সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে নাজমাকে

মোখলেছুর রহমান, মাগুরা
 | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১০:২৮

দেশব্যাপী আলোচিত মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার জন্মের দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হলো আজ রবিবার। অসচ্ছলতার কারণে জন্মদিন পালন করছে না পরিবার। প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে শিশু সুরাইয়া বেড়ে উঠছে। বিভীষিকাময় সেই দিনের স্মৃতি দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে ফিরে গুলিবিদ্ধ মা নাজমাকে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার দায়েরকৃত মামলার সব আসামি আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

২০১৫ সালের এই দিনে মাগুরার দোয়াড়পাড় এলাকায় ক্ষমতাশীন দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হন আট মাসের অন্তস্বত্তা নাজমা বেগম। এতে গর্ভে থাকা শিশু সুরাইয়াও বিদ্ধ হয়। গুরুতর অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে এক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুরাইয়া ভূমিষ্ঠ হয়। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচিত হয়।

আজ সকালে স্থানীয় দোয়ারপাড় এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাবা বাচ্চু ভূইয়ার কোলে বসে খেলা করছে করছে সুরাইয়া আর মা নাজমা বেগম সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন। সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার কাছে একটি অন্যরকম অনুভূতির দিন। এখনো বিভীষিকাময় সেই দিনের স্মৃতি দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে ফিরে আমাকে।’

মেয়ে সুরাইয়া সম্পর্কে বলেন, ‘গুলির আঘাতে ডান চোখটি ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। দুই বছর বয়স হলেও হাঁটতে এমনকি ঠিকমতো কথা বলতে পারে না।’ মেয়ের জন্মদিনে মা নাজমা বেগমের চাওয়া পৃথিবীতে যেন আর একম ঘটনা না ঘটে।

সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূইযা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঠিকমতো মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। অনেকে সুরাইয়ার চিকিসার জন্য আর্থিক সাহায্য করার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি।’

বাচ্চু বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির গত ২৮ মার্চ থেকে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নির্ধারিত দুইটি তারিখ থাকলেও সাক্ষী আসেননি। মামলার কার্যক্রম বিঘিœত করতে আসামিরা বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে অধিকাংশ আসামি বেরিয়ে এসেছে। তারা বিভিন্ন সময় মিটিং করছে মামলার যাতে আমরা সঠিকভাবে সাক্ষ্য দিতে না পারি।’

পৃথিবীতে গুলিবিদ্ধ কোনো মা ও তার নবজাতকের এরকমভাবে বেঁচে যাওয়ার নজির এটাই প্রথম। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই বিকালে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় গুলিতে বাচ্চু ভুইয়ার আট মাসের অন্তস্বত্তা স্ত্রী নাজমা বেগম, চাচা আব্দুল মোমিন গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালের ডাক্তাররা গুলিবিদ্ধ সংকটাপন্ন নাজমা বেগমকে সিজারের মাধ্যমে গর্ভে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মেয়ে শিশুটিকে জন্ম দেন। গুলিটি শিশুর পিট দিয়ে ঢুকে বুকের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে ডান চোখে আঘাত করে।

গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার আঘাত ছিল মারাত্মক, সে কারণে ২৫ জুলাই শনিবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ২৫ দিনের চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে ২০ আগস্ট মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে তার মা-বাবা বাড়িতে ফিরে আসে।

পরদিন ২৪ জুলাই শুক্রবার বিকালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ বৃদ্ধ আব্দুল মোমিন ভুইয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার শরীরে পুনরায় অস্ত্রোপচার করা হলেও তিনি রাত একটায় মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত মোমিনের পুত্র রুবেল ভূইয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সেন সুমনকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নামে মাগুরা সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দব্য আইনে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশি তদন্তে অপর একজনের নাম বাদ পড়ে তোতা, নতুন করে তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মোট ১৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এখন মামলাটি সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে।

এ মামলার অন্যতম আসামি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মেহেদী হাসান আজিবর ওরফে অজিবর শেখ ওই বছর ১৭ আগস্ট দিবাগত রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :