ত্রাণের আশায় উত্তরের বানভাসি লাখো মানুষ

প্রতীক ওমর, উত্তরাঞ্চল ঘুরে
| আপডেট : ১২ জুলাই ২০১৭, ১৮:৫৮ | প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০১৭, ০৯:২৮

বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল এবং ভারত তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেইট খুলে দেয়ায় যমুনা নদীর পানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

উত্তরের জেলাগুলো ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকার বানভাসি মানুষ ত্রাণের জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। অনেক এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেড়েছে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ ব্যাধি। বন্যার পানি স্কুলে ঢুকে পড়ায় বগুড়ায় ৭০, গাইবান্ধায় ৫১ সহ গোটা উত্তরাঞ্চলে আড়াই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদান বন্ধ আছে। এসব এলাকায় মানুষের পাশাপাশি লাখ লাখ গবাদিপশুও খাদ্য সংকটে পড়েছে। পানির নিচে নষ্ট হওয়ার পথে বিভিন্ন সফল।

এদিকে ২৪ ঘন্টায় বগুড়ায় বৃষ্টি রেকর্ড হয় ৪৪.২ সেন্টিমিটার। ফলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বগুড়ার বন্যা দুর্গত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা ও কর্ণিবাড়ি, সোনাতলা উপজেলার মধুপর, তেকানি চুকাইনগর, পাকুল্লা, ধুনটের ভান্ডারবাড়ী, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন। তিন উপজেলার এসব ইউনিয়নগুলোর দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় নতুন করে নিম্নাঞ্চলগুলোর লোকালায়ে পানি ঢুকতে। এতে গৃহহারার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্গত পরিবারগুলো বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে বন্যার্তরা।

এদিকে লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করার কারণে বিশুদ্ধ পানি, খাবার এবং তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়েছে বন্যার্তরা।

সারিয়াকান্দি উপজেলার ধলিরকান্দি পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া সাহেব আলী (৬২), আসাদ প্রামাণিক (৬৪), মনেজা বেগম (৫০), গোলাপী বেগম (৭০) ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদের থাকার ঘরে এখন কোমরপানি। টিউবওয়েল পুরোটাই পানির নিচে। ঘরের পালিত চারটি গরু ও আটটি ছাগল নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকট তাদের চিন্তিত করে তুলেছে। তারা অভিযোগ করেন, ত্রাণের কোনো প্যাকেট এখন পর্যন্ত তাদের হাতে পৌঁছেনি।

এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা নিয়েছে ডায়েরিয়াসহ পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা বেশি। খাবার স্যালাইন এবং বিশুদ্ধ পানি সংকট এসব বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।

অপর দিকে তিন উপজেলায় বিভিন্ন ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ২০ হাজারের বেশি কৃষক পরিবার। বন্যার পানির নিচে ডুবে গেছে রোপা আমন, আউশ, বীজতলা, পাট, মরিচ এবং শাকসবজির ক্ষেত।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে সারিয়াকান্দি তিন হাজার ৫০০ হেক্টর, সোনাতলা ৮২৫ হেক্টর, ধুনট ১৯০ হেক্টর, উপজেলায় তিন উপজেলার ২০ হাজার ৫০ কৃষকের চার হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির ফসল বর্তমানে পানি নিচে ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের মতে পানি দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করলে ডুবে যাওয়া জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে এসব এলাকায় চাষকৃত পাট পানির নিচে পচে নষ্ট হওয়ার আশংকায় সময়ের অনেক আগেই বাধ্য হয়ে কাটছে কৃষকরা। এতে এবারের পাটের লক্ষমাত্র আর্জন কঠিন হয়ে পরবে। কাঁচা মরিচসহ সবজির সংকটও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশংঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সাহা ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যা কবলিত তিন উপজেলার ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পানি কত দিন অবস্থান করবে তার ওপর নির্ভর করবে ক্ষতির পরিমাণ। কৃষি অফিস বন্যাদুর্গত এলাকায় কৃষকদের এখন কী করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বাঁধে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু মানবেতর জীবন যাপন করছে। টানা বৃষ্টির কারণে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দামি জিনিষপত্র। শুকনা জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানির সংকট এসব এলাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। অনেকেই অভিযোগ করেছেন তাদের হাতে এখনো কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন ঢাকাটাইমসকে জানান, উত্তরাঞ্চলের আরও দুই দিন টানা বর্ষণ হতে পারে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন ঢাকাটাইমসকে জানান, যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও বাঁধ যাতে ভেঙে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :