিন আম।

মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, সম্প্রতি গাছে আমটি পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু কোনো নাম না থাকায় তিনি নিজের ফেসবুকে কয়েকটি কাঁচা-পাকা আমের ছবি আপলোড করেছিলেন। সেখানে তিনি আমের নাম দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। একজন নাম দেন ‘রাঙা সিঁদুর’। নামটি তার কাছে ভালো লাগে। ফেসবুকে আরও অনেকে নামটি পছন্দ করেন। এখন তিনি নামটি সরকারিভাবে নিবন্ধনের কথা ভাবছেন।

মঞ্জুরুল হক বলেন, ২০১২ সালের দিকে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আমবাগানে এই আমের গাছের সন্ধান পান। গাছটি ছিল দুটি বাগানের মাঝামাঝি স্থানে। তার ধারণা, পাশাপাশি দুই বাগানের দুটি গাছের মুকুলের পরাগায়নের ফলে এ আমের উদ্ভব হয়েছে। জীর্ণশীর্ণ ওই গাছে এমন রঙিন আমের খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান।

এরপর সেখান থেকে একটি ডাল সংগ্রহ করেন। পরে রাজশাহীর পবা উপজেলার মতিয়াবিলে নিজের বাগানের চার বছর বয়সী একটি গাছে টপ ওয়ার্কিং (এক ধরনের কলম) করেন। সেটি টিকলে ওই ডাল থেকে চার বছর ধরে পুরো গাছটিকেই কলম করেন। এরপর এবারই প্রথম গাছে আম ধরে।

তিনি আরও জানান, কাঁচা-পাকা অবস্থাতে আমটিই যে শুধু সিঁদুরের রঙের তা নয়, গাছের মুকুলও ধরেছিল লাল বর্ণের। আমটির গড় ওজন ৩৬৪ গ্রাম। এর মধ্যে ওপরের খোসা ৫০ গ্রাম। আর আঁটি ৪৪ গ্রাম। বাকিটা আমের পাল্প। আঁটিতে নেই কোনো শাশ। এর টিএসএস বা মিষ্টতা শতকরা সাড়ে ১৪ শতাংশ। পাকলে প্রচণ্ড রকমের সুগন্ধ ছড়ায় আমটি।

মঞ্জুরুল হক কয়েকটি আম তার সহকর্মীদের খাইয়েছেন। তার সহকর্মী কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবদুল আউয়াল ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমটিতে সুগার কম। আকর্ষণীয় একটা স্বাদ আছে। আমটির সংরক্ষণ ক্ষমতাও বেশি। বিদেশে রপ্তানির জন্য আমটি খুবই উপযোগী। বিদেশে এমন রঙিন আমের চাহিদাও ব্যাপক।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. সাইফুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, আমটি তারাও খেয়ে দেখেছেন। মিষ্টি একটু কম হলেও আমটি তাদের কাছে সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ব্যাগিং প্রযুক্তি ছাড়াই এমন আকর্ষণীয় রঙের আম তিনি আগে আর দেখেননি। স্বাদে-গন্ধে আমটি অতুলনীয়। এটি খেতে লখনার চেয়েও সুস্বাদু। সম্প্রসারণ করা গেলে নতুন এই আমটি লখনাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

আমসহ অন্যান্য উদ্যানতাত্বিক ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের বিষয়ে কাজ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্র। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেখানকার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রেজা ঢাকাটাইমসকে বলেন, নতুন এ আমটি তিনি নিজেও দেখেছেন। তিনি এটি নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

ড. হামিম রেজা বলেন, ‘মঞ্জুরুল হকের গাছের একটি আম আমি নিজেও দেখেছি। আমরা এ ধরনের রঙিন আমই খুঁজি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমটির ডাটা রেকর্ড করা হবে। পাশাপাশি এ ধরনের কোনো আম আগে থেকে আছে কী না তাও দেখা হবে। অন্য কোনো আম না পেলে এটি মুক্তায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/আরআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :