ফুঁসছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির পদবঞ্চিতরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০১৭, ০৯:০৮

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ঘোষিত নতুন কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা না মানা, কমবয়সীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেয়া, এক নেতার এক পদ নীতি না মানাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। আর এ নিয়ে ফুঁসছেন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

গত সোমবার ২৭৫ সদস্যবিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে বর্তমান মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাধারণ স¤পাদকের। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদকও হয়েছেন নগর বিএনপির সহসভাপতি।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময় থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির দায়িত্বে থাকা নেতারাও পদ পেয়েছেন এ কমিটিতে। এক যুগ পর কমিটি গঠন হওয়ায় সব স্তরের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে বড় পরিসরে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতারা।

নতুন কমিটিকে একটা সফলতা হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির একটি বড় সফলতার অংশ এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বর্তমান কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় সব সাংগঠনিক এলাকার প্রতিনিধি রয়েছে দাবি করে ডা. শাহাদাত বলেন, ছাত্রদল, যুবদলের বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকারীদেরও পদায়ন করা হয়েছে। এ কমিটির ৬০ শতাংশ নেতাকর্মীই নবীন। তরুণদের গুরুত্ব দিয়েই এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন কমিটির ৩০ সহসভাপতির বেশির ভাগই বিএনপির মহানগর কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তবে ১৩ জন যুগ্ম সাধারণ স¤পাদকের মধ্যে বেশির ভাগই নতুন মুখ, যারা বিভিন্ন সময় ছাত্রদল ও যুবদলের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের মধ্যে বর্তমান নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ রয়েছেন।

এ ছাড়া নগর ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক বেলায়েত বুলুকে করা হয়েছে নগর বিএনপির সদস্য। ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মাঈনুদ্দীন মো. শহীদ পেয়েছেন নগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক স¤পাদকের পদ। এ ছাড়া নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক সৈয়দ আযম উদ্দিন এবং এস কে খোদা তোতনকে করা হয়েছে নগর বিএনপির সহসভাপতি।

ঘোষিত কমিটিতে ৩০ জন সহসভাপতি, ১৩ জন যুগ্ম স¤পাদক, ৩ জন সাংগঠনিক স¤পাদক, ১৮ জন সহসাধারণ স¤পাদক, ৮ জন সহসাংগঠনিক স¤পাদক, ১১ জন সম্মানিত সদস্য, ১০৮ জন সদস্য এবং ১৫ জন উপদেষ্টাম-লীর সদস্য রয়েছেন।

অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, মহানগর বিএনপির কমিটিতে মানা হয়নি দলীয় গঠনতন্ত্র। ১৭১ জনের বেশি কমিটিতে পদায়ন করার সুযোগ না থাকলেও নতুন কমিটিতে রাখা হয়েছে ২৭৫ জনকে। বিএনপির গত জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ‘এক নেতার এক পদ’ নীতিকে দেখানো হয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুলি। ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের পদধারী সিনিয়রদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া সিনিয়র নেতাদের সদস্যপদে রেখে নবীনদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৭ সালে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন মো. মিঞা ভোলা এবং যুগ্ম স¤পাদক ছিলেন এম এ সবুর। নতুন কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে এই দুই প্রবীণ নেতার আগে সহসভাপতি করা হয়েছে এম এ আজিজ নামের এক নবীন নেতাকে।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নতুন কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার সারোয়ার তা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, কমিটিতে বিএনপির ঐতিহ্য রক্ষা হয়নি। সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়রকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক নেতার এক পদ নীতিও মানা হয়নি এ কমিটিতে।

২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। অন্য দুই শীর্ষ পদ- সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবুল হাশেম বক্কর এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। এর ১১ মাস পর সোমবার নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নতুন কমিটির সহসভাপতিরা হলেন- এম এ আজিজ, মো. মিঞা ভোলা, এস এ সবুর, কাউন্সিলর শামসুল আলম, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, মো. আলী, সৈয়দ আযম উদ্দিন, এস কে খোদা তোতন, জয়নাল আবেদীন জিয়া, নাজিমুর রহমান, মো. আলী সবুক্তগীন সিদ্দিকী মক্কী, জামাল আহমেদ, মোর্শেদ কাদরী, আশরাফ চৌধুরী, এম এ হালিম, শফিকুর রহমান স্বপন, হারুন জামান, ছৈয়দ আহমেদ, সোহরাব কো¤পানি, কমিশনার মাহবুবুল আলম, কমিশনার নাজিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূইয়া, নিয়াজ মো. খান, কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, ইকবাল চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার সারোয়ার ও এস এম আবুল ফয়েজ।

যুগ্ম স¤পাদক করা হয়েছে এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহা আলম, ইসকান্দর মির্জা, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, কমিশনার আবুল হাশেম, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু এবং বর্তমান নগর ছাত্রদল সভাপতি গাজী মো. সিরাজ উল্লাহকে।

কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ শিহাব উদ্দিন আলম। দপ্তর স¤পাদক করা হয়েছে টিংকু দাশকে। এ ছাড়া সাংগঠনিক স¤পাদক করা হয় মনজুরুল আলম (মনজু), কামরুল ইসলাম ও হাজী মো. তৈয়বকে।

মহানগর বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ২০০৫ সালে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এর ১২ বছর পর সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখে।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :