হারাম আল-শরিফ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৭, ২২:৫০ | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০১৭, ২২:৩৯

পূর্ব জেরুজালেমে সাম্প্রতিকতম সহিংসতার কারণ হচ্ছে, হারাম আল-শরিফ ঢোকার পথে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মেটাল ডিটেক্টরসহ নিরাপত্তা জোরদার করা। আর এটি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ক্ষুব্ধ করে তোলেছে। একে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতায় এখন পর্যন্ত তিনজন ফিলিস্তিনি ও তিনজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অনেকে।

কিন্তু এই হারাম আল-শরিফ জায়গাটি এত স্পর্শকাতর কেন?

কারণ এই জায়গাটি ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি- এই তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র স্থান। আর এই স্থানটিকে নিয়ে শত শত বছর ধরেই এ টানাপোড়েন চলছে।

ইহুদিদের কাছে হারাম আল-শরিফ এলাকাটির নাম 'টেম্পল মাউন্ট' এবং এটিই তাদের ধর্মে সবচাইতে পবিত্র স্থান। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই নবী আব্রাহাম তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। এখানেই ছিল ইহুদিদের প্রথম ও দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির -যা ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান বাহিনী ধ্বংস করে দেয়।

আল-আকসা মসজিদ

সেই মন্দিরের শুধুমাত্র পশ্চিম দিকের দেয়ালটিই এখনো টিকে আছে। এটিই এখন ইহুদিদের ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান।

অন্যদিকে মুসলিমদের কাছে 'হারাম আল-শরিফ' এবং এটি ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান। মক্কার আগে প্রথম যুগের মুসলিমরা এর দিকে ফিরেই নামাজ পড়তেন ।

এখানে প্রথম ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর। পরে ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে এখানে প্রথম বড় আকারে মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

দু'দফা ভুমিকম্পে দুবার ধ্বংস হয়ে গেলে তা পরে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এখন যে মসজিদটি আছে তা নির্মিত হয় ১০৩৫ সালে।

এর অনতিদূরেই আছে সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দি রক’ বা ‘কুব্বাত আল-শাখরা’। ইহুদিদের মন্দির ধ্বংস করে রোমানরা এখানে দেবতা জুপিটারের একটি মন্দির তৈরি করেছিল- যেখানে পরে ৬৮১ সালে উমাইয়া খলিফা আবদ-আল মালিকের সময় নির্মাণ করা হয় এই 'ডোম অব দি রক'।

ডোম অব দি রক

আটকোণা এই স্থাপনার ভেতরেই রয়েছে সেই পাথরের ভিত্তি- যেখান থেকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ মিরাজে গিয়েছিলেন বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর দখল করে নেবার আগে এটি নিয়ন্ত্রণ করতো জর্ডান। এখন পূর্ব জেরুজালেম ইসরায়েল অধিকৃত। তবে আল-আকসা বা টেম্পল মাউন্ট এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে একটি জর্ডান-ফিলিস্তিনের ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।

এখন ইসরায়েলিরা টেম্পল মাউন্ট এলাকায় যেতে পারে, কিন্তু এখানে তাদের প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ।

ওয়েস্টার্ন ওয়াল - যেটি ইহুদিদের পবিত্র স্থান

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখানে যে মেটাল ডিটেক্টর বসিয়েছে - এটিকে ফিলিস্তিনিরা এখানে ওয়াকফের কর্তৃত্বের লঙ্ঘন এবং ইসরায়েলি দখলদারির দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করছেন।

তবে ইসরায়েল এটিকে একান্তই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখাতে চাইছে, কারণ মসজিদ এলাকাতেই এক সপ্তাহ আগে এক আক্রমণে দু'জন ইসরায়েলি পুলিশ নিহত হয়।

কিন্তু এই আল-আকসা এলাকাটিতে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ড প্রায় প্রতিবারই বিক্ষোভ-সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। আল-আকসায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনের এক বিতর্কিত সফরকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় 'ইন্তিফাদা' বা গণঅভ্যুত্থান - যাতে ৪ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

এ জায়গাটি এতই স্পর্শকাতর যে এখানে কোন সহিংস ঘটনা থেকে শেষ পর্যন্ত আরো একটি ইন্তিফাদা ডেকে আনবে কিনা - এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেন না।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :