১৪ বছরেও ভোলাবাসীকে কাঁদায় নাসরিন ট্রাজেডি

ইকরামুল আলম, ভোলা
 | প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০১৭, ০৮:২৯

নাসরিন লঞ্চ দুর্ঘটনার ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া এলাকায় ডুবে যায়। লঞ্চটিতে ছিল অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা। পানির তোড়ে তলা ফেটে লঞ্চটি মুহূর্তের মধ্যে ডাকাতিয়া মোহনায় তলিয়ে যায়। ওই দিন আট শতাধিক মানুষের সলিল সমাধি ঘটে। দিনটি ভোলাবাসীর জন্য শোকাবহ।

১৯৭০ এর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের পর ভোলাবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় ভয়াবহ সংবাদ ছিল নাসরিন লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনা। অনেকে তার প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এই দিনে। লঞ্চ দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।

এই ট্রাজেডিতে জীবিত মৃত সব মিলে ৪০০ যাত্রীর সন্ধান মিললেও প্রায় ৮০০ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনার দুইদিন পর থেকে ভোলার মেঘনা পরিণত হয় লাশের নদীতে।

সেই ভয়ংকর দৃশ্য মনে করে এখনো শিউরে উঠে ভোলার মানুষ। ওই দুর্ঘটনায় লালমোহন, চরফ্যাশন, তজুমদ্দিনসহ দক্ষিণ অঞ্চলের আট শতাধিক যাত্রী প্রাণ হারিয়েছে। উপকূলীয় জনজীবনের ভয়াবহ শোকাবহ এই দিনটি আজও মানুষ ভুলতে পারেনি।

নাসরিন ট্রাজেডির পর ধারাবাহিকভাবে ২/৩ বছর এ দিবসটি দক্ষিণ ভোলায় ঘটা করে পালন করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়েছিল।

তবে এই ট্রাজেডির ১৪ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় স্বজনহারাদের এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না। আজ নাসরিন ট্রাজেডি দিবসের কথা কেউ কেউ মনে করলেও দিবসটি পালন উপলক্ষে শোকসভা, মিলাদ মাহফিল, শোক র‌্যালির মতো কোনো কর্মসূচিও দক্ষিণ ভোলায় আজ আর নেই।

বেসরকারি সেবা সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের হিসাব অনুযায়ী নাসরিন দুর্ঘটনায় ১৭০ জন যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও আট শতাধিক যাত্রী নিহত ও নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে চরফ্যাশনের ১৯৮ জন, লালমোহনের ২৬৪ জন এবং তজুমদ্দিনের ১৩ জনকে শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে ১১০ জন ছিল নারী। নিহত বা নিখোঁজ যাত্রীদের মধ্যে ছিল ৩৩ জন রিকশা/ভ্যান চালক, দুইজন ফেরিওয়ালা, তিনজন গার্মেন্টস শ্রমিক, ২৪ জন চাকরিজীবী, ৫৪ জন দিনমজুর, ৩৬ জন কৃষক, ১০ জন ড্রাইভার, ৩৬ জন ব্যবসায়ী, ৩৩ জন ছাত্র, ৬৬ জন গৃহিনী, ৯ জন গৃহপরিচারিকা, ৯৬ জন শিশু ও বৃদ্ধা। এই দুর্ঘটনায় ৪০২টি পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তি মারা যায়। এসব পরিবারের মধ্যে ১২৮টি পরিবারের উপার্জনক্ষম পুরুষ ব্যক্তি মারা যায়।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ নাসরিন ট্রাজেডির পরপরই বিভিন্ন তারিখে নাসরিন ট্রাজেডিতে নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবারকে ক্ষতি পূরণ দিয়েছে। প্রাপ্ত ক্ষতি পূরণের টাকা নিহত ও নিখোঁজ স্বজনদের পরিবারে কিছুটা উপকারে এলেও বর্তমানে এসব পরিবার খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে।

কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতাসহ প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটার কারণে যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি-পরিবারের পক্ষে ব্লাস্ট একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ১২১ জন ব্যক্তি বাদী হন। বিবাদী করা হয় সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর, লঞ্চ মালিক, সারেং এবং সমিতিসহ মোট ২১ জন/প্রতিষ্ঠানকে।

দুর্ঘটনার দীর্ঘ ১২ বছর পর বিগত ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়। রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে, নিখোঁজ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ও আহতদের এক লাখ টাকা করে প্রদানের নির্দেশ দেয়।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএসহ বিবাদীপক্ষ বিগত ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করে। ২০১৭ সালের ৫ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ রুলটি খারিজ করে ব্লাস্ট কর্তৃক দায়েরকৃত বহুল আলোচিত লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ হওয়াসংক্রান্ত মামলা নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশের মাধ্যমে নিম্ন আদালতে দায়েরকৃত মামলায় ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানসংক্রান্ত প্রদত্ত আদেশ কার্যকর করে সব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ প্রদানে আর কোনো বাধা থাকলো না। লঞ্চ দুর্ঘটনায় মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের রায় এই প্রথম।

ঢাকাটাইমস/০৮জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :