জলাবদ্ধতায় বাসা ছাড়লেন ভাড়াটে

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ জুলাই ২০১৭, ১০:৫৭ | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০১৭, ১০:৪৬

রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে অসময়ে বাসা ছাড়ছেন ভাড়াটিয়ারা। সংসারের সদস্য আর মালামাল নিয়ে বাসা ছাড়তে গিয়ে অসহ্য বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ঢাকায় শত কষ্ট সহ্য করে কর্মজীবী মানুষগুলো।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ রেলগেইট থেকে রামপুরার দিকে কয়েক কদম সামনে হাঁটতেই দেখা গেল, এক ব্যক্তি ভ্যানে করে বাসার মালামাল অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। মাসের ছয় তারিখে কেউ বাসা পরিবর্তন করে, এমন ঘটনা রাজধানীতে খুবই বিরল। কৌতুহলী হয়ে ভ্যানের পেছনে গিয়ে জানতে চাই এত দেরিতে কেন বাসা পরিবর্তন করছেন? জবাবে মুন্সি রিপন বলেন, ‘ভাইরে ঝামেলায় না পড়লে কেউ মাসের ছয় তারিখে বাসা ছাড়ে?

রিপন জানালেন ‘অনেক বছর থেকে আমি মালিবাগের বাগানবাড়িতে বসবাস করছি, ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। কী করবো বলেন, একবার বৃষ্টি হলে পানি নামতে সময় নেয় সাত থেকে দশদিন। যখন-তখন চাইলেই বাসা থেকে বের হওয়া যায় না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। আধঘন্টা বৃষ্টি হলেই বাসায় পানি উঠে যায়, সব মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমার বোনের বাসায় এই মাসটা পার করে দেব। নিচু এলাকায় আর বাসা নেব না।’

রিপনের সাথে কথা শেষ করে বাগানবাড়ীর পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা দেখার জন্য সামনে যেতেই দেখা যায় কয়েকজন মিলে হাঁটু পানির নিচ থেকে ড্রেনের ঢাকনা সরিয়ে বাঁশ দিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। তাদের কাছে দুর্দশার কথা জানতে চাইলে মালিবাগ বাগানবাড়ী আবাসিক এলাকার সভাপতি টুটুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই, ভোগান্তি নয়। আমরা কি অশান্তিতে বসবাস করছি বলে বোঝাতে পারবো না। আমাদের এখানে পাঁচ হাজার লোকের বসবাস। বৃষ্টি হলেই ঘরে আটক অবস্থায় থাকতে হয়। অনেক ভাড়াটিয়া বাড়ি চেড়ে চলে যাচ্ছে। নিচ তলায় ভাড়াটিয়া শূন্য অবস্থা হওয়ার উপক্রম। আমরা আমাদের সমস্যার কথা চিঠি ও বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে জানলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই’।

বিগত দুই বছরের মধ্যে ডিআইটি রোড সংলগ্ন প্রধান ড্রেনেজ পাইপলাইন পরিষ্কার না করার কারণে পানি অপসারণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে দাবি বাগানবাড়ীর বাসিন্দাদের। তমা কনসট্রাকশনের উড়াল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কারণে পানি নামার পাইপ লাইন বালু, সিমেন্ট, কাদা মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে পানি অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাগানবাড়ীর বাসিন্দাদের এমন দুর্ভোগে জীবন কাটাতে হচ্ছে।

এই চিত্র শুধুমাত্র মালিবাগ বাগানবাড়ী বাসিন্দাদের নয়। রাজধানীর খিলক্ষেত, মিরপুর, কদমতলীর রায়েরবাগ ও মেরাজনগর, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, চকবাজার বকশীবাজার এলাকা, গোড়ান, সিপাহীবাগ, সবুজবাগ, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী আবাসিক এলাকা, জুরাইন, শনিরআখড়া ও দনিয়ায় একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।

মুষলধারে বৃষ্টি হলে খিলক্ষেত এলাকার অধিকাংশ বাড়ি পানিতে ডুবে যায়। সাংবাদিক লিয়াকত আমিনী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আধা ঘন্টা বৃষ্টি হলে খিলক্ষেত বাজার থেকে আমতলা পর্যন্ত পানি শুকোতে সময় নেয় ১৫ থেকে ২০ দিন। বৃষ্টির কারণে খিলক্ষেত এলাকার সবচেয়ে বড় স্কুল কুর্মিটোলা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজের বৃহস্পতিবারের নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। হাঁটু পানির নিচে থাকা অন্ধরাস্তায় রিকশায় ও অটোরিকশায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। যাতায়াতে রিকশায় দ্বিগুন ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এলাকার অনেক ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’

খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা শ্যামল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ আরও কয়েক দিন পর দেখা যাবে খিলক্ষেত এলাকার নিচ তলার ভাড়া নেওয়ার কেউ থাকবে না। মানুষ অন্যত্র গিয়েও যে শান্তি পাবে তার গ্যারান্টি নাই, ঢাকার অনেক জায়গায় মানুষ পানির মধ্যে বসবাস করছে। আমরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। এটা থেকে কবে মুক্তি মিলবে আল্লাহ বলতে পারেন।’

সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে অবহেলায় এমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে খিলক্ষেতের বাসিন্দাদের দাবি এলাকাবাসির। মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অনেক এলাকা। গলিপথ থেকে মূল সড়ক কোথাও কয়েক ইঞ্চি, কোথাও-বা এক-দেড় ফুট পানি।

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। জানতে চাইলে ওয়াসার এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকার সব এলাকার পানি নিষ্কাশন পাম্পগুলো চালু রাখা হয়েছে। ওয়াসার পক্ষ থেকে প্রচুর লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয়, সেই ব্যবস্থা রেখে দক্ষিণের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টি হলে অনেক সময় নালাগুলো উপচে পড়ছে। নালায় পলিথিন জাতীয় কিছু আটকে গিয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতার উপযোগী করে তৈরি ড্রেনেজ লাইন, তাই অনেক সময় উপচে পড়ছে।

(ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/এনআই/এসএএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :