বাঁধে আশ্রয়ে টাকা, বানভাসীদের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা

প্রতীক ওমর, বগুড়া
| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৭, ২০:১৩ | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৭, ১৯:৪৪

বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। যমুনার সারিয়াকান্দি এবং ধুনট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় না বাড়লেও দুর্ভোগ কমেনি। দুর্গত এলাকার মানুষ ত্রাণের আশায় এখনো বাঁধে বসে আছে। সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্তরা উপায় না পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয়ের জন্য ছুটে এসেছে। বাড়ির আসবাবপত্র প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাঁধেও জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে দুর্গতরা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকা ছাড়া বাঁধে ঘর বাঁধতে দিচ্ছে না।

চলতি বন্যায় বগুড়ার তিন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। দিন দিন বাড়ছে বানভাসী মানুষের সংখ্যা। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নদী গর্ভে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে যমুনা তীরবাসী।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা ও কর্ণিবাড়ি, সোনাতলা উপজেলার মধুপুর, তেকানি চুকাইনগর, পাকুল্লা, ধুনটের ভাণ্ডারবাড়ী, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন বন্যাকবলিত এলাকায় পরিণত হয়েছে।

তিন উপজেলার এসব ইউনিয়নগুলোর পঁচিশ হাজার পরিবার ইতোমধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকায় নিম্নাঞ্চলগুলোর লোকালায়ে এখনো পানি প্রবেশ করছে। এতে গৃহহারার সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরে পানি প্রবেশের কারণে দুর্গত পরিবারগুলো বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে। বাঁধে এসেও বাঁধার মুখোমুখি হচ্ছে এসব মানুষ।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকা ছাড়া বাঁধে ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। বাঁধে ঘর তুলতে না পারা মানুষদের অভিযোগ, ১০ থেকে ১২ হাত জায়গায় ঘর তুলতে প্রভাবশালীদের দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

টাকা দিতে না পারায় অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে। অনেকেই নিজের বাড়ির কোমর পানিতেই অবস্থান করছে।

এসব এলাকার বানভাসী মানুষ থাকার জায়গা না পাওয়ার পাশাপশি খাদ্য, বিশুদ্ধপানি এবং তীব্র জ্বালানি সংকটে দিন পার করছে। সামান্য ত্রাণসামগ্রী এসব এলাকায় দিলেও বেশির ভাগ মানুষের ঘরে পৌঁছেনি ত্রাণের প্যাকেট।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বানভাসীদের কষ্টের কথা বললেও টাকার বিনিময়ে বাঁধে ঘর তোলার বিষয়টি তিনি জানেন না। এমন অভিযোগ কেউ তার কাছে করেনি।

সারিয়াকান্দি উপজেলার ধলিরকান্দি পুরাতন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া মরিয়ম বেওয়া, সাজেদা বেওয়া, ফজল হক অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল টাকা ছাড়া কাউকে বাঁধে ঘর তুলতে দেয়নি।

তারা আরো অভিযোগ করেন, ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ওই মহলটি বানভাসীদের থেকে জোর করে আদায় করেছে। তারা এখন পর্যন্ত ত্রাণের কোন প্যাকেটও পায়নি বলে জানান।

সরকারি হিসাব মতে, বগুড়ার তিন উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১২ জুলাই পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এই হিসাব বেসরকারিভাবে ২৫ হাজার পরিবার ছাড়িয়ে যাবে।

এসব বানভাসীরা নিজেদের সমস্যার পাশাপাশি গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও চরম বিপদে আছে। নিজেদের পেটের খাবার না জুটলেও গরু-ছাগলের খাদ্য নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এসব মানুষ।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজহার আলী মণ্ডল বলেন, বাঁধে ঘর তোলার জন্য বানভাসী মানুষের কাছে কেউ টাকা নিয়েছে এমন কোন অভিযোগ তিনি পাননি। কেউ লিখিতভাবে জানালে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা তিনি জানান।

অপর দিকে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলাম সিদ্দীক জানান, বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন। সারিয়াকান্দির বাঁধে যারা বানভাসীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে, তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ত্রাণ হিসেবে সাড়ে ৪শ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১২ লক্ষ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২৮৫ মেট্রিক জিআর চাল, নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বন্যাদুর্গত উপজেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ৭ হাজার ৮০০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য ১৩টি মেডিকেল টিমএবং ৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। দুর্গত এলাকায় ৪০টি টিউবওয়েল স্থাপন করে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে বাঁধে অস্থায়ী ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এই ত্রাণ দুর্গত মানুষের তুলনায় অনেক কম। অপর দিকে ত্রাণের চাল, নগদ টাকা এখনো অনেক পরিবারের হাতে পৌঁছেনি। বগুড়ার বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ বিপদে আশ্রয়ের জন্য বাঁধা ছাড়াই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ঘর নির্মাণের সুযোগ চায়। পাশাপাশি খাবার এবং বিশুদ্ধপানির আশায় চাতক পাখির মত চেয়ে আছে এখানকার বানভাসীরা।

বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারির জন্য অনুরোধ করেছে বাঁধের মানুষরা।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :