নিউ ইয়র্কে ভোগান্তির আরেক নাম মেট্রো ট্রেন

সুলতানা রহমান
 | প্রকাশিত : ১৯ জুলাই ২০১৭, ১০:৪২

কিউ গার্ডেন নিউ ইয়র্কের বেশ জনবহুল ট্রেন স্টেশন। বাইরে থেকে দেখতে যেমন তেমন, ভেতরে ঢুকলে মলিন, জীর্ন দশা দেখে মনে হালকা সন্দেহ জেগেছিল আসলেই আমেরিকায় আছি কিনা! এরপর প্ল্যটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকতে থাকতে ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি দেখে সন্দেহ পোক্ত হলো। সেই ইঁদুর যেনতেন ইদুর নয়, বড় সাইজের রীতিমতো ধারী ইঁদুর। দুইটা ফুরুৎ ফুরুৎ দৌড়াচ্ছে। ট্রেন কাছে আসার আলামত পেয়ে নিমিষেই তারা হওয়া হয়ে গেল।

আমার জন্য আরও বিস্ময় বাকি ছিল। ট্রেনে চড়তেই বিকট দুর্গন্ধে নাকে বাড়ি খেলাম। ফ্লোর ভেজা, পানি জাতীয় কিছুতে পুরোটা বগি মাখামাখি। ঘটনা বুঝতে বুঝতে ট্রেন চলা শুরু করল। পুরো বগি ফাঁকা, একটা বেঞ্চে কুণ্ডুলি পাকিয়ে একজন ঘুমাচ্ছে। বুঝতে বাকি রইলো না যে ঘুমন্ত আফ্রিকান আমেরিকান মাতাল হয়ে ট্রেনে উঠে বমি করে ওই দূরাবস্থা করেছে।

একটু ভয়ও লাগলো-বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকা মানুষটি ফাঁকা বগিতে একলা পেয়ে যদি হামলা করে! আমার সঙ্গে থাকা ১০ বছরের ছেলের হাতটি শক্ত করে ধরলাম, ওকে নাক চেপে ধরতে বলি। তিনি আমার দিকে করুণ চোখে তাকালেন, আমি অসহায় বোধ করলাম। কোনো মতে দম বন্ধ রেখে পরের স্টেশনে নেমে অন্য বগিতে উঠলাম।

এখন এই ট্রেনই আমার বাহন। কিন্তু নিউ ইয়র্কে ভোগান্তির আরেক নাম মেট্রো ট্রেন। এমন কোনো দিন নেই ট্রেন লাইনে ট্রাফিক জ্যাম হয় না! আর ট্রেন অপারেটর একটু পর পর ক্ষমা চায়, ‘উই আর ডিলেড ফর ট্রাফিক’, ‘উই অ্যাপোলোজাইস ফর এ্নি ইনকনভেনিয়েন্স’!

এতো তবু সয়, কিন্ত দুই দিন পর পর অমুক ট্রেন লাইনের সংস্কার, অমুক ট্রেনের পরিবর্তে অমুক স্টেশন থেকে তমুক ট্রেনের নোটিশ আর ঘোষণা শুনে শুনে অস্থির লাগে। কিন্তু ভালো ব্যবস্থা হলো বিকল্প ব্যবস্থা রাখার দায়িত্বশীলতা। সংস্কার হোক, নষ্ট হোক-যাত্রীদের জন্য বিকল্প বাহন থাকে সব সময়। এই যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য নিউ ইয়র্ক অনেকের পছন্দের শহর। আবার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য নিউ ইয়র্ক খুব সুবিধাজনক। কেউ বৈধ নাকি অবৈধ-এই প্রশ্নটিই এ শহরে অবৈধ! এমনকি পুলিশও কারো আইডি কার্ড চাওয়ার এখতিয়ার রাখে না। আবার বৈধ নাগরিকদের যাবতীয় সুবিধা বিশেষ করে পড়ালেখা, চিকিৎসার সমান সুযোগ। কিন্ত জালের মতো ইন্টার কানেক্টেড ট্রেন আর বাস সার্ভিস নতুন অভিবাসীদের জন্য সময় এবং অর্থ-সব দিক থেকে সাশ্রয়ী।

একবার একটা স্টেশনে প্রবেশ করলেই হলো, ট্রেনে ট্রেনে যাওয়া যায় শহরের যে কোনো প্রান্তে। যেখানে যান ভাড়া দুই ডলার সত্তুর সেন্ট! আবার যতবার খুশি ততবার যাওয়ার জন্য আছে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক আনলিমিটেড রাইড। এ পর্যন্ত শুনে সবারই ভালো লাগার কথা। কিন্ত বেশির ভাগ মানুষের কমসে কম এক ঘণ্টা লাগে কর্মস্থলে পৌঁছতে। আর যদি থাকে ট্রেন লাইনে ট্রাফিক জ্যাম, কিংবা স্টেশন বন্ধ-তাহলে তো কথাই নেই।

ঢাকায় ট্রাফিক জ্যামে বসে বসে আমরা যে সময়টাতে অধৈর্য হয়ে উঠি, এখানে ততটা হয় না। দূরত্বের কারণে ট্রেনের ধীর গতিতে সময়ের কাঁটা থমকে থাকার অনুভূতি কিছুটা কম হয় মাত্র! তবে মাঝে মাঝে মনে সন্দেহ জাগে আমেরিকায় আছি নাকি অন্য কোথাও?

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :