‘আমাকে বিমানবন্দরের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৭, ১৩:৩২ | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০১৭, ১৩:২৬

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে তার আটকে থাকার বিষয়টি সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন। তিনি জানান, মালয়েশিয়া বিমানবন্দরের একটি কক্ষে তাকেসহ প্রায় ৬০ জনকে আটকে রাখা হয়েছিল। আটককৃতদের বেশির ভাগ বাংলাদেশি বলেও জানান তিনি।

তবে তাকে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না দেয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ ব্যাপারে তাই তিনি এখন কিছু বলতে চান না।

শনিবার রাজধানীর গুলশানে অধিকার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আদিলুর রহমান খান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

২০ জুলাই ভোররাত চারটায় ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় যান আদিলুর রহমান। সেখানে কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামার পর তাকে আর ঢুকতে দেয়া হয়নি। একটি মানবাধিকার সংগঠনের সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধিকারের সম্পাদক বলেন, ‘বিমানবন্দরে ওই কক্ষে থাকার সময় কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁদের একজন মো. ইমরান হোসেন। তিনি প্রফেশনাল ভিসা নিয়ে আজকে নিয়ে ষষ্ঠ দিনের মতো আটকা আছেন।’

আদিলুর জানান, তার সঙ্গে বাংলাদেশি এক নারীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই নারী তাকে জানিয়েছেন, তার স্বামী ১১ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় কাজ করেন। তিন মাসের ভিসা নিয়ে তিনি স্বামীর কাছে যাচ্ছিলেন। কোনো কারণ না দেখিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আদিলুরকে মালয়েশিয়া বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। বিবৃতিতে তাকে আটক রাখার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওঠেন। এন্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএন) এর দ্বিতীয় সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যাত্রা করেন। অধিকার এডিপিএএন-এর সদস্য। ২০ জুলাই মালয়েশিয়ান সময় ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে তিনি কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। এদিন সকালেই ওই বৈঠকটি শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার নাম ডাটাবেজে প্রবেশ করানোর পর আদিলুরকে এক টুকরো কাগজ দেন যেখানে বাহামা মালয়েশিয়া ভাষায় দুটো শব্দ লেখা ছিল। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধিরা তাকে জানিয়েছিলেন যে ওই শব্দ দুটির অর্থ ছিল ‘সন্দেহভাজন’। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেন এবং নিকটবর্তী একটি কক্ষে এক কর্মকর্তার কাছে যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন।

পাসপোর্ট জমা দেয়া পর আদিলুরকে অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় পুলিশ একটি ফোন কল করে এবং নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। আনুমানিক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাকে অপর একজন ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুসরণ করতে বলা হয়। আদিলুরকে যখন বিমানবন্দরের অপর প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এডিপিএন-এর একজন সমন্বয়ককে তার ফোন থেকে ইমেইল করতে সক্ষম হন। এক বাক্যে তিনি তাকে জানান যে তাকে বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না এবং সম্ভবত তাকে আটক করা হবে। সঙ্গে সঙ্গেই ইমেইলের জবাব পান তিনি। এতে ওই সমন্বয়কের মালয়েশিয়ান সহকর্মীর ফোন নম্বর ছিল। ওই ব্যক্তি আদিলুরকে জানান যে তিনি অবিলম্বে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করছেন। আদিলুর তাকে সুয়ারাম’কেও (মালয়েশিয়ার স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থা) অবহিত করতে বলেন যেহেতু সুয়ারাম অধিকারের মতো একই আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সদস্য ছিল।

লক-আপে আদিলুরকে তার জুতা খুলতে বলা হয় এবং সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র আলাদা করে রাখতে বলা হয়। তার সেলফোন ও ল্যাপটপ সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর তাকে বড় একটি কক্ষে আটক করা হয় যে কক্ষটি শুধু ইলেক্ট্রনিক পাসওয়ার্ড দিয়ে খোলা যায়। ওই কক্ষে আনুমানিক ৬০ জন ব্যক্তি ছিল। এদের বেশিরভাগ ছিল বাংলাদেশি। অন্যরা ছিল ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিস্তিন ও ইরান থেকে। আফ্রিকা মহাদেশ থেকেও কিছু লোক ছিল।

এক ঘণ্টা পর তাকে লক-আপ থেকে বের করে নেয়া হয় এবং খাবারের জন্য তাকে ৩৫০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত বা ১০০ মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়। আর তাকে দেয়া হয় দুটি বিস্কিট, এক বোতল পানি, একটি টুথব্রাশ, টুথপেস্ট এবং একটি সাবান। এরপর তাকে ফের ওই কক্ষে পাঠানো হয়। ওই লক-আপের একমাত্র টয়লেট ব্যবস্থা ছিল নোংরা এবং কক্ষের আয়তন এতো মানুষের জন্য অপর্যাপ্ত।

আনুমানিক দুপুরের দিকে, এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে আদিলুরকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি এই আটকবস্থা নিয়ে বাইরের কাউকে অবহিত করেছেন কি না। আদিলুর জানান, তিনি এক বন্ধুকে জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা এরপর জোরে বলে ওঠেন, ‘কেন আপনি এটা করেছেন?’ কিছুক্ষণ পর আরেকজন কর্মকর্তা আসেন এবং আদিলুরকে জানান যে মালয়েশিয়ান ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান যে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে তার বস নিশ্চিত হতে চেয়েছেন যে তিনি আদিলুর রহমান খান কি না এবং সেটা হিউম্যান রাইটস কমিশনের কাছে অবহিত করতে বলেছেন। তিনি তার সেলফোনে আদিলুরের একটি ছবি তোলেন।

পরে একজন কর্মকর্তা এসে আদিলুরকে পৃথক আরেকটি কক্ষে নিয়ে যান যেটার আকৃতি আনুমানিক ছয় ফিট বাই ১০ ফিট। সেখানে তাকে এক কাপ চা এবং মধ্যাহ্নভোজ দেয়া হয় যার জন্য তিনি অর্থ দিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাকে সেখানে আটক রাখা হয়। এ সময়ে তাকে বড় ও প্রধান আটক কক্ষের টয়লেটটি ব্যবহার করতে হয়। ৬টার সময় তাকে প্রথম যেই কক্ষে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল (বড় আটককক্ষে নেয়ার আগে), সেই কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হিউম্যান রাইটস কমিশনের দু’জন প্রতিনিধিকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়া হয়।

তারা তাকে জানান যে, একজন আইনজীবী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বিমানবন্দরে এসেছেন, কিন্তু তাকে সে অনুমতি দেয়া হয়নি। সকালে মালয়েশিয়ান ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের একটি দলও এসেছিল। তাদেরও অনুমতি দেয়া হয়নি। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে আদিলুর যা কিছু ঘটেছে তা জানান এবং প্রথম ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার দেয়া কাগজের টুকরোটি হস্তান্তর করেন। তারা যখন কথা বলছিলেন তখন একজন পুলিশ সদস্য এসে তাদের ছবি তুলে নিয়ে যায়।

৩০ মিনিট আলোচনার পর তাকে আটক এলাকার অভ্যর্থনার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টায় তাকে বোর্ডিং গেটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ঢাকাগামী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ১১২ তে উঠিয়ে দেয়া হয়। তার পাসপোর্ট তাকে দেয়ার পরিবর্তে ফ্লাইটের একজন ক্রু মেম্বারের কাছে দেয়া হয়। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছান আদিলুর। বাংলাদেশি একজন বিমানবন্দর কর্মকর্তা তাকে ইমিগ্রেশন পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে আনুমানিক ১৫ মিনিট ছিলেন তিনি। তাকে তার পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয় এবং তিনি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :