বন্যার আরও অবনতির পূর্বাভাস

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৭, ১০:১৩ | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০১৭, ০৮:৩৯

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বেশ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দেশের প্রতিটি নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পিউবি) দেয়া তথ্য মতে, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট, ধলেশ্বরী, সুরমা, কংস ও কুশিয়ারা নদীর পানি কিছু পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যাবেক্ষণাধীন ৯০টি স্টেশনের মধ্যে ৫৫টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ২৫টি পয়েন্টে পানি হ্রাস পেয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে যমুনা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে।

বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস-বৃদ্ধির তালিকায় দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। চিলমারীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানিও। বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পায়নি পানি।

সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার কমেছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখন জুলাই মাস। জুলাই মাসে আমাদের দেশে সাধারণত বন্যা হয়। গত দুই দিন আসামে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এজন্য প্রতিটি নদীতেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আগামী দুইদিনও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের অধীকাংশ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যমুনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি স্থিতিশীল রয়েছে।’

এদিকে বিবিসি বাংলায় ‘সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে বন্যার জল’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-বরাক নদীর উপত্যকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আসামের সংবাদমাধ্যম বলছে, এপর্যন্ত বন্যায় মোট ৩০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে।গত চার দিনে ধরে ভারী বর্ষণের ফলে আসামের ১৫টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।এই জেলাগুলোর ১১০০ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় আশ্রয় শিবিরে জায়গা নিয়েছেন প্রায় ১৮০০০ মানুষ।

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি এবং সদর উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি, শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি, চৌহালী উপজেলার ৭টি, বেলকুচি উপজেলার ৬টি এবং কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ মোট ৪৮টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া হাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলচতল, ঢেকুরিয়া, শ্রীপুর, সুতানারা, মলি­কপাড়া, বদুয়ারপাড়া, দাদবোরা, খিরাইকান্দি, খাসরাজবাড়ি, ভেটুয়া, বাঁশজান, ভাঙ্গারছেদ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট ভারত খুলে দেয়ায় প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। এতে ভাসছে তিস্তাপাড়ের লালমনিরহাট। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে এখন বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। পানিতে পাটগ্রামে অবস্থিত বহুল আলোচিত বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতিবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নসহ পাঁচ উপজেলার চর এলাকাগুলোর ১৮টি গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজ তলাসহ সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।

আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অবনতি হওয়ায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। জেলার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৯ সেন্টিমিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এমএবি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :