ভরা বর্ষায়ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরগুলো মাছশূন্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০১৭, ০৮:২০

যত দূর চোখ যায় থইথই পানি। কিছু দূরে দূরে চোখে পড়ে মাছ ধরার ছোট নৌকা। জেলেরা তাতে জাল টানছে। কিন্তু জাল তুলে হতাশ হতে হয় তাদের। কিছু ছোট পুঁটি, চান্দা আর পোনা ছাড়া অন্য কোনো মাছ নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুরের হাওরগুলোতে এই ভরা বর্ষায় জেলেদের জালে এমনই চিত্র।

অথচ এ সময়টা জেলেদের আয়ের বড় মৌসুম। জাল ফেললে নানা জাতের মাছ ওঠার কথা। পাঁচ-সাতজন জেলে নৌকাপ্রতি তিন-চার হাজার টাকার মাছ পেতেন। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। এখন হাওর অঞ্চলের জেলেরা সন্ধ্যার পর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত টানাজাল, বেড়জাল পানিতে ফেলে দেড়-দুই হাজার টাকার মাছও পাচ্ছেন না। কখনো কখনো তাও মেলে না।

অনেক জেলে জাতের মাছ (বড় মাছ) না পাওয়ার হতাশা ব্যক্ত করে জানান, কোনো দিন খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের।

সরাইল এলাকার কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের, যারা রাত জেগে মাছ ধরেন নাসিরনগরের আকাশি বিলে। হতাশস্বরে তাদের ভাষ্য এমন- ‘দাদা, হাওরে পানি আছে মাছ নাই। অহন আগের মতো জাতের মাছও পাই না। কেচকি, তিতপুঁটি আর বাইল্লারার ছোট পোনা ছাড়া কিছু নাই পানিতে। এডাও কোনো দিন পাই, আবার কোনো দিন খালি ডুলা (মাছ রাখার ঝুড়িবিশেষ) লইয়া বাড়িতে ফিরত আই।’ এখন সারা রাত খেটে জনপ্রতি ২০০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না বলে জানান তারা।

নবীনগরের হাওরে মাছ ধরেন এমন কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয় গোকর্ণঘাট বাজারে। হাওরে ধরা মাছ নিয়ে আসা হয় এই ঘাটে। ওই জেলেরা বলেন, ‘সারা দিন হাওর-বিলে মাছ মাইরা পেডের কালা দূর হয় না। আগে বিলে বর্ষার পানিতে রুই, কাতলা, বোয়াল, কালিবাউসসহ অনেক রঙের মাছ পাওয়া যেত। এখন খালি কিছু ইছাপোনা, ছোট পুঁটি আর চান্দার গুঁড়া মেলে।’

বর্ষার ভাসান পানি থেকে দিন দিন মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে হতাশ জেলেরা বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আমাদের অন্য পেশায় যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। অনেকে চলেও গেছে। এখন মাছ ধরে আর বাঁচবার কোনো উপায় নাই।’

শহরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা যায়, এই ভরা বর্ষা মৌসুমে পুকুরের চাষ করা পাঙ্গাশ, কই, তেলাপিয়া ছাড়া প্রাকৃতিক পানির কোনো জাতের মাছ নেই। বাজারে এখন চাষের মাছই প্রধান। আর যে দু-একটা জাতের মাছ পাওয়া যায়, তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

বাজারে প্রাকৃতিক পানির মাছের আকাল সম্পর্কে জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতারা বলেন, নদী, বিল ও হাওরের পানিতে কোনো পোনা ছাড়া হয় না। আর কারেন্ট জালের কারণে ছোট থাকতে মাছ মারা পড়ে বলে হাওর-বিলে দেশীয় জাতের মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে।

(ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :