‘ট্যানারির’ হাজারীবাগে চিকুনগুনিয়ার মারাত্মক প্রকোপ

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ জুলাই ২০১৭, ০৮:৩১

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাভারে। কেমন আছে সেই হাজারীবাগবাসী সেটা দেখতে দুপুরের খাঁ খাঁ রোদে ফ্রিনিক্স লেদার কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মেলে এক নিরাপত্তাকর্মীর। তাঁর সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে অফিস ব্যাগ নিয়ে দুজনকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এদের একজন নিরাপত্তা কর্মীকে তার হাঁটুর ব্যথা সেরেছে কি না এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। ‘না স্যার, এখনো আছে’ বলে উত্তর দেন নিরাপত্তাকর্মী।

একটু কৌতূহলী হয়ে তাঁর কাছে জানতে চাই তিনি হাঁটুতে ব্যথা পেলেন কী করে। আশরাফ নামের সেই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘আর বইলেন না ভাই, কী জানি একটা নতুন রোগ আইচে চিকুনগুনিয়া ওইডা হইচে। এক মাস আগে হইছে এখনো হাঁটুতে ও হাতের গিরায় গিরায় ব্যথা।’

ফ্রিনিক্স লেদার কমপ্লেক্সের সব কার্যক্রম এখন সাভারে হচ্ছে। কিন্তু এখনো পড়ে আছে বিশাল বিশাল দামি মেশিন। সেগুলো পাহারা ও অন্যান্য কাজে ম্যানেজারসহ আটজন আছেন এখানে। এদের সাতজনেরই চিকুনগুনিয়া হয়েছে।

ফ্রিনিক্স লেদার কমপ্লেক্সে মাড়িয়ে ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিনে গিয়ে দেখা যায় দিনের বেলায় কয়েল জ্বলছে। দিনে কেন কয়েল জ্বালাচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর খৈয়াম নামে এক ব্যক্তি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার ভয়ে জ্বালাই। আমাদের এই হাজারীবাগে আপনে যদি শুধু ২৫০টা ট্যানারিতে খোঁজ নিয়ে দেখেন শুনবেন শতকরা ৯০ জনের চিকুনগুনিয়া হইছে। এই যে আমার হইছে, আমাদের ম্যানেজার স্যার, মালিক ও কর্মচারী কেউ বাদ যায়নি।’

শতকরা ৯০ জন শোনার পর এটা সত্য কি না সরেজমিনে আরও কয়েকটি ট্যানারিতে গিয়ে দেখা যায় সবাই একই কথা বলছে।

ক্রিসেন্ট গ্রুপ লেদারে সব মিলিয়ে ১০ জনের মতো লোক রয়েছে হাজারীবাগে। বাকি সবাই সাভারে। হাজারীবাগে থাকা দশজনের মধ্যে নয়জনের চিকুনগুনিয়া হয়েছে।

এই চিকুনগুনিয়া রোগ শুধু হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে থাকা লোকজনেরই নয়। বাসাবাড়িতেও একই অবস্থা। হাজারীবাগের বাসিন্দা সফিউল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার ২১টি এলাকা চিকুনগুনিয়া বিস্তারের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে পত্রিকায় ও টিভিতে দেখেছি। এটাতে হাজারীবাগের নাম ছিল না, অথচ এখানে ট্যানারির কালো পানিতে ড্রেনে মশা আর মশা জন্ম নিচ্ছে। যার সাথেই দেখা সে বলে তার চিকুনগুনিয়া হইছে। আপনি যদি সন্ধ্যার পর মেডিসিন দোকানগুলোতে দশ মিনিট সময় দেন দেখবেন সব চিকুনিগুনিয়া রোগী।’

মশা নিধনের জন্য সিটি করপোরেশন কাজ করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সিজনে দুইবারের বেশি মশার ওষুধ ছিটাইছে কি না সন্দেহ আছে। যেটুকু দিছে কাজ হবে যেখানে দিলে সেখানে দেয় নাই। দিছে মূল রাস্তায়, অথচ ট্যানারির ভেতরে মশা আর মশা। ডিম ফোটাচ্ছে আর জন্ম নিচ্ছে।’

চিকিৎসকরা জানান, চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনো প্রতিষেধক নেই, কোনো ভ্যাকসিন বা টিকাও নেই। তাই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো এডিস মশা প্রতিরোধ। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা এবং মশা নির্মূল করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বাসাবাড়ির আশপাশে যেখানে পানি জমে থাকতে পারে, তা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ডাবের খোসা, কোমল পানীয়ের ক্যান, ফুলের টব—এসব স্থানে যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দরজা-জানলায় নেট লাগানো, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

হাজারীবাগে যে ড্রেন রয়েছে সবগুলোতে কালো পানি আর আবর্জনায় ভরা। কালো পানিতে মশারা অভয়াশ্রম বানিয়ে ফেলেছে। এগুলো পরিষ্কার করা হয় না বলে দাবি এলাকাবাসীর। হাজারীবাগে বসবাসকারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সচেতন হলেও ড্রেনগুলো থেকে মশা তাড়াবে কে?

আইইডিসিআর পরিচালিত গবেষণায় রাজধানী ঢাকার ২১টি এলাকা চিকুনগুনিয়া বিস্তারের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় চিকুনগুনিয়া বাহক মশার ঘনত্ব বেশি। এলাকাগুলো হচ্ছে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, মধ্যবাড্ডা, গুলশান-১, লালমাটিয়া, পল্লবী, মগবাজার, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, রামপুরা, তেজগাঁও, বনানী, নয়াটোলা, কুড়িল, পীরেরবাগ, রায়ের বাজার, শ্যামলী, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, মণিপুরিপাড়া, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, মিরপুর-১ ও কড়াইল বস্তি। হাজারীবাগ কেন চিকুনগুনিয়া বিস্তারের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে পড়েনি প্রশ্ন এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে জানতে চাইল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ সালাউদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেখুন আমরা জোনওয়াইজ চিকুনগুনিয়া যেন না হয় সেটা নির্মূলের কাজ করছি। সেটা হাজারীবাগেও হচ্ছে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে উড়ন্ত মশা যেন না থাকে। মানুষকে সচেতন হতে হবে, যেন বাসার আঙিনা, ফুলের টব, ডাবের খোসা ও পরিত্যক্ত আসবাবপত্রে বৃষ্টির পানি জমে মশা না হতে পারে।’

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘ড্রেনে যে কিউলেক্স লার্ভা থাকে সেটা থেকে চিকুনগুনিয়া মশা হয় না। তাছাড়া ড্রেনে লার্ভা নেই।’ তিনি বলেন, ‘জনসচেতনতা ছাড়া মশা দমন করা কঠিন। চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি জরুরি জনসচেতনতা।’

(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/এনআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :