সুরক্ষা আইন নেই বলে নির্যাতিত হচ্ছে গৃহকর্মীরা
প্রতিনিয়তই গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর আসে পত্রিকাসহ নানা মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় কোনো আইন না থাকায় নির্যাতিত হচ্ছে গৃহকর্মীরা।
গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণে দেশে একটি নীতিমালা আছে বটে, কিন্তু সেটা কাজে লাগছে না এটি বাধ্যবাধকতা নয় বলে। তাই গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তারা।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএএসএফ) চেয়ারপারসন মো. ইমরানুল হক চৌধুরী তাদের এক জরিপের কথা উল্লেখ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৮ লাখ থেকে ২০ লাখ গৃহকর্মী রয়েছে। এর ৮০ শতাংশের বয়স ১৪ বছরের নিচে। আর ৮২ শতাংশ নারী। ১৭ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এ গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য আইন নেই।’
আইনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আগে এসিড নিক্ষেপ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ অপরাধ প্রতিরোধে আইন করার পর তা কমে গেছে। গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনও তেমনই ফল দেবে বলে আমি মনে করি।’
বিএএসএফের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত ৬৫ জন শিশু গৃহকর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। একই সময় ২১ জন শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণ ও ২১ জনকে হত্যা করা হয়। ৩০ জন শিশু গৃহকর্মী আত্মহত্যা করে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তারা।
ইমরানুল হক বলেন, গৃহকর্মী নির্যাতন যেটা সংবাদমাধ্যমে আসে তা প্রকৃত ঘটনার খুবই কম। যেটুকু আসে তার ভয়াবহতা দেখেই আমরা শিউরে উঠি। আমাদের শ্রম আইনে কোথাও গৃহকর্মীর কথা বলা নেই। যেহেতু আইনে সুরক্ষার কথা নেই, তাই এটা শ্রম হিসেবেই স্বীকৃত নয়। ফলে তারা নির্যাতিত হচ্ছেই। আবার বেতন, বোনাস ও কর্মঘণ্টাও ঠিক নেই কোনো।
সরকার ৩৮ ধরনের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রাখলেও গৃহকর্মীদের কাজ তাতে স্থান পায়নি। কিন্তু এটা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
গৃহকর্মী আদুরি নির্যাতন মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে সেটা যেন কার্যকর হয় সেই আশা প্রকাশ করে ইমরানুল হক বলেন, তাহলে কেউ আর গৃহকর্মী নির্যাতনের সাহস পাবে না।
মঙ্গলবার ওই মামলার প্রধান আসামি নওরীন জাহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ১১ বছরের শিশু গৃহকর্মী আদুরিকে পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে আধমরা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার মামা মামলা করেন।
সোস চিলড্রেন ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইন বাংলাদেশ-এর অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশনেরর সহকারী পরিচালক বেগ নুশরাত জাহান শাওন ঢাকাটাইমসকে বলেন, গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য যে নীতিমালা রয়েছে, সেটা অনেক গৃহকর্মী জানেই না। ফলে তারা তাদের সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারছে না। তবে গৃহকর্মী সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য এখন যে নীতিমালা রয়েছে, সেটা অচিরেই আইন আকারে প্রকাশের দাবি জানান মানবাধিকার সংগঠন ‘শাপলানীর’ এর গার্ল ডোমেস্টিক ওয়ার্কার প্রজেক্টের অ্যাডভোকেসি অফিসার আতিকা বিনতি বাকি। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আইন হলে মানুষ ভয় পায়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।’ গৃহকর্মী আদুরি নির্যাতন মামলা রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন গৃহকর্মী নির্যাতন করতে ভয় পাবে।’
গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণের নীতিমালায় গৃহশ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ, নিরাপদ বিশ্রাম, বিনোদন ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা, আলোচনা সাপেক্ষে শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ আইনের আলোকে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে গৃহকর্মীর বয়স ন্যূনতম ১৪ বছর ধরা হয়।
১৪ থেকে ১৮ বছরের শ্রমিকেরা হালকা কাজ করতে পারবে। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা হালকা ও ভারী কাজ করতে পারবেন। তবে হালকা কাজ কী সেটা নির্দিষ্ট করে বলা নেই বলে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/জেআর/মোআ)