ঢাকা-৭: বিএনপিতে পিন্টুর বিকল্প কে?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪১ | প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০১৭, ০৭:৫৭

পুরান ঢাকার রাজনীতিতে নিজের পাশাপাশি বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু। কিন্তু মামলা-মোকদ্দমার কাছে পরাস্ত হতে হয় তাকে। বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর পর তার নির্বাচনী এলাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে পিন্টু বলয়ের রাজনীতি। পিন্টুর শূন্যতা পূরণে পারিবারিক চেষ্টার পাশাপাশি তার বিকল্প হিসেবে দলের কেউ কেউ নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তাদের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল।

পিন্টুর পরিবারের ভেতর থেকে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। তিনি পরিচিত ঢাকা-৭ আসনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন বলে আলোচনা আছে এলাকায়। পাশাপাশি আলোচনা আছে, পিন্টুর পরিবারের বাইরেও বিএনপির একাধিক নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। বেশি আলোচনায় আছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল।

ঢাকাটাইমসকে রাসেল বলেন, ‘দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই মেনে নেব। কারণ আমরা তো বিএনপির গড়া কর্মী।’

পিন্টুর ছোট ভাই নাসিমউদ্দিন আহম্মেদ রিন্টুও নির্বাচন করতে চান বলে গুঞ্জন আছে।

১৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনে লালবাগ-চকবাজারের পুরো অংশ এবং বংশালের ৩টি ওয়ার্ড ও কোতোয়ালির ১টি ওয়ার্ড রয়েছে।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ছিলেন পিন্টু। তার বাবা মরহুম হাজি নিজামউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আশির দশকের শেষভাগে পিন্টুর রাজনীতি শুরু। ছাত্রদলের লালবাগ থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও ঢাকা মহানগরের সভাপতির পর ১৯৯৯ সালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৮ (বর্তমান ঢাকা-৭) আসনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা হাজি মোহাম্মদ সেলিমকে পরাজিত করে পিন্টু তার প্রভাবের জানান দিতে সক্ষম হন।

২০০৯ সালে আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় রায়ে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া পিন্টু ২০১৫ সালের ৩ মে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মারা যান। বলা হয়ে থাকে, তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঢাকার রাজনীতিতে পিন্টু অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

পিন্টুর মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন তার স্ত্রী কল্পনা। অন্যদিকে তার ছোট ভাই রিন্টুও ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে শূন্যস্থান পূরণ করতে জোর চেষ্টা শুরু করেন। রিন্টু একসময় ঢাকা মহানগর জাসদ-ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বড় ভাইয়ের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

পিন্টুর স্ত্রী ২০০২ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সংরক্ষিত ১৯ নম্বর মহিলা ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। তাই আগে থেকেই পিন্টুর এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। গত বছর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত কমিটিতে তিনি নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সবশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে তাকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে।

বর্তমানে কানাডায় ছেলের কাছে অবস্থান করছেন নাসিমা আক্তার কল্পনা। তাই তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পিন্টুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, দল নির্বাচন করলে ঢাকা-৭ আসনে পিন্টুর পরিবার থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে এ ব্যাপারে তারা শতভাগ আশাবাদী। সে ক্ষেত্রে তার স্ত্রীর সম্ভাবনাই বেশি। তিনি নিজেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।

লালবাগ থানা বিএনপির সাবেক এক নেতা (পিন্টুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত) নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইসকে বলেন, ‘পিন্টু ভাই বেঁচে থাকলে তার বিকল্প ভাবার সুযোগ ছিল না। এখন কল্পনা ভাবির বিকল্পও আমরা ভাবছি না। আশা করি দলও ভাববে না। তবে যতটুকু জানি, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তারা যাবেন না।’

২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও পিন্টু স্মৃতি সংসদের সভাপতি সাঈদ হোসেন সোহেল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা পিন্টু ভাইয়ের হাতে গড়া কর্মী। সবাই মামলা-মোকদ্দমায় জজর্রিত। পিন্টু ভাই যখন জেলে ছিলেন, তখন ভাবি সবার খোঁজ নিয়েছেন। আদালতের বারান্দায় আমাদের জামিন করানোর জন্য ছোটাছুটি করেছেন। আর পিন্টু ভাই এমপি নির্বাচন করেছেন ঠিকই, কিন্তু ডোর টু ডোর ওয়ার্ক করেছেন ভাবী। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে গাড়ি পোড়ানোর মামলাও হয়েছে। তাই এ আসনে কল্পনা ভাবির বিকল্প দেখি না, আমরা ভাবতেও চাই না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাঈদ হোসেন বলেন, নির্বাচন করার ব্যাপারে তার (কল্পনা) মনোভাব আছে। তবে চেয়ারপারসন যা সিদ্ধান্ত দেবে তিনি তা মেনে নেবেন।

এদিকে কল্পনার ভাই মশিউর রহমান দীপু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী হিসেবে কল্পনার ওপর দল, পিন্টুর সমর্থক ও এলাকাবাসীর আস্থা আছে। আশা করি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’

এদিকে পুরান ঢাকার নেতাকর্মীদের অনেকে পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে চান। এমন কয়েকজন নেতা নিজস্ব বলয় তৈরি করে এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন বলেও জানা গেছে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল জোর চেষ্টা করছেন এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে। ছাত্রদলের ওয়ার্ড পর‌্যায় থেকে রাজনীতি শুরু করে লালবাগ থানা, পরবর্তী সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে স্থান পান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটিতে। ছাত্ররাজনীতিতে সবশেষ ২০১০ সালের পূর্ণাঙ্গ কমিটির (টুকু-আলিম) সহসভাপতি ছিলেন রাসেল।

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে নির্বাচন করে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন রাসেল। ২০১৭ সালে ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হয় তাকে। সবশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকবাজার থানা বিএনপির এক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আদি ঢাকার মানুষ যারা, তারা স্থানীয় কাউকে প্রার্থী হিসেবে চায়। রাসেলের পূর্বপুরুষ ঢাকার মানুষ। ব্যক্তি হিসেবেও তার কোনো বদনাম নাই। পিন্টু ভাই বেঁচে নেই, তাই দল তাকে মনোনয়ন দিলে রেজাল্ট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

নিজেকে আদি ঢাকার বাসিন্দা বলে গর্ব করেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকে আমার জীবনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। তাই তিনি আত্মবিশ্বাসী দল তাকে মনোনয়ন দেবে।

সবার দোয়া ও ভালোবাসায় এই পর‌্যন্ত এসেছেন জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘মাত্র ২৫ দিন সময় পেয়েছিলাম। তার মধ্যে নির্বাচন করে কমিশনার হয়েছি। আমার পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। আমরা আদি ঢাকার মানুষ। দল যদি মনোনয়ন দেয় নির্বাচন করতে আগ্রহী। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’

পিন্টুর পরিবার থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছে, এর মধ্যে তাকে দল বেছে নেবে কি না- এমন প্রশ্নে রাসেল বলেন, ‘পিন্টু ভাই আমার রাজনৈতিক বড় ভাই। আমরা কাজ করে তাকে এমপি বানিয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে আমি নির্বাচন করার কথা বলতাম না।’ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলেও জানান তিনি।

এই আসন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন খোকন (কালা খোকন), ব্যবসায়ী নেতা ও আরেক সহসভাপতি আবু মোতালেবও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

ভোটের মাঠ থেকে স্বজনদের সরাতে পারেননি আ’লীগের মন্ত্রী-এমপিরা

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :