‘ছিনতাইকারীরা পুলিশ বা সাংবাদিক পরিচয় পেলে হত্যা করে’
ছিনতাইয়ের সময় ভুক্তভোগী পুলিশ বা সাংবাদিক পরিচয় পেলে ঝামেলা হওয়ার ভয়ে তাদেরকে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। পরে নির্জনস্থানে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
হাইওয়ে পুলিশের সহকারী সুপার মিজানুর রহমান হত্যার তদন্তে নেমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে পুলিশ। বাহিনীটি জানায়, ছিনতাই করতে গিয়ে মিজানুরের পরিচয় জানার পরই তাকে খুন করা হয়।
রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, বাহিনীটির জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
গত ২১ জুন ভোরে সেহরি খাওয়ার পর কর্মস্থলে রওয়ানা হওয়ার পথে খুন হন হাইওয়ে পুলিশের সুপার মিজানুর রহমান। পুলিশ জানায়, উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে মিজানকে গাড়িতে তুলে ছিনতাইকারীরা। আর আশুলিয়ার বিরুলিয়া এলাকায় মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায় তারা।
এ ঘটনায় একটি মামলা হয় আশুলিয়া থানায়। পরে ওই মামলার তদন্ত পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ।
এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে শাহ আলম ওরফে আলম ওরফে বুড্ডা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দারা।
শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সাংবাদিকদেরকে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই দিন ভোরে ফজরের আজানের পর শাহ আলম ও তার তিন সহযোগী মিন্টু, কামাল ও ফারুক উত্তর তিন নম্বর সেক্টরের মসজিদের পাশে অবস্থান করছিলেন। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এলে তারা তাকে যাত্রী হিসেবে কর্মস্থলে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে প্রাইভেটকারে ওঠায়।
মনিরুল বলেন, “এক পর্যায়ে মিজান সাহেবকে সরকারি লোক বুঝতে পারে ছিনতাইকারীরা। এ সময় মিণ্টু তার সহকর্মী ফারুককে বলেন, ‘কিছু হলে তুই কি পালিয়ে বাঁচতে পারবি?’। পরে ফারুক ও প্রাইভেটকারের পেছনে ওঠেন। জাকির তখন চালকের আসনে বসা, শাহ আলম তখন প্রাইভেটকারের বাম পাশ বসা ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে গাড়িতে উঠিয়ে চালক জাকির খুব জোরে গাড়িতে গান বাজিয়ে লাইট বন্ধ করে গাড়ি চালিয়ে জাসিম উদ্দিন রোড হয়ে প্রথমে হাউজ বিল্ডিং পরে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে যায়।’
‘তখন গাড়ির পিছনের সিটে বসা মিন্টু মিজান সাহেবে মাথায় লাঠি দিয়ে একটি আঘাত করে। অন্ধকারে গাড়ির পিছনের সিটে বসা ফারুক, কামাল ও মিন্টু ফিস ফিস করে কথা বলা ও ধস্তাধস্তি করছিল। তাদের মধ্যে একজন মিজানুর রহমানের গলায় প্রাইভেটকারে থাকা এক টুকরা কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে টহল পুলিশের ভয়ে প্রধান সড়ক ব্যবহার না করে ১০ নম্বর সেক্টরের গলির পথ ধরে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছে।’
মনিরুল জানান, বিরুলিয়া সেতুর আগেই রাস্তায় গাড়ি থামান চালক জাকির। সেখানে মিন্টু, কামাল ও ফারুক দ্রুত মিজানুর রহমানকে ফেলে দ্রুত গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মিজানুর রহমানের মৃত্যুর পর ধারণা করা হয়েছিল যে তাকে ছিনতাইকারীরা হত্যা করতে পারে। পরে এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় ছিনতাইকারীরাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
এএসপি মিজান হত্যায় জড়িতরা এর আগেও নানা অপরাধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কাছে ধরা পড়েছিল বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন, উত্তর বিভাগের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, পূর্ব বিভাগের উপ কমিশনার খোন্দকার নুরুননবী, দক্ষিণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান, সিরিয়াস ক্রাইমের উপ কমিশনার মোদাছ্ছের হোসেন এবং গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল।
ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/এএ/ডব্লিউবি