ভোলায় ইউনিয়নে প্রবেশের একমাত্র সেতুটি নির্মাণে বিলম্ব, ভোগান্তি

ইকরামুল আলম, ভোলা
| আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৭, ১১:০১ | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০১৭, ১০:২০

ভোলার সদর উপজেলায় রাজাপুর ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রধান কোনো সড়ক নেই। বিকল্প যে (রোদ্রেরহাট-জনতাবাজার) সড়কটি রয়েছে এর মধ্যে জমাদ্দার বাড়ির দরজার সেতুটি দুই বছর আগে নতুন করে নির্মাণের জন্য ভাঙা হয়। যা আজও নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। মানুষ এখন অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে ভোগান্তি নিয়ে পার হচ্ছে।

রাজাপুর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদরানা বলেন, রাজাপুরে যাওয়ায় প্রধান সড়কটি ২০১৫ সালের মার্চ মাসে মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়। তারপরে ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ১৫-২০কিমি পথ ঘুরে ক্লোজারবাজার হয়ে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। বিকল্প পথ ছিল জনতাবাজার -রোদ্রেরহাট-ইলিশা ভোলা সড়ক। ওই সড়কে জমাদ্দার বাড়ির সামনে দারোগার খালের শাখা খালের ওপর পুরাতন সেতুটি ভেঙে ২০১৬ সালে নতুন একটি সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু ঠিকাদার বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করেই সেতুটি ভেঙে ফেলে।

স্বাস্থ্যকর্মী আবদুল বাছেত বলেন, রাজাপুরের একটি মুমূর্ষু রোগীকে রাতের আঁধারে দুর্গম যাতায়াতের কারণে ভোলা সদর হাসপাতালে নিতে মৃত্যু হতে পারে। দক্ষিণ রাজাপুর-কন্দ্রকপুর থেকে ভোলা শহরে যাওয়ার সরাসরি কোনো সড়ক নেই।

ওবায়দুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, রাজাপুর প্রায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র ও সরকারি কর্মকর্তা সকলেই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হচ্ছে। সেতুটি রির্মাণ না করায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

রাজাপুর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর বাকের মৃধা বলেন, ঠিকাদার রাস্তা না করে বাঁশের সাঁকো দিয়েছে। মানুষ ভয়ে সাঁকো পার হচ্ছে না। তাঁছাড়া সাঁকোটি দুর্বল। তাই জনপ্রতি পাঁচ টাকা দিয়ে নৌকা পার হচ্ছে।

সরেজমিন রাজাপুর আদম আলী জমাদ্দার বাড়ির সামনের সেতুর সাইডে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব-উত্তরে একটি পিলারের ঢালাই চলছে। সে পাড়ে ঢালাইয়ের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ড চলছে। পার হওয়ার সময় নৌকার মাঝি বজলুর রহমান বললেন, স্থানীয়দের সঙ্গে ঠিকাদারের লোকজনের প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। কেন প্রশ্ন করলে, মাঝি বলেন, বোঝেন না! সবকিছু কম দিতো চায়, হেইডা লইয়্যা এই ঝগড়া'।

নৌকা পার হতে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা জানে আলম বলেন, তারা প্রামবাসী সেতুর নির্মাণের স্থান থেকে চলে গেলেই শ্রমিকরা ৮-৯ ঝুড়ি বালু-পাথরের মধ্যে এক বস্তা সিমেন্ট দেয়। আর তারা উপস্থিত থাকলে সাত ঝুড়িতে একটি সিমেন্ট দেয়। শাদা চিকন দানার বালু ব্যবহার করার কথা না থাকলেও তারা চুরি করে চিকন দানার বালুর সঙ্গে মোটাদানার বালু মিশিয়ে কাজ করছে। সেতুটি নির্মাণের শুরুতেই নানা অনিয়ম করে আসছে। সারা বছর কাজ করার নাম নেই, শেষ সময়ে কাজ করার ভিড়। দুর্গম পথ হওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কোনো প্রকৌশলী উপস্থিত থাকেন না। আসলেও অল্প সময় থেকে চলে যান। তাই কাজে চুরি করতে সুবিধা হয়।

ঠিকাদার গৌরাঙ্গ দে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভুলক্রমে শাদা বালু সাইডে চলে গেছে। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। আর দুর্যোগের কারণে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে। খালটিতে বেশি স্রোত থাকায় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

ভোলা এলজিইডি অফিস জানায়, বরিশাল বিভাগীয় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জনতাবাজার সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। এক বছরের কার্যমেয়াদে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি কার্যাদেশ হয়েছে। সে সময় অতিক্রম করেছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। চলতি মাস পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদার বিল তুলেছে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কিছু দিনের মধ্যে আবার বিল হতে পারে।

অফিস আরও জানায়, সেতুর বালুর এফএম (সূক্ষতা) ২ দশমিক ৫। শাদা বালু ব্যবহার করে ওই এফএম পাওয়া সম্ভব নয়। তাই মোটা দানার বালু ব্যবহার করার নিয়ম।

ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাজ করার সময় সেখানে তাদের একজন প্রকৌশলী থাকার কথা, কিন্তু কেনো ছিল না তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি নতুন মেয়াদের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করবেন বলে আশ্বাস দেন।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :