অনাথ হাবিবার বিয়েতে আইনমন্ত্রীর গহনা, এমপির ঘর

মোহাম্মদ আরজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
 | প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০১৭, ১৫:০২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের কন্যা হাবিবা। শিশু পরিবারে কেটেছে তার ১০টি বছর। বয়স এখন ১৮ বছর। তাই শিশু পরিবারে আর ঠাঁই হবে না হাবিবার।

শুক্রবার বিয়ে হতে যাচ্ছে হাবিবার। শুধু বিয়েই নয় এর আগে এই বিয়েকে ঘিরে হবু স্বামীর চাকরিও হয়েছে পুলিশে। ধুমধামে এ বিয়ের আয়োজন করেছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

অনাথ হলেও হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুর রহমান।

এই বিয়ে অনুষ্ঠানের মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। ইতিমধ্যে বিয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি।

জানা যায়, ১০ বছর আগে ‘অনাথ শিশু’ হিসেবে হাবিবার ঠাঁই হয় সরকারি শিশু পরিবারে। হাবিবার বতর্মান বয়স ১৮ বছর। শিশু পরিবারের নীতিমালা অনুযায়ী তাকে সে জায়গাতে আর থাকা হবে না। তাই ডাকা হলো হাবিবার মামা আর মামিকে। মামা-মামির হাতে হাবিবাকে তুলে দেয়ার সময় সূচনা হলো নতুন এক অধ্যায়। শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরার আচঁল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন হাবিবা। তখন রওশনারাকে বিচলিত ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। পেছনে দিকে তাকিয়ে একবার দেখলেন হাবিবাকে।

এরপর রওশনারা শিশু পরিবারের পরিচালনা কমিটিকে জানালেন হাবিবার পুনর্বাসনের কথা। পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হলো হাবিবা আপাতত শিশু পরিবারেই থাকবে। তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

এরপর থেকেই হাবিবার পুনর্বাসনের নানা চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে মমতাময়ী রওশন আরার। কিন্তু কোনো চেষ্টাই যেন সফলতা আসেনি। শেষ পর্যন্ত কথা বলেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। ভালো ছেলের সন্ধান পেলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ারও অনুরোধ জানান রওশনারা। আলোচনার পর রওশনারা পুলিশ সুপারের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে ফিরেন শিশু পরিবারে। এক পর্যায় পাত্রের সন্ধান মিলে। হাবিবার মামা-মামির সঙ্গে কথা বলে বিয়ের বিষয়টি পাকাপোক্ত করা হয়। হাবিবার জন্য ঠিক করা পাত্রের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করলেন পুলিশ সুপার। পরবর্তী সময়ে পুলিশ সুপার নিজেই হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন।

হাবিবার হবু স্বামী জেলার কসবা উপজলোর সোনারগাঁও গ্রামের মো. জাকারিয়া আলম। সম্প্রতি পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দিয়েছেন তিনি।

আয়োজকদের মধ্যে থেকে জানা গেছে, ইতিমধ্যে হাবিবার বিয়ের দাওয়াত কার্ড ছাপানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারি শিশু পরিবারে হাবিবার গায়ে হলুদ। পরদিন ১৪ জুলাই দুপুরে হবে বিয়ে অনুষ্ঠান। এ্ বিয়ে অনুষ্ঠানকে সফল করতে ইতিমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পুলিশ সুপার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েক দফ মিটিং হয়েছে। এ বিয়ে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হবে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার তিন শতাধিক ব্যক্তিকে। হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের ঘাটতি রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

প্রশাসনের কর্মতাসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই বিয়েতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হাবিবাকে দেবেন এক সেট গহনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নব-দম্পত্তি বসবাসের জন্য বরের বাড়িতে নির্মাণ করে দেবেন একটি ঘর। জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুল রহমান উপহার দেবেন সোনার চেইন, বিয়ের শেরোয়ানি, পাগড়ি, নাগরা ও কালার টেলিভিশন। পুলিশ সুপারের সহধর্মনী দেবেন বিয়ের শাড়ি ও গহনা। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে হাবিবার বিয়েতে উপহার দেবেন স্টিলের আলমারি এবং সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা হাবিবাকে দেবেন একটি সেলাই মেশিন। আর অতিথি আপ্যায়ন এবং যাবতীয় খরচ বহন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

এ ব্যাপারে বিয়ে অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, হাবিবার বিয়েটি যেন সমাজে দৃষ্টান্ত হয়। সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যেন হাবিবার মতো অনাথ মেয়েদের বিয়েতে এগিয়ে আসেন। এই বিয়ে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ার ঢাকাটাইমসকে বলেন, হাবিবার জন্য শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা যে ভূমিকা রেখেছেন তা অতুলনীয়। হাবিবার হবু স্বামীকে এনে গত ১০ বছরের প্রশ্নপত্রের মূল্যায়নের মাধ্যমে পুলিশের চাকরির পরীক্ষার জন্য তৈরি করেছেন। পুলিশ সুপার কথা অনুযায়ী সেই বরের চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। এখন জাঁকজমকপূর্ণ এই বিয়ে আয়োজনের ব্যয়ও বহন করছেন তিনি। সব মিলিয়ে বিয়ের বিষয়টি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আলোচিত এই বিয়ে অনুষ্ঠানের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ও শিশু পরিবারের জন্য নিবেদিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। আগামী ১৩ জুলাই শিশু পরিবারে হাবিবার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হবে। এতে জেলা প্রশাসক. পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। পরদিন ১৪ জুলাই দুপুরে শিশু পরিবারের বরযাত্রী আগমনের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় বিয়ে পড়ানো হবে। জুমা নামাজের পর শুরু হবে খাওয়া দাওয়া। বিকালে নব-দম্পত্তিসহ বর পক্ষের অতিথিরা পুলিশ সুপারের বাসভবন থেকে আপ্যায়ন শেষে হাবিবার শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়া হবেন।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :