যমুনার পর এবার ধলেশ্বরীতে ভাঙন

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৭, ১৬:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল

যমুনায় তীব্র ভাঙনের পর এবার শুরু হয়েছে ধলেশ্বরীতে ভাঙন। শুরুতে যমুনার ভূঞাপুরে বেশ কিছু এলাকা ও টাঙ্গাইল সদরের মাহমুদনগর এলাকার কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে যায়। যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও দেলদুয়ার এলাকার ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নাগরপুর উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া বাজারের কমপক্ষে ৩৭টি দোকান ঘর, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চারটি মন্দির ও শশ্মানসহ অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু আবাদি জমি ও গাছপালা ইতোমধ্যে ধলেশ্বরী নদীর গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পোস্ট অফিসসহ দুই শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকার এসব লোকজন আতঙ্কে এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় বাড়িঘর, আসবাবপত্র ও গবাদি পশুসহ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। প্রতি বছর ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে মোকনা ইউনিয়নের কেদারপুর আগদিঘুলিয়ার বিস্ত্রীর্ণ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়লেও ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোবিন্দপুর, ঘুনি পংবরটিয়া, মোকনা, কেদারপুর, আগদিঘুলিয়া গ্রামে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙন কবলিত এলাকার শত শত একর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকা কেদারপুর আগদিঘুলিয়া গ্রামের ভিটেমাটি হারা মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। তড়িঘরি করে তারা গাছ বাঁশ কেটে নিচ্ছে।

মোকনা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান খান ঢাকাটাইমসকে জানান, ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে নতুন করে পাঁচটি গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আগদিঘুলিয়া বাজার, সাধন একাডেমি, চারটি কালীমন্দির, একটি শশ্মান এবং শত শত একর আবাদী জমি। হুমকির মুখে পড়েছে বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি পোস্ট অফিসসহ দুই শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে সরকারি বেসররকারি স্থাপনাসহ দুই শতাধিক বসতবাড়ি।

সাধন একাডেমির পরিচালক অরুন চৌধুরী জানান, ৫৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে তার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। অপর ক্ষতিগ্রস্ত আনন্দ সাহা জানান, তার চারটি দোকান ঘরসহ বসতবাড়ি হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

আগদিঘুলিয়া গ্রামের কানাই মন্ডল, সুবল মন্ডল, রতন মন্ডল, অন্তর মন্ডল, বংশি সাহা, নারায়ন সাহা ও হুটু শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এখন পর্যন্ত সরকারি এমনকি বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা আমরা পাইনি।

এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম এমপি শুক্রবার মোকনা ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পূলক কান্তি ক্রবর্তী সাথে বলেন, চলতি মাসের সমন্বয় সভায় আলোচনা করে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।   

এদিকে দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন এলাকার গাছ কুমুল্লী, লাউহাটীর পাচুটিয়া, আটিয়ার গড়াসিন ও দেওলীর ধলেশ্বরী সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রশাসনসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম এমপি।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির জানান, নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)