শাপলায় নির্বাহ হচ্ছে শত শত পরিবারের জীবিকা

জাতীয় ফুল শাপলা। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তরকারি হিসেবে এটি খেতেও সুস্বাদু। কেউ খায় শখ করে, আবার কেউ খায় অভাবে পড়ে। অভাবগ্রস্ত বা নিতান্ত গরিব লোকজন এ বর্ষা মৌসুমে জমি থেকে শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি বা ভর্তা করে খেয়ে থাকে। আর শহরে লোকজন শখের বসে এ মৌসুমে ২-৪ দিন শাপলা তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন।

সেই জীবন্ত শাপলা বিক্রি করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত পরিবার। কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।

কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।

এ বর্ষায় সিরাজদিখান উপজেলার ডুবে যাওয়া বিভিন্ন ইরি, আমন ধান ও পাট ক্ষেতে শাপলা ব্যাপকভাবে জন্মিয়েছে। এছাড়াও এলাকার ইছামতি খালের বিলের পানিতেও শাপলা ফুল ফুটেছে সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য নিয়ে।

শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে তেমন বেশি পাওয়া যায় না। এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী কৃষকেরা ভোরবেলা থেকে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং শেষ করে দুপুরের দিকে।

লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী তাজের ইসলাম (৪৫) ঢাকাটাইমসকে জানান, এ সময়ে একেকজনে কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মোঠা (৬০ পিস শাপলায় এক মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করে। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ, নিমতলা ও তালতলায় শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা কিনে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে।

উপজেলার দানিয়াপাড়া গ্রামের পাইকার চান মিয়া শিকদার ঢাকাটাইমসকে জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা কিনে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ১৫ টাকা দরে কিনে। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে তিন টাকা, লেবার এক টাকা, আড়ৎদাড়ি খরচ দুই টাকাসহ মোট ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়ৎ এ শাপলা বিক্রি করে ২৫ থেকে ২৭ টাকা করে মোঠা।

শাপলা তরকারি হিসাবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)