বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরী
বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা মহনগরীর বেশির ভাগ এলাকা। রেকর্ড বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর উঁচু অঞ্চল বলে পরিচিত অনেক এলাকাও। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন খুলনা মহানগরবাসী। দোকানে পানি ঢোকায় মালপত্র নষ্ট হয়েছে বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের।
এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে খুলনার উপকূলীয় তিন উপজেলায় তিন লাখের বেশি মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, পিটিআই মোড়, রয়্যাল মোড়, শেখপাড়া পুরাতন মসজিদ সড়কে জমেছে হাঁটুপানি। এসব সড়কের আশপাশের সব বাড়ির নিচতলায় পানি। নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা কেডিএ এভিনিউ জলাবদ্ধতায় রীতিমতো দ্বীপে পরিণত হয়েছে। এ এলাকায় জমেছে কোমর সমান পানি। ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা পানি থেকে মালপত্র উদ্ধারে ব্যস্ত।
নগরীর রয়্যাল মোড় এলাকার দোকানি আজিজুল হক বলেন, দোকানের নিচে রাখা চাল, আটা, ময়দা, চিনি ও সুজির বস্তা পানিতে ডুবে গেছে। ফ্রিজের ভেতর পানি ঢুকে গেছে। এক দিনের বৃষ্টি আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। মুদি দোকানের পাশের প্রতিটি বস্তিঘরের ভেতরে পানি হাঁটু ছাড়িয়ে গেছে।রিকশাচালক রুহুল শেখ বলেন, তার ঘরের কাঁথা-বালিশ, চুলা, থালাবাটি- সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। শান্তিধাম মোড়ে গিয়ে দেখা গেল কোমরপানিতে ডুবে আছে সব। পানিতে দাঁড়িয়ে দোকান পরিষ্কারে ব্যস্ত এখানকার লোকজন। বাংলাদেশ বেকারির কর্মচারী সফিক জানান, তাদের দোকানের ভেতরে পানি ঢুকলেও আগে থেকে তাদের প্রস্তুতি ছিল বলে মালপত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি।
নগরীর সামছুর রহমান রোডও ছিল দুই ফুট পানির নিচে। রিকশা নিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা গেল বাইতিপাড়া এলাকায় কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ তদারক করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর হাসান ইমাম চৌধুরী ময়না। তিনি বলেন, জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি নামতে পারে না। এ ছাড়া খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে কাজ করায় পানি নামতে দেরি হচ্ছে। ফলে নগরীর রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে।
কাউন্সিলরের সঙ্গে ওই ওয়ার্ডের মির্জাপুর রোড, আহসান আহমেদ রোড, স্যার ইকবাল রোড, বেনী বাবু রোড, বিকে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন, ধর্মসভা ক্রস রোড, পিকচার প্যালেস মোড় ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি সড়ক ও বাড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব সড়কে অবস্থিত সেন্ট জোসেফস উচ্চ বিদ্যালয়, করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ, পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের ভেতরেও হাঁটুপানি দেখা গেছে। এসব স্কুল, কলেজসহ নগরীর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলায় পানিতে ভিজতে ভিজতে স্কুলে যেতে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকায় যান চলাচলও ছিল কম। বিকেলে অনেকের বাড়ি গিয়ে ঘর থেকে পানি পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।কেসিসির মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এক দিনে এমন বৃষ্টিপাত শেষ কবে হয়েছে মনে পড়ছে না। জোয়ারের সময় এমন ভারী বৃি তে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসন করা যায় না।
এদিকে জোয়ারের পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রূপসা নদীর দুই তীরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে আইচগাতী, সিংহেরচর, আলাইপুর গ্রামের বাঁধ উপচে তলিয়ে গেছে স্কুল-কলেজ ও হাট-বাজার। এ ছাড়া কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ এলাকার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছ। বেড়িবাঁধগুলোও রয়েছে হুমকির মুখে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল আহসান বলেন, ‘এক দিনে এত বৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি। উপজেলা প্রশাসনকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/মোআ)