ফেনী শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৫ সুপারিশ

আরিফ আজম, ফেনী প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:৫৬

ফেনী পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে পৌরসভা। ইতিমধ্যে ড্রেন নির্মাণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু বাস্তবায়ন হলেও অনেক প্রকল্পই আলোর মুখ দেখে না। এতে করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ছে।

পৌরসভা সূত্র জানায়, প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। সাত কোটি টাকা ব্যয়ে শিশু নিকেতনের সামনে থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। তবুও প্রতিবারই বৃষ্টি হলে পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট ডুবে যায়। জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গত ৬ জুন পৌরসভার পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট জলাবদ্ধতা তদন্ত ও নিরসন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুর রহমান। ওই কমিটি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করে নিরসনের পরামর্শ দিয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে নির্মাণ বিধিমালা না মেনে রেকর্ড পরিমাণ বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক এবং বাণিজ্যিক বিল্ডিং, স্থায়ী-অস্থায়ী সেমিপাকা বিল্ডিং নির্মাণ হওয়ায় খোলামেলা উন্মুক্ত জায়গা তথা অনাবাদি খোলামেলা জমি ও মাঠ দ্রুত সংকুচিত হয়ে বিরাট অংশ নিয়া প্রচুর ঘনবসতি এলাকায় পরিণত হয়েছে। ফলে একপশলা বৃষ্টি হলে অপ্রশস্ত মাটি ভরাট হওয়া-অগভীর, নাতিদীর্ঘ, আউট-লেট বিহীন পাকা, কাঁচা ড্রেন দিয়া বিরাট এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। কোথাও কোথাও নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ না করে ড্রেন জবর-দখল করে নির্মাণ কাজ করার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে কখনো কখনো ড্রেনের পানি উপচে রাস্তা এবং বসতবাড়ি, বাড়ির আঙ্গিনা, দোকানপাট/ বাণিজ্যিক এলাকা প্লাবিত হয় এবং কোনো কোনো ওয়ার্ডে নিম্নাঞ্চলে স্থায়ী ও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

এছাড়া পৌর এলাকায় বড় বড় খালগুলো যেমন দাউদপুর খালা, পাগলীচড়া, দমদমা খাল ও কুমড়াছড়া খাল দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও খনন না করার কারণে সংকুচিত হয়ে ভরাট হওয়ায় পৌর এলাকার বৃষ্টির পানি সহজে দ্রুত নিষ্কাশনে বাধাও অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

একই প্রতিবেদনে জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় হিসেবে ১৫টি পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফেনী রেলওয়ে ব্রিজ থেকে মধুপুর হাইওয়ে ব্রিজ পর্যন্ত খাল গভীরভাবে খনন, পাঠানবাড়ী থেকে দাউদপুর খাল পর্যন্ত পাগলীচড়া খাল গভীরভাবে খনন, আবু বক্কর সড়কের মাথায় রেলক্রসিং থেকে সোনাপুর খাল পর্যন্ত দমদমা খাল গভীরভাবে খনন ও সংস্কার করা। গুদাম কোয়ার্টার রেলক্রসিংয়ে যে চুঙ্গি আছে তা দিয়ে পানি ধীরে ধীরে নিষ্কাশিত হয়। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য ওই চুঙ্গি ভেঙে দ্বিগুণ বড় আকারে স্থাপন করতে হবে। একাডেমি এলাকার রাস্তা উঁচু করতে হবে। পশ্চিম পাশের ড্রেন সংস্কার/খনন করতে হবে। হাসপাতাল মোড়ে বড় আকারে ক্রস ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। একাডেমি রাস্তার উভয়পার্শ্বে পাকা রাস্তার এবং ড্রেনের মাঝখানের নিচু জায়গার পানি ড্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শান্তি কোম্পানি রোড থেকে দক্ষিণে পাগলী চড়া পর্যন্ত ড্রেন খনন ও প্রশস্ত করতে হবে। এসএসকে সড়কের দুই পার্শ্বের ড্রেন পাগলি চড়া খালের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খনন ও প্রশস্ত করতে হবে। দেওয়ানগঞ্জ থেকে উত্তরে হাইওয়ে ক্রস করে বিমানবন্দর পর্যন্ত খাল খনন করতে হবে। পলিটেকনিক্যালের পার্শ্বের কুমড়াছড়া খাল খনন করতে হবে। পিটিআইয়ের সামনের ড্রেন পরিষ্কার/ খনন করার জন্য পকেট স্লাব এবং হকার্স মার্কেটের ড্রেনের উপর পকেট স্লাব নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ড্রেনের যেসব জায়গা জবর দখল হয়েছে তা দ্রুত সময়ে জবর দখল মুক্ত করতে হবে। সওদাগর পট্টির পূর্ব দিকের ড্রেনের জবর দখলকারীদের জবর দখলমুক্ত করার জন্য চিঠি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকটি নকশা/ প্ল্যান অনুমোদন দেয়ার পূর্বে সরেজমিনে নকশার সাইট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ারসহ যৌথ পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা এবং নকশাটি অনুমোদনের পর নকশাটির লে-আউট দেয়ার সময় নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ অনুযায়ী লে-আউট দেয়াসহ নির্মাণ কাজের আনুসঙ্গিক সবকিছু সঠিকভাবে নিশ্চিত করা।

তাছাড়া উক্ত নির্মাণ কাজের ফলে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন জবর দখল হয় কি না এর প্রতিকার করার সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রকৌশল বিভাগকে দায়িত্ব দেয়ার সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চাঁড়িপুর আবদুস ছালাম রোড থেকে বিসিক এলাকা হয়ে পাঁচগাছিয়া বাইপাস রোডের দক্ষিণের লিলানী জলা সংযোগ খাল খনন ও সংস্কারের ব্যবস্থা করা। বিমানবন্দর থেকে ডাকাতিয়া নদী সংযোগ খাল খনন ও সংস্কারের ব্যবস্থা করা। পৌর এলাকার আউটলেটের এবং বড় বড় খাল যেমন পাগলি ছড়া খাল, দাউদপুর খাল, দমদমা খাল ও কুমড়াছড়া খাল খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করিয়া চিঠি দেয়ার ব্যবস্থা করা। ড্রেনের যেসব স্থানে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বৈদ্যুতিক পিলার, গ্যাস লাইনের পাইপ ও টিএন্ডটি তার বা ক্যাবল কেবিনেট রয়েছে তা নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে। জনসাধারনের অসচেতনতা বা অজ্ঞতার কারণে দৈনন্দিন ব্যবহৃত বসতগৃহের আবর্জনা এবং পলিথিন জাতীয় দ্রব্য ড্রেনের মধ্যে ফেলে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে।

জানতে চাইলে ফেনী পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা তদন্ত ও নিরসন কমিটির আহ্বায়ক এবং পৌর কাউন্সিলর সাইফুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, উল্লিখিত করণীয়সমূহের মধ্যে অনেকগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। পৌরসভার আওতাধীন করনীয় বাস্তবায়ন করতে প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :