মাদারীপুরের আট হলের চারটিই বন্ধ

এইচ এম মিলন, কালকিনি থেকে
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৭, ১০:২৩

অস্তিত্ব সংকটে মাদারীপুর জেলার সিনেমা হলগুলো। জেলার আটটি সিনেমা হলের মধ্যে চারটি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোর বন্ধের পথে। বন্ধ হওয়া সিনেমা হলগুলো ভেঙে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন। একে একে হলগুলো বন্ধ হওয়ায় বড় পর্দায় দেশীয় চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে এই জেলার বিনোদনপ্রেমী মানুষরা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মাদারীপুর জেলা সদরে মিলন ও বাদামতলা, কালকিনি উপজেলায় স্বজন ও সুরভী, রাজৈর উপজেলায় মহুয়া ও প্রতিভা, শিবচড় উপজেলায় পলাশী ও সুরভী নামে মোট আটটি সিনেমা হল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাদারীপুর জেলা সদরে মিলন ও বাদামতলা নামে দুটি সিনেমা হল রয়েছে। তবে বর্তমানে ওই সিনেমা হল দুটি চলছে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে।

কালকিনি উপজেলায় দুটি সিনেমা হলে দর্শকশুন্য হওয়ায় অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। রাজৈর উপজেলার মধ্যে প্রতিভা সিনেমা হলটি নামে মাত্র চললে ও মহুয়া সিনেমা হলটি লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। শিবচর উপজেলার দুটি সিনেমা হলের মধ্যে একটি কোনমতে চললেও অন্যটি নাজুক অবস্থায় বন্ধের পথে রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলোর জায়গায় করা হয়েছে লাকড়ির গোডাউন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

সিনেমা হলগুলোতে কর্মরত অনেকেই জানান, দর্শক না হওয়ায় ও অশ্লীল চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হওয়ায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন হল মালিকরা। আর সিনেমা হলের শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে জীবিকার প্রয়োজনে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তবে মানুষ এই যুগে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় বিনোদনমূলক সব অনুষ্ঠান দেখতে পান। এ কারণে জেলায় যে দুটি হল এখনো রয়েছে সেগুলোও যে কোনো মুহুর্তে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।

কালকিনি উপজেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া সুরভী সিনেমা হলের ম্যানেজার আহচান বলেন, মানসম্মত ও রুচিশীল ছবির অভাবে সিনেমা হলে আসতে চায় না দর্শকরা। এ ছাড়া পাইরেসি ও অশ্লীলতাও একটি কারণ। এক সময় পরিবার নিয়ে সবাই সিনেমা দেখতে আসতো। কিন্তু এখন আর কেউ পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসে না।

তিনি আরও বলেন, সিনেমা হলে নতুন ছবি মুক্তি পেলে মনে হতো ঈদের খুশি নেমে এসেছে। নতুন সিনেমা প্রদর্শনের পূর্বে পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে যেত বাস টার্মিনাল, রাস্তার পাশের দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি ও চায়ের দোকানসহ বিভিন্নস্থান। এ ছাড়া শহর গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে প্রচারে মুখর থাকত। যা আজ শুধুই স্মৃতি।

সিনেমাপ্রেমী জালাল উদ্দিন, শামীম ও আসাদ বলেন, আমরা আগে পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে গিয়ে কত আনন্দ করতাম। এখন আর সিনেমা হলে ছবি দেখতে যাই না। কারণ আগের সেই সামাজিক পরিবেশ ছবিতে নেই।

সাংস্কৃতিক কর্মী সালাহউদ্দিন মাহমুদ ও বেনজির আহম্মেদ মামুন বলেন, সিনেমা হলে ছবি না দেখতে যাওয়ার কারণ হলো অশ্লীলতা ও ভালো সামাজিক ছবি প্রদর্শন না করা। এতে করে হলে দর্শক কম হচ্ছে এবং হলগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দর্শকদের চাহিদা মোতাবেক যে ছবি নির্মাণ করার দরকার এখন তা হচ্ছে না। এ ছাড়া মানুষ নেটে সব কিছুই পাচ্ছে। তাই দর্শক না হওয়ায় হল মালিকরা সিনেমা হলগুলো বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :