দাবিতে অনড় জাবির অনশনকারীরা

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৭, ১৯:২৯

জাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন আরও তিন শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অনশনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা আটজনে দাঁড়ালো। এদের মধ্যে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে আজ সোমবার ‘প্রতিবাদের নামে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যনারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে  চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

আজ দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাব্য কৃত্তিকা।

লিখিত বক্তব্যে কাব্য কৃত্তিকা বলেন, প্রশাসন অনশন তুলে নিতে বলেছেন এবং বলেছেন উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় যদি শিক্ষার্থীরা অনুশোচনা প্রকাশ করে তাহলেই কেবল মামলা প্রত্যাহার করা হবে। যে প্রশাসন এতোদিন বলে আসলো তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই মামলা প্রত্যাহার করার তারাই আজকে বলছেন অনুশোচনা প্রকাশ করলে মামলা প্রত্যাহার করা হবে! যারা মিথ্যা হত্যাচেষ্টা ও রাষ্ট্রদ্্েরাহ মামলা দিয়েছেন তাদের নিজেদেরই মিথ্যাচারের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করা উচিত।

৫৬ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার কারণে যদি বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয় তার জন্য দায়ী থাকবে অভিভাবকের আসনে থাকা গুণাবলীহীন প্রশাসন।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবি গুলো মধ্যে রয়েছে-
ক.    দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।
খ.    অনশন চলাকালীন সময়ে তদন্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নৃ- বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাশেদা আখতার শিক্ষার্থীদের শাস্তি দাবি করে মিছিল করেছেন, তাই এ তদন্ত কমিটি বাতিল করতে হবে।
গ.    পুলিশি হামলার বিচার করতে হবে।
ঘ.    যে সাত দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল তা পূরণ করতে হবে।    

এদিকে, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে আরও তিন জন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দিয়েছেন। তারা হলেন- নৃ- বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রাতুল খালেদ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৫ তম আবতর্তনের শিক্ষার্থী তাসনুভা তাজিন ইভা এবং বাংলা বিভাগের ৪২ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম মিশু।

অনশনকারী অপর পাঁচ জন শিক্ষার্থী হলেন দর্শন বিভাগের ৪৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রুদ্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০ তম আবর্তনের পূজা বিশ্বাস ও ইংরেজি বিভাগের ৪২ তম আবর্তনের সর্দার জাহিদ, একই বিভাগের ৪২ তম আবর্তনের তাহমিনা জাহান তুলি ও আইন ও বিচার বিভাগের ৪৩ তম আবর্তনের খান মুনতাসির আরমান।

জাহিদ, পূজা ও ইভার বিরোদ্ধে মামলা থাকলেও অপর পাঁচ জনের বিরোদ্ধে কোন মামলা নেই।
‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা গেছে, অনশনের দুই দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো কর্তাব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হননি বা তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগও করেননি।

অনশনকারীদের তিনজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল রাতে অনশনরত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০ তম আবর্তনের পূজা বিশ্বাস, ইংরেজি বিভাগের ৪২ তম আবর্তনের সর্দার জাহিদ ও একই বিভাগের ৪২ তম আবর্তনের তাহমিনা জাহান তুলি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তাদেরকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

জাবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অনশনকারী সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে জাহিদ ও পূজার শারিরীক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রথম দিন থেকেই করে যাচ্ছেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসচাপায় নাজমুল হাসান রানা ও মেহেদী হাসান আরাফাত নামের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপদ সড়কসহ সাত দফা দাবিতে পরদিন ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়ের করে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/প্রতিনিধি/ইএস)