সেই পুলিশ সদস্যকে নিজ গ্রামে গণসংবর্ধনার তোড়জোর

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৭, ২১:০৯

মহিউদ্দিন আহমেদ, গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ)

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ছেলে পারভেজ। বর্তমানে কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত শুক্রবার জীবনবাজি রেখে ডোবার পচা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রায় ২৬ বাসযাত্রীর জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় এখন তিনি গণমানুষের নায়কে পরিণত হয়েছেন। তার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা দেবার তোরজোড় চলছে। এদিকে তার কাজে খুশি বাবা-মা সারাজীবন যেন পারভেজ এভাবে জনগণের সেবা করতে পারে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ছেয়েছেন।

রবিবার পারভেজদের বাড়ি গ্রাম হোসেন্দীতে কথা হয় তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা আবুল কাশেম মা পারুল বেগম ও বোন রত্নার সঙ্গে।

পারভেজের বাবার মুখে উঠে আসে তাদের জীবন সংগ্রামের কাহিনি। পারভেজের বাবা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের বছর আমার আদি ভিটা হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটিবলাকী গ্রামটি মেঘনার ভাঙনে পড়ে। এতে ভিটেহারা হয় আমার পরিবার। পাশের গ্রামের ফুফুর বাড়িতে ঘর তুলে জীবন যাপন শুরু করি। আমি চলে যাই স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৯৮৮ সালে বন্যায় ফুফুর বাড়ির অস্থায়ী ভিটেও মেঘনা খেয়ে ফেললে বর্তমানে গ্রাম হোসেন্দী শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নিই ছেলে-মেয়ে নিয়ে। দুই মেয়ে বিবাহিত স্বামীর সংসারে থাকে। একমাত্র পারভেজের বেতনে সংসার চলে। ছোট ছেলে মহিউদ্দিন সামান্য বেতনে চট্টগ্রামে চাকরি করলেও সে আমাদের খুব একটা সহযোগিতা করতে পারে না।

আবুল কাশেম আরও জানান, আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় স্ত্রীর চিকিৎসা ও আমার হাত খরচ চলে।

মা পারুল বেগম বলেন, পারভেজের বাবা দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। ছেলে পারভেজ জীবনবাজি রেখে দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে। আমি এতে খুব গর্ববোধ করছি। যদি আমার মুক্তিযোদ্ধা স্বামী ও সাহসী সন্তান পারভেজকে নিয়ে নিজের ভিটাবাড়িতে ঘুমিয়ে মরতে পারতাম তবে শান্তি পেতাম।

বোন রত্না জানান, ভাইয়ের বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমরা আনন্দিত সাথে সাথে দুঃচিন্তা হয় ভাইদের নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ভাবলে। নানা ও খালার বাড়িতে আমার দীর্ঘদিন বসবাস করছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই কাজের জন্য পারভেজকে অভিনন্দন জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দশ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কার দিয়েছেন হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ।  হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি তার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন বলে জানা গেছে। যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে পারভেজ ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা হাইওয়ে পুলিশ বিভাগের জন্য সত্যিই প্রশংসনীয়। পুরস্কার দিয়ে কাজের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তবুও এ কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি যাতে তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পান এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে জানিয়ে হাইওয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

(ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)