পটুয়াখালী-৩: আ.লীগের মনোনয়ন পেতে চান ব্যবসায়ী শাহজাদা
আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন তরুণ ব্যবসায়ী এস এম শাহজাদা। গত রমজানে ইফতার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এলাকায় নিজের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার বার্তা দেন তিনি।
ইতিমধ্যে পোস্টার ও প্লাকার্ড সাঁটিয়েছেন গলাচিপা-দশমিনা জুড়ে। পোস্টারে নৌকা আর নিজের ছবি দিয়ে সবার দোয়া চান স্থানীয় ছাত্রলীগের এই সাবেক নেতা।আর এর মধ্য দিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার বার্তাও পৌঁছে দিলেন এলাকার মানুষের কাছে।
সংসদের এই আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের আসন হিসেবেই পরিচিত। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যিনি পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন- এমন ধারণাই প্রচলিত স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাবেন তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গেছে এখনই। এই আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের নেতা আ খ ম জাহাঙ্গীর। এর আগেরবার অর্থাৎ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হয়েছিলেন গোলাম মাওলা রনি। তিনি এখন আর আওয়ামী লীগে নেই।
২০০৮ সালে আ খ ম জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন না পাওয়ার কারণ হিসেবে এলাকাবাসীর ভাষ্য, এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। তবে ২০১৪ সালে মান-অভিমান ভুলে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেন।
এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্বকে বেশি গুরুত্ব দেবে বলে দল সূত্রে জানা গেছে। এই হিসাব মাথায় রেখেই এগোতে চান এস এম শাহজাদা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন, সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না হলেও পেশায় সিরামিক ব্যবসায়ী শাহজাদা এলাকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে অনেক আগে থেকেই জড়িত। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি।
আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এই ব্যবসায়ী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চাই। দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতা পৌঁছে দিতে চাই গলাচিপা-দশমিনার মানুষের দোরগোরায়। আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগকে এক ছাতার নিচে আনতে চাই।’
শাহজাদা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা বানিয়েছেন আ খ ম জাহাঙ্গীরকে। তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। অথচ এক-এগারোর সময় তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব থেকে অপসারণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এ কারণে এলাকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নৌকা-পাগল জনতার ঘৃণা ও অবজ্ঞা আছে তার প্রতি।’
কেন মানুষ আপনাকে ভোট দেবে- জানতে চাইলে শাহজাদা বলেন, ‘গলাচিপা-দশমিনার মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন চায়। আমি তাদের সেই চাওয়া পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’
নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে এই মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন ও বাজারে ডিজিটাল লাইব্রেরি করব, যাতে এলাকার তরুণসমাজ লেখাপড়া করতে পারে। কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেব। এলাকার তরুণ প্রজন্ম যাতে মাদকাসক্ত হয়ে না পড়ে সে জন্য বই পড়া প্রতিযোগিতা, কর্মসংস্থানে আকৃষ্ট ও উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নেব। চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেলায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করে দেব তাদের।’ দুই উপজেলাকে পুরোপুরি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার মেগা পরিকল্পনাও তার রয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শরিক হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যে ঘোষণা তা বাস্তবায়ন করব আমি। তথ্যপ্রযুক্তিতে দশমিনা-গলাচিপা হবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জনপদ।’
গলাচিপা উপজেলায় ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন শাহজাদা। নব্বইয়ের দশকে তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ও জুনিয়র হোস্টেল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বরিশাল বিএম কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স করার সময়ও ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন তিনি।
শাহজাদা রাজধানী ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিবারেল আর্টস থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি একটি সিরামিক কোম্পানির চাকরিতে যোগ দেন। এরপর নিজেই এ ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৬জুলাই/মোআ)