​ বৈশ্বিক সন্ত্রাসের স্বরূপ ও তার সমাধান

মোহাম্মদ জমির
| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১৬:০১ | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১৫:৪৯

আমরা চাই বা না চাই যুগ যুগ ধরেই আছে বৈশ্বিক সন্ত্রাস। যার সঙ্গে আবার জড়িয়ে আছে বিশ্ব রাজনীতি। বৈশ্বিক মোড়লরা অনেক ক্ষেত্রেই সন্ত্রাস লালন করেন, আবার প্রতিরোধেও তারা কাজ করেন। যাকে বলা হয়ে থাকে, সাপ হয়ে দংশন আর ওঝা হয়ে ঝাড়া। প্রভাবশালী কিছু দেশ এটা করে বিশ্বে তাদের প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে। নিকট অতীতে বাংলাদেশে সরাসরি এর কোনো প্রতিফলন ছিল না। কিন্তু আমাদের সব ধারণা খানখান করে দিল গুলশানের সন্ত্রাসী হামলা। গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিন এই নারকীয় ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকার গুলশান-২ এর হলি আর্টিজান বেকারিতে।

তাই চলতি বছর জুলাই আমাদের কাছে এসেছিল শোক নিয়ে। যা আমরা আসলে কখনোই ভুলতে পারব না। কারণ এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অনেক নির্দোষ মানুষ। যাদের অনেকেই আবার বয়সে তরুণ। এই হামলায় যারা জড়িত ছিল তারাও কিন্তু তরুণ। ধর্মের নামে ধর্মান্ধ আর বিপথগামী এই যুবকরা মনুষ্যত্ব আর মানবাধিকারের কোনো ধার ধারেনি। তাদের কারণে আরো একবার ভূলুণ্ঠিত হয় বিশ্ব- মানবতা।

জঙ্গিরা ওই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে যাদের ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি, ৩ জন বাংলাদেশি এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলা দুজন পুলিশও প্রাণ হারায়। পরে হামলাকারী ছয় জন কমান্ডো অভিযানে প্রাণ হারায়। অন্য এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই জঙ্গিদের অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এরা শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এর কিছুদিন পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় যে হামলা হয় তাতেও একজন জঙ্গি নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। তারপর থেকে আমরা দেখেছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলোচনায় চলে আসে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ কিভাবে ধর্মীয় উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মূলত গুলশান হামলার ব্যাপকতার কারণেই তা সারা বিশ্বের গোচরে আসে। কারণ সন্ত্রাসী হামলায় এত বেশি বিদেশি মানুষ একসঙ্গে নিহত হওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি বাংলাদেশে। হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পর সেটিও আরেকটি বড় ধাক্কা দিয়েছিল এ দেশের মানুষকে।

গুলশানের ভয়াবহ ঘটনার আগে-পড়ে সারা দেশে আমরা কিছু হত্যাকা- দেখেছি। যেখানে বিদেশিরা কিংবা ভিন্নমতের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আহত-নিহত হয়েছে। যারা করেছে তারা এক্ষেত্রে ধর্মের অপব্যবহার করে আসলে জঙ্গিবাদকে উসকে দিতে চেয়েছে। এটাই দুর্ভাগ্য যে, মানুষ হত্যার মতো পাপকর্মে ধর্মের অপব্যখ্যা ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কারণে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। ধর্মের নামে এর চেয়ে অধর্মের কাজ আর কী হতে পারে। উগ্রবাদীদের কারণে দেশের আর্থ-সামাজিক যে অগ্রগতি তাও থেকে থেকে বাধার মুখে পড়ছে। জঙ্গিগোষ্ঠী বন্দুক, চাপাতি, চাকুর মতো অস্ত্র শান্তির এই দেশে অশান্তি বয়ে আনার অপচেষ্টা করেছে। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা ধর্মভীরু। ধর্মান্ধ নই। কোনোভাবেই জঙ্গিগোষ্ঠীর চারণভূমি হতে পারে না বাংলাদেশ।

আসলে বিশ্বজুড়েই একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত জঙ্গি হামলা বা হামলা-চেষ্টা আমরা দেখতে পাচ্ছি। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ফ্রান্সের প্যারিসে একটি মসজিদে গাড়ি হামলা চালানোর চেষ্টা করায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর অবশ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে তখন জানা যায়, মসজিদের সামনে একটি ভিড়ের মধ্যে গাড়ি হামলা চালায় চালক। মসজিদের চারপাশের দেয়াল বেষ্টনীতে গাড়িটি ধাক্কা খেয়ে থেমে যাওয়ায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। ধাক্কার পর গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায় চালক। গত ১৯ জুন লন্ডনের ফিন্সবারি মসজিদের সামনে এভাবেই গাড়ি হামলা চালিয়েছিল এক ব্রিটিশ। সেই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছিলেন। ফ্রান্সের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তারা নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লা পারিসিয়ে জানায়, হামলাকারী আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত। তিনি প্যারিসে আইএসের হামলার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করে সংবাদমাধ্যমটি।

বছর দুয়েক আগে তথা ১৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখের সন্ধ্যায় ফ্রান্সের প্যারিস ও সেন্ট ডেনিসে একটি ধারাবাহিক সমন্বিত সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটে। আক্রমণটির মধ্যে গণহত্যা, আত্মঘাতী বোমা হামলা, বোমা হামলা ও জিম্মি করা- এসবের সমন্বিত রূপ দেখতে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তখন সেন্ট-ডেনিসের উত্তর শহরতলিতে স্টাডে দ্য ফ্রান্সের বাইরে তিনটি পৃথক আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। প্যারিসের কাছাকাছি চারটি ভিন্ন স্থানে গণহত্যা ও আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটে। সবচেয়ে ভয়ংকর হামলাটি হয় বাতাক্লান থিয়েটারে। আক্রমণকারীরা সেখানে থাকা নাগরিকদের জিম্মি করে; পরে পুলিশ ভারী অস্ত্রসহ সেখানে অভিযান চালায় যা শেষ হয় পরের দিন। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। এই হামলায় অন্তত ১২৮ জন নিহত হয়। যার ৮৯ জন নিহত হন বাতাক্লান থিয়েটারে। এই হামলায় প্রায় ৪১৫ জন আহত হয়। ওই হামলায় জড়িত ৭ জন আক্রমণকারী মারা যায়। এই আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ফ্রান্সে ঘটা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল বলে জানা যায়। এই হামলার পর ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

গত বছরও আমরা ইউরোপে ক্রমাগত সন্ত্রাসী হামলা দেখেছি। গত বছরের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের নিস শহরে একটি অনুষ্ঠানে লরি নিয়ে হামলা চালালে শিশুসহ অন্তত ৮৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। পুলিশ চালককে গুলি করে হত্যা করে লরি থামায়। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, বাস্তিল দিবসের আতশবাজি উদযাপনে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের নিস শহরের বিখ্যাত প্রমেনেদ দে আঁগলাইসে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিল। সেই ভিড়ের মধ্যে চালক ২৫ টনি লরি ১০০ মিটারের বেশি রাস্তা চালিয়ে নিয়ে যায়। পুরো এলাকা রক্তে একাকার হয়ে যায়। অভিযুক্ত লরিচালকের বয়স ৩১ বছর। তিনি তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক। এ ঘটনার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁন্দ জরুরি বৈঠক করেন। এ ঘটনার পর ফ্রান্সে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ফরাসি সরকারের পদক্ষেপ আরো জোরদার করা হয়।

এশিয়ার বিপন্ন অভিবাসীদের আশ্রয়ে এগিয়ে আছে জার্মানি। অথচ তারাও পড়ছে জঙ্গি হামলায়। ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর জার্মানিতে বড়দিনের একটি ক্রিসমাস মার্কেটে চলন্ত লরি ঢুকিয়ে কমপক্ষে ১২ জনকে হত্যা করা হয়। এতে আহত হন ৪৮ জন। এই হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।

চলতি বছরের ২২ মার্চ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ জন নিহত হয়। এতে ৪০ জন আহত হন। হামলাকারী প্রথমে টেমস নদীর ওপর ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে পার্লামেন্ট ভবনের সীমানার ভেতরে ঢুকে ছুরি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। দেশটির পুলিশ এই ঘটনাকে ‘ইসলামপন্থি সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করে। হামলার পর জরুরি বৈঠক করে ব্রিটেনের মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী মে তার ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনের বাইরে বলেন ব্রিটেনজুড়ে সতর্ক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে।

গত ৭ এপ্রিল সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি লরি লোকজনের ভিড় মাড়িয়ে এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়। আহত হয় ৪০ জনের মতো। দেশটির কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করে। জুন মাসের ৩ তারিখে ‘সন্ত্রাসী' হামলায়’ আবার রক্তাক্ত হয় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন। কয়েকজন ব্যক্তি ভুয়া সুইসাইড ভেস্ট পড়ে ভ্যান চালিয়ে ও ছুরি হাতে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলার এই ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন ৩ জন হামলাকারীর গুলিতে নিহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করে পুলিশ। সেই সময়েই লন্ডন ব্রিজের কাছে বারো মার্কেট এলাকায় ছুরি হাতে সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। গত মার্চের পর থেকে এটি লন্ডনে তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা।

মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় আবারও সন্ত্রাসী হামলা হয় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে। উত্তর লন্ডনের সেভেন সিস্টারস রোডের ফিন্সবারি পার্ক মসজিদের কাছে এই হামলা হয়। এবার আক্রান্ত হলেন মুসলমানরা। ১৮ জুন রাত ১২টার পর মানে ১৯ জুন প্রথম প্রহরে তারাবি নামাজ শেষে মুসলিমরা যখন ঘরে ফিরছিলেন, তখন তাদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। এতে একজন নিহত এবং ১০ জন আহত হন। আশপাশের মানুষ ৪৮ বছর বয়সী এক হামলাকারীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। অভিযুক্ত এই গাড়িচালক আক্রমণের সময় চিৎকার করে সব মুসলমানকে হত্যা করার কথা বলছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, নিহত ব্যক্তি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিন্সব্যারি পার্ক মসজিদটি যুক্তরাজ্যে বেশ পরিচিত। উগ্রবাদ ছড়ানোর দায়ে এই মসজিদের সাবেক ইমাম আবু হামজাকে ২০০৩ সালে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে নতুন ব্যবস্থাপনায় তা আবার চালু হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১৫ সালে আবু হামজাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয় যুক্তরাজ্য।

এদিকে আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ধর্মের নামে আরেক ধরনের নৃশংসতা চলছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে কথিত ‘গো-রক্ষার’ সমর্থকরা গরুর মাংস খাওয়া বা বহন করার অভিযোগে বেশ কয়েকজন মুসলিমকে হত্যা করেছে। এই উগ্রতা বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে শেষ পর্যন্ত সরকারের কিছুটা টনক নড়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যগুলোকে গো রক্ষার নামে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৬ জুলাই সংসদের বর্ষাকালীন সেশন শুরুর আগের দিন সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি বলেন, এটাকে যেন রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক রং না দেওয়া হয়। মোদি বলেন, যারা গো রক্ষার নামে আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রদেশগুলোর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ভারতের বিরোধী দলীয় নেতারা গো রক্ষার নামে মুসলিম ও দলিতদের উপর সহিংসতার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন। ১৭ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদীয় সেশনে তারা এই বিষয়টি তুলে ধরতে শুরু করেছেন। তবে ১৬ জুলাই মোদি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল গো রক্ষার নামে সহিংসতার রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে যা ভারতের অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য ক্ষতিকর। এদিকে গত মাসে এক বিবৃতিতে মোদি বলেছিলেন, গো পূজার নামে মানুষ হত্যা মেনে নেওয়া হবে না। এসব বক্তব্যের পরও অবশ্য গো রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড থামছে না। এই হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে, এমন প্রমাণও কম।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে কথিত গো রক্ষকরা ৬৩টি আক্রমণ পরিচালনা করেছে। এতে ২৮ জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ২৪ জনই মুসলিম। আহত মানুষের সংখ্যা ১২৪ জন। আক্রান্তদের সবাই গরুর মাংস বহন করছেন বা বাড়িতে সংরক্ষণ করেছেন এই সন্দেহের কারণে নিপীড়িত হন। শুধু এ কারণে বেশ কয়েকজনকে প্রাণও হারাতে হলো। ধারাবাহিক এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মাঠে নেমে প্রতিবাদ করেছে সে দেশের নাগরিক সমাজ। গত কিছুদিনে তারা অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছেন। তাদের মতো সুর তুলেছেন এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। বহুত্ববাদের আদর্শ হয়ে টিকে থাকতে হলে ভারতকে এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হবে।

ধর্মের নাম করে উগ্রতা, সন্ত্রাসী কর্মকা- সবচেয়ে বেশি চলছে আরব ও আফ্রিকায়। সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আছেন। অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে প্রাণপণ ছুটে চলেছেন তারা। মানবিক বিপর্যয়ে পড়ছে অনেক এলাকা। এর জন্য উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর দায় অবশ্যই আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের সৃষ্টির পেছনে পরাশক্তিগুলোর ক্ষমতার লোভ, মোড়লীপনার মোহও কম দায়ী নয়। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব মিত্ররা সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়ে তাদের অজান্তেই আইএস নামের একটি খুনে সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। এই সংগঠনের চোরাবালিতে এখন ভুগতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের। বিশ্ব মোড়লদের আগ্রাসনের আগে ইরাক, লিবিয়ার মতো দেশের জনগণ সুখী ও সমৃদ্ধির মধ্যে ছিল। এখন তাদের অনটনে ও বোমা হামলার মধ্যে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অথচ যেসব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরাক, লিবিয়ায় হামলা করেছিল পরাশক্তিরা পরে তার অনেক মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ হয়েছে।

আমি মনে করি, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকা-, উগ্রবাদ নির্মূল কঠিন এক কর্ম। এর জন্য নানা কর্মসূচিও হাতে নেওয়া যেতে পারে। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। সব ধরনের অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। আর সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি তথা ব্যাপকভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে হবে। সমাজের সব স্তরের সবাইকে কথা বলতে দিতে হবে। সবার অধিকার জানতে হবে, বুঝতে হবে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে জন মিলটনের একটি পঙক্তি হচ্ছে- ‘ডিসকাশন ইজ নলেজ ইন দ্য মেকিং’। আসলেই তো আলোচনার মাধ্যমে অনেক পথ খুলে যায়। এভাবে সমস্যার সমাধান সহজেই মিলতে পারে।

মোহাম্মদ জমির : সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :