আবার মোটরসাইকেলের দখলে ফুটপাত

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০১৭, ০৮:১৩

আফরোজা সুলতানা চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অফিস বাংলামোটরে, থাকেন মিরপুরের পল্লবীতে। তিনি বাসে উঠেন কারওয়ান বাজার মোড় থেকে। অফিস থেকে বের হয়ে হেঁটে কারওয়ান বাজার মোড়ে যেতে তাঁর পাঁচ মিনিটের মতো সময় লাগে। অন্য দিনের মতো অফিস শেষ করে বাসে উঠার জন্য ফুটপাত দিয়ে হাঁটতেই এক মোটরসাইকেল চালক হর্ন দিয়ে তাঁকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু তিনি না সরে ফুটপাত দিয়েই হাঁটতে থাকেন। তিনি না সরে যাওয়ায় মোটরসাইকেল চালক বিকট শব্দে হর্ন দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বিরক্ত হয়ে ফুটপাত ছেড়ে জায়গা করে দেন মোটরসাইকেল চালককে।

আফরোজা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে একটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারি না, এর জন্য সরে গেলাম না। কিন্তু দেখেন আমি যদি মোটরসাইকেল চালককে আইনের কথা বলি কোনো লাভ হবে না। কারণ অন্য কেউ এগিয়ে আসবে না আমাকে সাহায্য করতে। প্রথমেই রাস্তা দিইনি বলে চালক যাওয়ার সময় চোখ রাঙিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে অপরাধ আমি করেছি, উনি না। বাংলাদেশ বলেই এসব সম্ভব হচ্ছে!’

রাজধানীর ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। রাস্তায় একটু জ্যাম দেখলেই চালকরা তাদের মোটরসাইকেলটি উঠিয়ে দেন ফুটপাতে। বিকট শব্দে বাজাতে থাকেন হর্ন। কখনো কখনো আবার পথচারীদের জায়গা ছেড়ে দিতে বিকট শব্দে হর্ন বাজাতেও দেখা যায়। এতে নগরবাসী বরাবরই ত্যক্ত-বিরক্ত।

নগরবাসীকে এই বিরক্তি থেকে মুক্তি দিতে নানা সময় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, নির্দেশ এসেছে উচ্চ আদালত থেকেও। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশকেও একই কাজ করতে দেখা গেছে।

গত ২৭ মার্চ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেই আইনে বলা হয়েছে, ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে তিন মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা হবে ৩৫ হাজার টাকা। আইনটি এখনো খসড়ায়, চূড়ান্ত হওয়ার পর তা সংসদে পাস হবে; পরেই কার্যকর হবে এর বিধান।

এমন আইনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপরই পাল্টে যায় ফুটপাতের দৃশ্য। মোটরসাইকেল চালকদের হুট করে ফুটপাতে উঠতে দেখা যায়নি। আইন পাস না হলেও অনেকে খবরে জেনেছেন এই আইনটির কথা। এতেই অনেক সচেতনতা আসে রাজধানীবাসীর। জেল-জরিমানার ভয়ে তারা ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকেন। তবে সেটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সেই পুরোনো কালচার আবার ফিরে এসেছে।

রাজধানীর ফুটপাতে এখন পুরোদমেই মোটরসাইকেল চলে। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবিত আইনকে কেউ তোয়াক্কাই করছে না। এতে নানা ভোগান্তি-বিড়ম্বনার শেষ নেই নগরবাসীর। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। সরেজমিনে নগরীর ফার্মগেট, কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, খামারবাড়ি, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। রাস্তায় যানজটে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেই মোটরসাইকেল উঠে যায় ফুটপাতে। পথচারীদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয় মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য। সময় বাঁচানোর অজুহাত দেখিয়ে আইন ভেঙে সবাই ছোটে গন্তব্যে। মোটরসাইকেলের আরোহীরা এটাকে কোনো অপরাধ বলেই মনে করেন না।

ফুটপাতে মোটরসাইকেলের আরোহীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোসলেহ আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা উল্টো পথে যাওয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। গতকাল (মঙ্গলবার) উল্টো পথে যাওয়ায় মামলা হয়েছে ২১০টি গাড়ির বিরুদ্ধে। প্রতিদিন রাজধানীতে গড়ে ২৫০টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘উল্টোপথে গাড়ি বা মোটরসাইকেল যাই বলেন সবই আমরা কমিয়ে আনছি, এটা আর থাকবে না। কেউ ফুটপাতে মোটরসাইকেল উঠালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

ফুটপাত দিয়ে যেন মোটরসাইকেল চালানো না যায় এর জন্য রাজধানীর ফুটপাতে গেড়ে দেয়া হয়েছে লোহার পাইপ। কিন্তু সেটা দুই সিটি করপোরেশন ফুটপাত রঙিন করার আওতায় উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা আবার লোহার পাইপ বসিয়ে দেব। এতে ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ হবে।’

ফুটপাতে মোটরসাইকেল ঠেকাতে বিভিন্ন সময় ট্রাফিক বিভাগ বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করে। ফুটপাতে লোহার পাইপও বসানো হয়। তবে কোনো উদ্যোগই পুরোপুরি ফলপ্রসূ হয়নি। এবার জেল-জরিমানার বিধান রেখে যে কঠোর আইনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতেও রাজধানীর ফুটপাতগুলো মোটরসাইকেল মুক্ত হচ্ছে না। আইনটি পাস হলে তা কার্যকর কতটুকু হবে এটা নিয়েও আছে শঙ্কা।

মোটরসাইকেল চালানো এর আগেও নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১২ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো অবৈধ ঘোষণা করে। সে সময় চালকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তবে কোনো উদ্যোগই ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো ঠেকাতে পারেন। নতুন আইন পাস, তা যথাযথ কার্যকর এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা এলে পথচারীবান্ধব ফুটপাত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

(ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/এনআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

আউটসোর্সিং নিয়োগের কারণে বিপাকে কৃষিবিদরা

দক্ষিণখানে মার্কেটের নৈশ প্রহরীকে কুপিয়ে হত্যা

সবুজবাগে ট্রাক থামাতে চালককে গুলি: অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ৬ সন্ত্রাসী

পুরান ঢাকার যে দোকানে সবচেয়ে কম দামে গরুর মাংস

লেকে বর্জ্য ফেললে কলাগাছ থেরাপি দেবো: মেয়র আতিক

মিরপুরে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন, বন্ধু আহত

দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান লেক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

অর্থের বিনিময়ে চাকরি স্থায়ীকরণের অভিযোগ, নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএসএমএমইউ উপাচার্য

টাকা না পেয়ে রোগীর স্বজনদের মারধর করলেন আনসার সদস্যরা!

ঢাকার লেকগুলো করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে রাজউকের প্রতি আহ্বান মেয়র আতিকের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :