কুমিল্লায় সড়কে সড়কে দুর্ভোগের খানাখন্দ

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
| আপডেট : ০৭ জুলাই ২০১৭, ১৫:২৬ | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০১৭, ০৮:২৩

কুমিল্লা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ জেলার অন্যান্য সংযোগ সড়কগুলোর পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। কাদাপানিতে একাকার এসব গর্ত যেন দুর্ভোগের ‘পসরা’ সাজিয়ে বসেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ।

এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলা-উপজেলার সড়কগুলো এমন বেহাল পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর কিংবা কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বিকার। অবস্থা এমন হয়েছে দুর্ভোগকে নিয়তি মেনে সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহানগরীর চাঁনপুর বউবাজার হয়ে গোমতী নদীর আইল পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় তাতে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তগুলো পানিতে ভরা। ওই এলাকার মানুষ খুব একটা বাধ্য না হলে সড়কটি দিয়ে চলাচল করে না। আশরাফ, নাছির, আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অন্তত ১০ জন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, কবে যে এ সড়কটি সংস্কার হয়েছিল তা কেউ জানে না।

স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, কিন্তু সড়ক সংস্কার হয় না।

এদিকে কুমিল্লা মহানগরীর যানজট হ্রাস করতে আলেখারচর থেকে কটকবাজার পর্যন্ত গোমতী বেড়ি বাঁধের ওপর পিচঢালা সড়ক নির্মাণ শুরু করেছিল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কাপ্তানবাজার পাকার মাথা এলাকা থেকে চাঁনপুর বেইলি ব্রিজ পর্যন্ত অংশটুকুর কাজ বন্ধ হয়ে আছে। অথচ গোমতী বেড়িবাঁধের এ অংশটুকু সবচেয় ব্যস্ত সড়ক।

পিচঢালা পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য সড়কের মাটি সরিয়ে ইটের খোয়া ফেলা হয়েছিল। এক মাস ধরে কাজ বন্ধ বলে ইটের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তগুলোতে পানি জমে সড়কটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সদর উপজেলার কৃষি অফিস থেকে সাতরা, সাতরা থেকে ধর্মপুর সড়ক, ধর্মপুর মোড়ের বেহাল অবস্থ্া বিরাজ করছে।

গ্রামের কাঁচা সড়কগুলোতে দুর্ভোগ আরো ভয়াবহ। বিশেষ করে লাকসামের দক্ষিণাঞ্চল এবং মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক। লাকসামের কৃষ্ণপুর থেকে মনপাল হয়ে ষোলদনা, রামপুর থেকে মনপাল হয়ে রাজাপুর সড়কের অবস্থা অত্যন্ত করুণ।

জেলা সদর ও বুড়িচং উপজেলার সীমান্তবর্তী ভরাসার-রসুলপুর সড়কটি দুই বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় ইটের খোয়া উঠে গিয়ে কাদামাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এই সড়ক দিয়ে তাদের চলাচলে কষ্টের সীমা নেই।

নগরীর কালিয়াজুরি থেকে বদরপুর কোরের পাড় এবং কালিয়াজুড়ি শহীদ মিনার থেকে আড়াইওড়া ঈদগাহ পর্যন্ত সড়কটিরও একই অবস্থা। পিচ উঠে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে এখন বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর। কালিয়াজুরি থেকে গোমতীর তীরবর্তী বদরপুর কোরের পাড় সড়কটি সদর উপজেলার ৪ নং আমড়াতলী ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের সীমানায় রয়েছে। এর ফলে স্থানীয়রা মনে করছেন সীমানাসংক্রান্ত জটিলতায় থেমে আছে সড়কটির সংস্কারের কাজ। আর এ কারণে চরম ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ।

কুমিল্লা পুলিশ লাইন থেকে ফায়ার সার্ভিস অফিস হয়ে রানীর বাজার এবং বাগিচাগাঁও তালপুকুর পাড় হয়ে বাদুড়তলা সড়কটি খানাখন্দে ভরা। কাদামাখা সড়কটিতে চলতে গিয়ে স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালতের ইউনিফর্ম নষ্ট করতে হচ্ছে।

১০ নং ওয়ার্ডের সড়কের বেহাল দশার বিষয়ে ওর্য়াড কাউন্সিলর মঞ্জুর কাদের মনি জানান, সড়ক সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ দরকার তা নিয়ে মেয়রের সাথে কথা হয়েছে। খুব শিগগির ১০ নং ওয়ার্ডের ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।

চকবাজার থেকে টিক্কারচর ব্রিজ সড়কটিরও একই দশা। ওই সড়কের বেশির ভাগ ব্যবহারকারী আমড়াতলী ও পাঁচথুবী এলাকার সাধারণ মানুষ। নগরে প্রবেশ করার অন্যতম প্রধান সড়কটির বেহাল দশায় বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নদীর ওপাড়ের সাধারণ মানুষ। মহানগরীর বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক সংস্কারহীন। সাধারণ মানুষ বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

এ সমস্যা সমাধান কবে হবে এমন বিষয়ে সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাচনজনিত কারণে চলমান কাজগুলো সাময়িকভাবে ধীরগতির হয়ে যায়। পরে আবার অর্থবছর শেষ হয়ে যায়। ফলে চলমান কাজগুলো বন্ধ থাকে। নগরীর ভিতর সড়ক সংস্কারসহ অন্যান্য কাজ খুব শিগগির শুরু হবে।

তবে মহানগরীর বাইরে উপজেলার সংযোগ সড়কগুলো যানচলাচল থেকে শুরু করে পথচারীদের চলাচলেও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ এসব সড়ক সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ দূর করা হবে কেউ জানে না।

জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিক জানান, আগে যেসব রাস্তা জেলা পরিষদের অধীন ছিল সেগুলো বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। জেলা পরিষদ ছোট কিছু রাস্তার কাজ করছে।

পরে এ বিষয়ে কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কান্তি পালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে জানা যায়, তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাঁদপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জে এম মজিবুর রহমান জানান, তিনি শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন স্বপন কান্তি পাল।

তবে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের কাজ শেষ হয়ে যাওয়া ও নতুন বাজেট প্রণয়ন সময় ব্যবধানের কারণে সড়কগুলো সংস্কারহীন রয়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত আসবে।

(ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :