যৌথ প্রযোজনার পক্ষে-বিপক্ষে: পর্ব-৪
বিনিময়ে কী সমতা আছে?
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় এর সদস্য যেকোনো দেশের চলচ্চিত্র আসতে পারে বাংলাদেশে। বিনিময়ে যাবে আমাদের ছবি। এর আওতায় অধুনা আসছে ভারতের ছবি। হিন্দি ছবি কালেভদ্রে। হালে বেশিরভাগ আসছে কলকাতার বাংলা ছবি। কিন্তু ঢাকার ছবি কী সেভাবে ওপারে যাচ্ছে? বিনিময়ে যে সমতা সেভাবে নেই, আইনের সুযোগ নিচ্ছেন আমাদের কিছু পরিবেশক-প্রদর্শক, তার প্রমাণ তো হাতের কাছেই। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কলকাতার নায়ক দেবের সিনেমা ‘চ্যাম্প’। আর বিনিময়ে ওপার বাংলায় যাচ্ছে কাজী মারুফ ও মৌসুমী হামিদ অভিনীত বাংলাদেশের ‘মাস্তানি’।
কলকাতার সিনেমাটি নতুন, অথচ ঢাকার সিনেমাটি গত বছর মুক্তি পাওয়া। ‘চ্যাম্প’ বিগ বাজেট এবং বিশাল পরিসরের ছবি। আর ‘মাস্তানি’ একটি গড়পড়তা সিনেমা। কেবল নিয়মরক্ষার জন্য যে ছবিটির কলকাতা-যাত্রা তা যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবে। বিনিময়ের এই অসমতায় বিস্মিত চিত্রনায়ক ওমর সানী। মনের কষ্ট থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। এটি তিনি ফেসবুকে ৫ জুলাই রাতে প্রকাশ করেছেন।
সাফটা চুক্তি বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে ওমর সানী প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন, ‘সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্তই আমাদের মানতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের মতামতের গুরুত্ব ও মর্যাদা আপনি সব সময়ই দিয়ে থাকেন। আমি আপনার কাছে সাফটা চুক্তির কথা বলছি। সার্ক দেশের নিয়ম অনুসারে এক দেশের ছবি আরেক দেশে চলবেÑ এ আইন রয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্রের সময়টা বর্তমানে খুবই খারাপ। তাই আপনার কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি সাফটা চুক্তি বাতিলের।’
তবে সাফটা অনুযায়ী, ভারতের ছবি এদেশে আনতে ইচ্ছুক পরিবেশক, প্রদর্শক ও প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা। এ প্রসঙ্গে মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী নওশাদ উদ্দীন ইফতেখার বলেন, ‘দেশে ছবির নির্মাণ সংখ্যা কমে গেছে। কমেছে প্রযোজক। গুণী নির্মাতা, জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীও সীমিত। শাকিব খান অভিনীত ছবি ছাড়া অন্য শিল্পীর ছবিতে দর্শক অনেক কম থাকে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে আমরা ভারতীয় ছবির দিকে ঝুঁকছি। সাফটা চুক্তির আওতায় বৈধভাবেই বাংলাদেশের একটি ছবি ভারতে প্রদর্শিত হবে এবং সেদেশের ছবি এদেশে প্রদর্শিত হবে। কিন্তু ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি মহল অযৌক্তিকভাবে বিরোধিতা করছে।’
তবে দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় অযৌক্তিক কিছু থাকলে তা গ্রহণ করতে রাজি নন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। এ প্রসঙ্গে তার মত হচ্ছে, ‘যৌথ প্রযোজনা করলে সঠিকভাবে করতে হবে। বিশেষ করে এখানকার এবং ওপারের দর্শকের পছন্দের কথা মাথায় রাখতে হবে। সঠিকভাবে কলাকুশলী নিতে হবে। কলকাতার আর্টিস্টদের নাটক, গান, সিনেমা সবই আমরা দেখছি। তাদের দর্শক এক নামে চিনছে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক শিল্পী থাকা সত্ত্বেও তারা তেমনভাবে চিনছে না।’
মৌসুমী মনে করছেন, আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান পরিচালক বা শিল্পী আছেন। কাজ করেই তাদের জায়গা করে নিতে হবে। তাহলেই ঢালিউডে সার্থকতা আসবে।
যৌথ প্রযোজনা বলুন, আর বিনিময় বলুন, সবকিছুতে সমতা অবশ্যই থাকতে হবে। তবে সৃজনের প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে যদি কম-বেশি থাকে, সেটা মেনে নেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে সবার মধ্যে। এমনটি হলেই কেবল মঙ্গল হবে দেশি চলচ্চিত্রের, জগতের সকল চলচ্চিত্রের।
তায়েব মিল্লাত হোসেন: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
পর্ব-৫ আগামীকাল: হঠাৎ বৃষ্টির আগে এবং পরে