দৌলতদিয়ায় পারাপারের অপেক্ষায় শত শত ট্রাক

এম. মনিরুজ্জামান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০১৭, ২০:০৭

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি এবং প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরি ধীরগতিতে চলছে। এছাড়াও ঘাটের ফেরি পন্টুনের র‌্যাম বেজের মাটি ও পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফেরিগুলো পাড়ে ভিড়তে অতিরিক্ত সময় লাগছে। যে কারণে দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগেছে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার পাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচামালবাহী ট্রাক। তাই অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরি পারের জন্য দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ঘাটে বসে বসে।

মঙ্গলবার দুপুর ১টায় দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের দুই পাশজুড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের দীর্ঘ লাইন হয়েছে। বিকাল নাগাদ যানবাহনের লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটেই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সহস্রাধিক গাড়ি আটকা পড়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই পণ্যবাহী গাড়ি।

২নং ঘাটটি ঠিক করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ বিভাগ গত সাত দিনে শতাধিক বালির বস্তা ফেললেও স্রোতের টানে ওই ঘাটে পন্টুন লাগাতে পারছে না। এজন্য তারা ভেঙে যাওয়া ঘাট ঠিক করার আশা ছেড়ে অপর তিনটি ঘাট ঠিক করার জন্য ব্যস্ত রয়েছে।

অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরির সংখ্যা তুলনামূলক কম। যে কারণে ঢাকামুখি যানবাহন পারাপারে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ সময় লাগছে। গত রোজার ঈদের সময় যেখানে ৩০ মিনিটে নদী পার হওয়া যেতো এখন সেখানে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

ফেরি পারের জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলোকে কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পরে ঢাকামুখী যাত্রীরা। অন্যদিকে ফেরি পারের জন্য পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বেশ কয়েক দিন দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে থাকতে হয়। যে কারণে নষ্ট হচ্ছে ট্রাকে থাকা কাঁচামালসহ পচনশীল দ্রব্য। এছাড়া চরম ভোগান্তিতে আছে অন্য মালবাহী ট্রাকচালক ও হেলপাররা।

মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে তিন শতাধিক ট্রাকচালকের ভোগান্তির এ চিত্র দেখা যায়। কেউ ট্রাকের মধ্যে ঘুমাচ্ছেন। অনেকে গল্প-গুজব করে সময় পার করছেন। কেউ আবার ব্যস্ত রয়েছেন দালাল ধরে ঘাট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার জন্য।

সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী ট্রাকচালক (ঢাকা মেট্টো ট ১১-৯৭৬৫) রাজু আহম্মেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পাঁচদিন আগে সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা পোর্ট থেকে ট্রাকে করে চাল নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি। একদিন গাড়ি নিয়ে আটকে ছিলাম গোয়ালন্দ মোড় এলাকায়। সেখানে হাইওয়ে পুলিশকে দুইশ টাকা ঘুষ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। এরপর দৌলতদিয়া ঘাটে এসে চারদিন ধরে ফেরিতে উঠার অপেক্ষায় রয়েছি। কাছে থাকা টাকাও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।’

রাজুর সঙ্গে আলাপকালে প্রায় অর্ধশত ট্রাকচালক সেখানে এসে তাদের ভোগান্তির কথা বলতে থাকেন। সবারই রাজুর মতো একই অবস্থা। কেউ দুই দিন, কেউ চার দিন, কেউবা পাঁচদিন ধরে ফেরিতে ওঠার জন্য সিরিয়ালে আটকে রয়েছেন। কখন যে ফেরির দেখা মিলবে তা কারো জানা নেই।

লোহার রড বোঝাই ট্রাকচালক মোহাম্মদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চারদিন দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে থাকার পর অবশেষে ফেরিতে ওঠার সুযোগ পেলাম। অনেক ট্রাকচালক পুলিশ ও দালালদের টাকা দিয়ে সিরিয়াল ভেঙে ফেরিতে উঠে। তখন অনেক কষ্ট লাগে। কিন্তু-কিছুই করার নাই।’

ফেরিতে ওঠা চানাচুর বোঝাই সিলেটগামী ট্রাকচালক বাবু সেখ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফরিদপুরের কানাইপুর থেকে গাড়িতে চানাচুর লোড করে গত রবিবার (১৬ জুলাই) রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে সিরিয়ালের জন্য আটকে যাই। সকালে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ১৫০০ টাকা ও দালালদের ৪০০ টাকা বকশিশ দিলে তারা সিরিয়াল ভেঙে ফেরিতে ওঠার সুযোগ করে দেয়।’

এদিকে সিরিয়ালে আটকে থাকা বেশিরভাগ ট্রাকচালক অভিযোগ করে বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ বলে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ১৬/১৭টি ফেরি চলাচল করছে। কিন্তু বাস্তবে ফেরি ৭/৮ টি ফেরি চলাচল করে। ১৬/১৭ টি ফেরি চলাচল করলে যানবাহনের এমন লাইন হওয়ার কথা না। তবে রাতে ভরা নদীতে আরও ফেরি কম চলে। ফলে রাতের নৌশ গাড়িগুলো পার হয় পরের দিন বিকালে।’

ট্রাকচালকরা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে গাড়ি চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

চালকদের সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। চারটি ফেরিঘাটই সচল রয়েছে। তবে ১নং ঘাট গত সাত দিন ধরে বন্ধ ও চার নম্বর ঘাটটি হুমকিতে রয়েছে। ফলে ঘাট সংকটে ফেরিতে গাড়ি লোড আন লোড হতে অধিক সময় লাগায় দৌলতদিয়ায় জানজট সব সময়ই লেগে থাকেছে। তবে বর্ষা মওসুমে এমনটি হবেই। তবে সিরিয়াল অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে ফেরিতে গাড়ি পার করা হচ্ছে।

দৌলতদিয়া ঘাটে কর্তব্যরত সার্জেন্ট এস এম পারভেজ সোহান জানান, ঘাটে শৃঙ্খলা ও সিরিয়াল অনুযায়ী যানবাহন পার করা হচ্ছে। এজন্য পুলিশ সদস্যরা দিন রাত কাজ করছে। যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সিরিয়াল মোতাবেক আগে ও অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক একটু পরে ফেরিতে উঠানো হচ্ছে। তবে ফেরি লোড আনলোড করায় সময় লাগে। যে কারণে ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন হচ্ছে।

পদ্মা-যমুনায় প্রবল স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ঘাটে ২নং ঘাট গত সাতদিন যাবৎ বন্ধ এবং ৪নং ঘাটে ফেরি ভিড়তে না পারায় মাত্র পাঁচ কিলোমিটার নদী পথে ফেরি চলতে চার ঘণ্টার অধিক সময় লাগায় ফেরির টিপ কমে যানবাহন পারাপার মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উভয় ঘাটেরই ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের লাইন।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :