রবিউলের স্ত্রীকে নিয়ে জাবির এই ভণ্ডামির মানে কি?

শরিফুল হাসান
| আপডেট : ০৭ জুলাই ২০১৭, ১৩:৫৪ | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০১৭, ১৩:২০

গুলশানের হোলি আর্টিজানে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা রবিউলের স্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেটা করল সেটা শুধু ওই পরিবারের সঙ্গে নয় বরং এদেশের পুলিশ বাহিনী, দেশপ্রেমিক মানুষ সবার সঙ্গে শঠতা, ভণ্ডামি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েকজন ছাত্র এবং সাংবাদিকের পোস্ট পড়ে আমার মনেও একই প্রশ্ন জেগেছে একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চিন্তা চেতনা কতটা নিচে নামলে এসব মশকরা তারা করতে পারে।

ঘটনা হ‌লো, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের শহীদ সিনিয়র সহকারী কমিশনার (বিপিএম-মরণোত্তর) রবিউল করিম কামরুলের স্ত্রী উম্মে সালমা মাস্টার্স পাস। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি, অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্য‌মিক ও উচ্চ মাধ‌মিক দু‌টোতেই প্রথম বিভাগ।

আমি ম‌নে ক‌রি ওই বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের অনেক শিক্ষ‌কের চে‌য়ে তার ফলাফল কোন অংশে খারাপ নয়। আর এই যোগ্যতা নি‌য়েই ওই বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের প্রথম শ্রেণির প্রশাসনিক কর্মকর্তা প‌দে আবেদন ক‌রেছি‌লেন তি‌নি, যেখা‌নে সবগু‌লো দ্বিতীয় শ্যেণি চাওয়া হ‌য়ে‌ছিল। আর সালমা আপার সেখা‌নে তিনটা প্রথম শ্রে‌ণি। অথচ ভাইভা দেয়ার পর তাকে তৃতীয় শ্রেণির পদের জন্য মাস্টাররোল (কাজ করলে দৈনিক ৫৫০টাকা, ৯০দিনের জন্য) নি‌য়োগের চি‌ঠি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। আর প্রশাস‌নিক কর্মকর্তা প‌দে ওই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একজন শিক্ষকের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর কর্তৃপ‌ক্ষের কা‌ছে আমার খুব জান‌তে ইচ্ছে ক‌রে আপনা‌দের বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের একজন সা‌বেক ছাত্র একজন শহীদ পু‌লিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর সঙ্গে এমন প্রহসন বা মশকরা কেন কর‌লেন? প্রহসন বা মশকরা বলছি এ কারণে যে রবিউলের স্ত্রীকে আপনারা চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে জনসংযোগ বিভাগ থেকে পত্রিকাগুলোতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সারাদেশের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়ে এখন কেন হীনমানসিকতা প্রকাশ করছেন? আপনার ম‌নে এই য‌দি থাক‌তো তাহ‌লে এতো ঢাক‌ঢোল পেটা‌নোর কী ছিল?

এ দে‌শের বিশ্ব‌বিদ্যালয়গু‌লো‌তে নি‌য়োগ মা‌নে ক্যু হয় আমরা কম বে‌শি জানি। ‌আমা‌দের অনেক পাব‌লিক বিশ্ব‌বিদ্যালয় যে এখন অনে‌কের স্ত্রী-শ্যালিকা-ভাই-বোনদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হ‌য়ে‌ছে সেটা আমরা কম বে‌শি জা‌নি। তাই ব‌লে একজন শহীদ প‌রিবার‌কে, দুই সন্তা‌নের মা‌কে এমন অপমা‌নের দরকার কী ছিল?

আমি ম‌নে ক‌রি জাহাঙ্গীরনগর প্রশাসন চরম দা‌য়িত্বহীনতার প‌রিচয়ই শুধু দেয়‌নি তারা রী‌তিমত মানু‌ষের আবেগ নি‌য়ে খে‌লে‌ছে। একজন বি‌সিএস পু‌লিশ কর্মকর্তাই নন আমার ম‌নে হয় এটা এ দে‌শের সমগ্র পু‌লিশ বা‌হিনী এবং শহীদ প‌রিবা‌রকে অপমান। করুণা দেখা‌নোর না‌মে এমন ভিক্ষুকে‌র ম‌তো আচরণ বিশ্ব‌বিদ্যালয় থে‌কে হ‌তে পা‌রে ভাব‌লেই ম‌নে হয় কতোটা হীন স্বা‌র্থের মানুষ আমরা। আচ্ছা যে শিক্ষ‌কের স্ত্রী‌কে চাকু‌রিটা দেয়া হ‌লে তার নি‌জের কী খারাপ লাগ‌বে না ওই চাকু‌রি কর‌তে?

পু‌লিশ বা‌হিনীর কা‌ছে আমার খুব জান‌তে ইচ্ছে ক‌রে নিহত সহকর্মী‌র প‌রিবা‌রকে এমন অপমানে আপনাদের কি খারাপ লা‌গে না? আর আপনা‌রাই বা নি‌জে থেকে মে‌য়ে‌টির প‌রিবার‌কে চাকু‌রি দেয়ার উদ্যোগ নি‌লেন না কেন!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কা‌ছে আমার প্রশ্ন, শিক্ষক কর্মকর্তা না‌মে এ দে‌শের বিশ্ব‌বিদ্যালয়গলো‌তে কী নি‌য়োগ হয় সেটা কি জা‌তি জা‌নে না? আপনারা আজ‌কে একজন শহীদ পু‌লি‌শের স্ত্রী‌কে কর্মকর্তা পদে চাকুরি দি‌য়ে কোথায় বড় হ‌বেন তা নয় উল্টো নি‌জেদের ছোট‌লোক‌ি দেখা‌লেন। অবশ্য জাহাঙ্গীরনগর কর্তৃপক্ষ বল‌তে পা‌রে, আমরা তো তা‌কে আয়া বুয়ার চে‌য়ে ভা‌লো চাকুরি দি‌য়ে‌ছি।

আমি জা‌নি না র‌বিউল ভাই‌য়ের প‌রিবার এই চাকরি মেনে নি‌য়ে‌ছে কি না জীবন জী‌বিকার তা‌গি‌দে। ত‌বে আমি এই প্রস্তাব ঘৃণাভ‌রে প্রত্যাখান কর‌ছি। আমার ম‌নে হয় জাহাঙ্গীরনগ‌রের প্র‌তি‌টা সা‌বেক শিক্ষার্থী, বি‌বেকসম্পন্ন দে‌শের প্রত্যেকটা মানুষ এ প্রস্তাব প্রত্যাখান কর‌বে। আর বি‌বেক থাক‌লে জাহাঙ্গীরনগর কর্তৃপক্ষ দ্রুত তা‌দের ভুল শুধ‌রা‌বে।

এ রা‌ষ্ট্রের সব‌কিছুর জন্য তো আমা‌দের প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকা‌তে হয় আমি তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সং‌শ্লিষ্ট সবার কা‌ছে দাবি কর‌ছি, একজন বীর শহী‌দের স্ত্রী প‌রিবার‌কে যেন যোগ্য সম্মান দেয়া হয়। তার দুই সন্তা‌নের লেখাপড়ার দায়িত্ব, বড় করার দা‌য়িত্বও যেন এই রাষ্ট্র নেয়। নয়তো জ‌ঙ্গিবাদমুক্ত এই বাংলা‌দেশ গড়ার লড়াই‌য়ের একজন শহীদের স‌ঙ্গে, একজন বীর সেনা‌নির স‌ঙ্গে বড় প্রতারণা হ‌বে।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :