বিয়ে তো কাদের ভাই দিয়েছেন: অপু উকিল

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৭, ১০:৪৬ | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০১৭, ০৮:১৩

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত মুখ অপু উকিল। বর্তমানে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন বর্তমান রাজনীতি নিয়ে ভাবনা এবং সংগঠনের কর্মকাণ্ড। এই আলোচনায় উঠে এসেছে রাজনীতিতে আসা, বিয়ের কাহিনি। জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উৎসাহেই সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন তিনি। স্বামী হিসেবে অসীম কুমার উকিলকেও পছন্দ করে দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদেরই।

রাজনীতিকে আপনার হাতেখড়ি কীভাবে?

আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারেই বড় হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার ফরিদপুরের একটা জনসভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে তাঁর ভাষণ শুনেই আমি সিদ্ধান্ত নেই রাজনীতি করার। আর তখন থেকেই আমি লেখালেখি করতাম। বিশেষ করে ইত্তেফাক ও বাংলার বাণীতে লিখতাম। পত্রিকায় কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প এবং গল্প গিয়ে জমা দিতে হতো। তখন বাংলার বাণীতে কাজ করতেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তার সাথে পরিচয় হয়েছিল। তিনি আমাকে রাজনীতি করতে উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন, শুধু লেখালেখি করলেই হবে না, রাজনীতিও করতে হবে।

আর আমার কবিতায় রাজনীতি ছিল। এরপর ইন্টারমিডিয়েটে যখন বদরুন্নেছা কলেজে ভর্তি হই (সায়েন্স বিভাগে)। তখন থেকে মাঠের রাজনীতি শুরু করি।

পরিবার থেকে কোন বাধা পেয়েছেন?

আমার পরিবারের সবাই আমাকে রাজনীতি করতে উৎসাহ দিয়েছে। আর আমার বিয়ের পরে আমার শ্বশুরবাড়ির সবাইও আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। আমার হাজবেন্ড তো (আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল) আছেই, বিশেষ করে আমার শাশুড়ি আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। একটা ঘটনা না বললেই নয়, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রদল হামলা করেছিল। তাদের হল থেকে বের করে দিয়েছিল। এসব ঘটনা মীমাংসা করার জন্য আমরা ইডেন কলেজে গেলে তারা আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের নামে মামলা দেয়। গ্রেপ্তার এড়াতে আমরা আত্মগোপন করি। পত্রিকায় অনেক লেখালেখিও হয়েছে। গ্রামের কয়েকজন এসব পত্রিকা আমার মায়ের কাছে বলল, ‘দেখেন মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন পড়াশোনা করার জন্য কিন্তু সে তা না করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে’। তখন তাদেরকে আমার মা বলেছিল, ‘আমার মেয়ে আন্দোলন করছে। সে স্বৈরাচারির পতন আন্দোলন করেছে এবং সফল হয়েছে। এখন আবার এ সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন করছে, এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না। পত্রিকায় এসব লেখালিখি যত হবে, তাদের পতন তত তাড়াতাড়ি হবে।’

আত্মীয়রা বাধা দেয়নি?

না, আমার স্বজনদের সবাই আওয়ামী লীগ করেন। তাঁরাও আমাকে রাজনীতি করার জন্য প্রেরণা দেন। তারা আমাকে সহযোগিতা করেন এবং সাহস দেন। তারা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে তুমি রাজনীতি করো সেটাই, আমাদের পরম পাওয়া এবং আমরা গর্ব করি।’

আপনাদের বিয়েটা কীভাবে হলো?

সে (অসীম কুমার উকিল) তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর আমি একটি ইউনিটের সভাপতি। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের দেখাশোনা করতেন। তিনি যেহেতু বাংলার বাণীতে বসতেন, আমরা বিভিন্ন পরামর্শ নিতে সেখানে যেতাম। অসীম কুমার উকিলও যেতেন। আর বিভিন্ন মিছিল, মিটিং এ নিয়মিত দেখা হতো। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সাথে নেতাকর্মীরা এখন যেভাবে কথা বলতেন পারে, তখন সেই পরিবেশ ছিল না। তিনি (অসীম কুমার উকিল) আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির নির্দেশ দিতেন, আমরা তা পালন করেছি। কিন্তু প্রস্তাবটা কাদের ভাই দিয়েছেন।

একদিন বাংলার বাণীতে কাদের ভাই আমাকে বললেন, ‘তুমি প্রেম করো না। তোমার বিয়েটা আমি ঠিক করে রেখেছি।’ আমি মনে করেছিলাম, তিনি মজা করেছেন। আমিও বলেছি আগে পড়াশোনা শেষ করি। তারপর আপনি বিয়ে দিয়ে দিয়েন। ঠিক তেমনিভাবে তিনি (ওবায়দুল কাদের) অসীম কুমার উকিলকেও একই কথা বলেন। এরপর একদিন কাদের আমাকে ভাই বললেন, ‘দেখ হিন্দু মেয়েরা রাজনীতিতে কম আসে। আরে এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের বড় পদে কোন হিন্দু ছেলে যায়নি। আমি চাই তোমারা যেন রাজনীতি থেকে হারিয়ে না যাও। তাই তোমাদের বিয়ে দিতে চাই আমি। তবে আগে তোমরা কথা বলো। দুইজনকে ভালো লাগলেই তোমরা আগাতে পার।’

তাকেও (অসীম কুমার উকিল) তিনি একই কথা বলেছেন। এরই মধ্যে কাদের ভাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টা জানিয়ে ছিলেন। এরপর বিএনপির আমলে আমি বেগম বদরুন্নোছা কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি সেখানে অংশ নেই। ছাত্রদলের নেতারা ভোট কারচুপি করার জন্য অনেক গোলমাল করেছিল। আমরা ভেতরে আটকা পড়লাম। সে সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি অসীম কুমার উকিলকে নির্দেশ বললেন ওখানে কী সমস্যা হচ্ছে দেখো। এটা প্রধানমন্ত্রীর একটা পরোক্ষ সমর্থন ছিলো। এরপর আমাদের মধ্যে কথা শুরু হয়। তবে প্রেম বলতে যেটা বুঝায় যে আলাদাভাবে নীরবে কথা বলা, সেটা আমরা করিনি। আর মোবাইল তো ছিল না। মধুর ক্যান্টিন, পার্টি অফিসে গেলেই অমাদের কথা হতো। তবে সেখানে রাজনৈতিক কথাই ছিল বেশি।

স্বামী-স্ত্রী দুইজনই রাজনীতি করেন। পরিবারিক জীবনে এর কোনো প্রভাব পড়ে কি?

আমার দুই সন্তান। বড় ছেলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছোট ছেলে এইচএসসিতে পড়ে। তারা যখন ছোট ছিল, তাদের আমি তেমন সুযোগ দিতে পারি নাই। তারা এখন বড় হয়ে গেছে। কিন্তু যখন যুব মহিলা লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন বড় ছেলের বয়স ছিল সাড়ে সাত বছর, আর ছোট ছেলের বয়স ছিল দেড় বছর। সেসময় তাদেরকে আমি দিতে পারিনি। সাংগঠনিক কারণে বিভিন্ন এলাকা সফর করতে হয়েছে। বড় ছেলের পড়াশোনার দেখাশোনা এবং ছোট ছেলের খেয়াল রাখতে পারি নাই। ছোট ছেলেকে আমি কারো কাছে রেখে যেতাম। সে ‘মা’ ‘মা’ করে কাঁদতো। তাকে আমি মোবাইলে কথা বলে ঘুম পাড়াতাম। আর বাচ্চাদের ছোট সময়ে মায়ের পাশে থাকা দরকার। কিন্তু ছোট ছেলের আমি সেভাবে সময় দিতে পারিনি। তারপরও তারা নিজের প্রচেষ্টায় অনেক ভালো করেছে। তবে আমি মনে করি আমি যদি সময় দিতে আরও বেশি ভালো করত।

স্বামী-স্ত্রী দুইজন রাজনীতি করলে অনেক সুবিধা। কারণ বিভিন্ন জায়গায় আমরা এক সাথে চলতে পারি। আমি তাঁর বিষয়টা বুঝি। আমারটাও আমার স্বামী বুঝেন। রাঙ্গামাটিতে যখন পাহাড় ধস হয়েছিলো সেই সময় আমি অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু আমার স্বামী দলের প্রয়োজনে সেখানে ছুটে গেছেন। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে বলত, ‘আমি অসুস্থ হলাম কিন্তু সে আমাকে রেখে চলে গেলো’।

কিন্তু এ চিন্তাটা আমার ক্ষেত্রে আসেনি। আমাদের সন্তান অনেক কষ্ট করেছে কিন্তু আমার স্বামী ছাড় দিয়েছে। সন্তানের এখন আমাদের সন্তান বড় হয়ে গেছে। তাই রাজনীতি করার সুবিধাও বেশি। এলাকায় দুইজন একসাথে যাই। দুইজনকে পাশে পেয়ে এলাকাবাসীও আনন্দ পায়। রাজনীতিই আমাদের একটা পরিবার হয়ে গেছে।

আপনি সংসদ সদস্য ছিলেন, কিন্তু স্বামী তা হতে পারেননি...

প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিগত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার স্বামী আমার রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে এগিয়ে যাবেন এটাই আমার চাওয়া। আমার স্বামী এবার সংসদ নির্বাচন করবেন এটাই আমার চাওয়া। রাজনীতিবিদ এমপি হলে জনগণের কল্যাণ বেশি বেশি করা যায়। তিনি জনগণের নেতা। সৎ, যোগ্য নেতা হিসাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আমি আশা করি। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাবেন।

রাজনীতিতে নারীরা কী কী বাধার মুখে পড়ে?

একজন নারী রাজনীতিতে আসতে চাইলে তাকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং সামাজিকভাবে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। তবে এগুলো দূর করার মানসিকতা ইদানীং তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি বলব, শিক্ষিত নারীদের রাজনীতি আসার মানসিকতা অনেক কম। আধুনিক নারী সমাজ পড়াশোনা করেই চাকরির কথা ভাবে। তারা রাজনীতির কথা চিন্তা করে না। এটা রাজনৈতিক পরিবারের জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যেও দেখা যায়। এটা ছাত্র রাজনীতি করেন তাদের মধ্যেও এ প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু তারা যদি রাজনীতিতে না আসে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন অনুযায়ী সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পূরণ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। এ জন্য সমাজও দায়ী। কারণ দেখা যায়, বিয়ে পর স্বামী, স্বামীর পরিবার এবং নিজের পরিবারের বাধার কারণে তারা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়।

তারপরও আমাদের দেশের ইতিহাসে নারীদের অবদান কম নয়। সেই বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান রয়েছে। নারীরা নিজেদের চেতনাবোধ থেকেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। এ জন্যই নারীদের জন্যই কোটা তৈরি করেছেন। তাই নারীদের যদি সমাজিকভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলে তারা রাজনীতিতে অনেক ভূমিকা পালন করতে পারবে। আর দেশের অনুকূল পরিবেশও রয়েছেন।

রাজনীতিতে আগ্রহী নারীদের প্রতি আপনার বক্তব্য কি?

নতুন যারা আসবে তাদের প্রথমে কিছু বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। প্রথমে পরিবার থেকেই আসবে। পরিবার বলবে, ‘তুমি হামলার শিকার হবে। দল যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন অন্য দল চড়াও হবে। তোমার কারণে আমরাও (পরিবার) লাঞ্চিত হব।’ কিন্তু না সরে পরিবারকে বুঝাতে হবে। আমরা আদর্শের জন্য রাজনীতি করব। তাদের বলতে হবে আমাদের দেশের জন্য দায়বদ্ধতা রয়েছে। আগামীর জন্য কিছু দিতে চাই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই রাজপথে নেমেছি।

অনেক নারী আছেন কাজ করতে চায়। কিন্তু কোন প্লাটফর্ম পায় না। আমরা তাদের বলব, আপনারা আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন। আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমরাই তাদের সুযোগ করে দেবো।

ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে চায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :