দিনাজপুরে সপ্তরথ হিন্দু মন্দিরের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৯:৪৫

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় একটি সপ্তরথ হিন্দু মন্দির খুঁজে পেয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গবেষক দল। দুই মাস ধরে চলমান এই খননে আবিষ্কৃত মন্দিরটির আনুমানিক বয়স ১২’শ বছর। খননকাজে নিয়োজিত জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশে এটিই প্রথম আবিষ্কৃত সপ্তরথ মন্দির।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম এ মন্দিরের খনন কাজ পরিদর্শন করেছেন।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে স্থানীয়ভাবে বুড়ির থান/বুড়ি মাতারানীর মন্দির থান নামে খ্যাত এই ঢিবিটি পূর্ব-পশ্চিমে ৮০ মিটার আর উত্তর-দক্ষিণে ৬০ মিটার মাপের।খননদলের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঢিবিটি পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে লিচু বাগানের মধ্যেও বিস্তৃত রয়েছে।

আবিষ্কৃত মন্দিরটি ঢিবির আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকের অংশটি অভিক্ষেপ বিশিষ্ট শক্ত কাঠামোর (৬.২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬.২৫ মিটার প্রস্থ), মাঝখানে গর্ভগৃহ (২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২ মিটার প্রস্থ। পূর্বদিকে সংযুক্ত রয়েছে ৮ মিটার বর্গাকার একটি কক্ষ। এই কক্ষটিতে ছিল মন্দিরের মন্ডপ।

পুরো মন্দিরটির আকার ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে আরও সময় লাগবে বলে জানান খনন দলের পরিচালক জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন। তিনি জানান, রথ শব্দটি প্রচীন মন্দির স্থাপত্য গঠন ও শৈলী প্রকাশকারী পরিভাষা। দেয়ালের বহির্গাত্রের উলম্ব অভিক্ষেপগুলোকে রথ বলা হয়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, মন্দিরটি ভারতের বর্তমান উড়িশ্যায় উদ্ভুত কলিঙ্গ মন্দির স্থাপনা রীতির অনুসারী।

মন্দিরটির রথবিশিষ্ট গর্ভগৃহের উপরিকাঠামো হিসেবে রেখা দেউল ধরনের শিখর ছিল বলে অনুমান করছেন ড. স্বাধীন সেন।তিনি জানান, গর্ভগৃহের কেন্দ্রে একটি সপ্তরথ অভিক্ষেপবিশিষ্ট পাথরের বেদি রয়েছে। এই বেদির পশ্চিমপাশের অর্ধবৃত্তাকার খাঁজের মধ্যে প্রতিমার নিন্মংশ প্রবিষ্ট করে রাখা হতো। তবে খননের সময় এই জায়গাটিতে একটি ছোট মাটির তৈরি ঘট পাওয়া গেছে। এখনো বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিমার প্রতীকী প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ঘট পূজা করে থাকেন।

উড়িষ্যার মন্দির স্থাপত্যরীতির অনুরূপ ইট নির্মিত মন্দিরের উপস্থিতি বাংলা অঞ্চলে বিরল নয়। গত বছর কাহারোল উপজেলার মাধবগাঁওয়ে একই দল একটি নবরথ মন্দির খনন করেছিলেন। অধ্যাপক স্বাধীন জানান, উপরের এই মন্দিরটি পূর্বেকার আরেকটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের উপরে নির্মিত। ওই স্থাপনার অংশবিশেষ উন্মোচিত হওয়ায় তার প্রকৃতি ও পরিবর্তন এখনো স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব নয়। ওই স্থাপনাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করতে আরো সময় প্রয়াজন।

খননদলের সহযোগী পরিচালক জাবির শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান জানান, বিরল উপজেলার এই প্রত্নস্থানগুলো প্রথম শনাক্ত করেন ২০০৪-২০০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের গবেষণা শিক্ষার্থী খন্দকার মেহবুবুল ইসলাম। তার গবেষণা ও পরবর্তী গবেষণায় এই উপজেলায় মোট ১২২টি বিভিন্ন কালপর্বের প্রত্নস্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল। খননকৃত প্রত্নস্থানটি পারুলগঙ্গা নামের একটি নদীর মৃত খাতের দুইপাশ ধরে রৈখিক বিন্যাসে ছড়িয়ে থাকা একটি মানববসতির অংশ ছিল।

পুরো প্রত্নস্থানটি যথাযথভাবে খনন ও নথিভুক্তকরণ করতে আরও চার মাস সময় প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন খননের সহকারী পরিচালক ও পিএইচডি গবেষণা শিক্ষার্থী আবির বিন কায়সার শুভ। তিনি বলেন, খননের স্তরবিন্যাস বুঝে এখানে মানুষের বসতির পরিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে পরিচালিত এই খননে অর্থায়ন করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

এখানে জাবির ১৪ জন শিক্ষার্থী, মহাস্থানগড় থেকে আসা ১৫ জন বিশেষজ্ঞ শ্রমিক ও কাহারোল থেকে আসা ২৫ জন শ্রমিক প্রত্নস্থানটি খননে অংশ নিচ্ছেন।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম খননস্থলটি পরিদর্শন করে জানান, এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে খননকারী গবেষক দল।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/এসএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :