চলচ্চিত্রে অবদান: আজীবন সম্মাননা নিলেন শাবানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৭, ২০:৩৬ | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৯:২৩

বাংলা চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পেলেন শাবানা। ৬০ এর দশকের শেষ দিক থেকে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে আসা এই নারীকে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন স্বয়ং সরকার প্রধান।

একই অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মামনা দেয়া হয়েছে সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌসী রহমানও। তবে অনুস্থতার কারণে তিনি হাজির হতে না পারায় তার পুত্রবধূ সৈয়দা সাদিয়া আমিন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেন।

সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

বাংলা চলচ্চিত্র আর চিত্রনায়িকা শাবানা নামটি আলাদা করা কঠিন। স্বাধীনতার আগে থেকে রূপালী পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রীর নায়িকা থাকাকালীন জনপ্রিয়তা হাল আমলে তুলনা করা কঠিন। তিন যুগের সিনেমা জগতে প্রায় প্রতিটি সিনেমাই ব্যবসা সফল হয়েছে তার। এভাবেই সাফল্য শব্দটি জড়িয়ে গিয়েছে তার সঙ্গে। তবে জীবনাচরণ পাল্টে বহুদিন তিনি পর্দার বাইরে।

গুণী এই অভিনেত্রীর পূর্ণ নাম আফরোজা সুলতানা আর ডাক নাম রত্মা। শিশুশিল্পী হিসেবে নতুন সুর চলচ্চিত্রে চলচ্চিত্রে আবির্ভাব শাবানার। পরে ১৯৬৭ সালে চকোরী চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রেই

চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাঁর নাম শাবানা দেন।

৩৬ বছর কর্মজীবনে ২৯৯টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবানা।২০০০ সালে রূপালী জগৎ থেকে নিজেকে আড়াল করে ফেলেন এ নায়িকা।

বাংলা সিনেমা থেকে বিদায় নেয়ার পর শাবানা স্থায়ী হন যুক্তরাষ্ট্রে, মনযোগ দেন ধর্মকর্মে। মাঝে মাঝে ঢাকায় এলেও প্রকাশ্যে আসেননি আর। এক পর্যায়ে পুরনো ছবিগুলো নষ্ট করে দেয়ার অনুরোধও করেন তিনি।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন শাবানা। তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক রাজনীতিকে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চাইছেন। আর স্বামীর জন্য এক সমাবেশে নৌকা প্রতীকে ভোটও চেয়েছেন শাবানা।

দীর্ঘ কর্মজীবনে শাবানা অভিনয়ের জন্য নয় বার ও প্রযোজক হিসেবে এক বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৫ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সম্মাননা নেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় শাবানাকে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাবানা ও সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানকে পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘অভিনয়ে ও সঙ্গীতে তাদের অবদান অনেক। তাদের অবদান যেন ভুলে না যাওয়া হয়। সম্মাননা দিয়ে তাদের অবদার স্মরণ করে দিতে চাই।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেয়া হচ্ছে ২০০৯ সাল থেকে। শাবানা ও ফেরদৌসীকে নিয়ে এখন পর্যন্ত এই পুরস্কার পেয়েছেন নয় জন।

যারা পুরস্কার পেলেন

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৫টি ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে এই পুরস্কার।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫ এর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন শাকিব খান ও মাহফুজ আহমেদ এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান।

‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ চলচ্চিত্রের জন্য শাকিব খান এবং ‘জিরো ডিগ্রি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাহফুজ আহমেদ শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।

২০১৫ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে রিয়াজুল মওলা রিজু পরিচালিত ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ ও মোরশেদুল ইসলামের ‘অনিল বাগচীর একদিন’। তাঁরা যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ‘একাত্তরের গণহত্যা ও বধ্যভূমি।’

এছাড়াও, একই বছরে পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন গাজী রাকায়েত (অনিল বাগচীর একদিন), পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী তমা মির্জা (নদীজন), খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ইরেশ যাকের (ছুঁয়ে দিল মন), শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী যারা যারিব (প্রার্থনা) এবং শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পাচ্ছে প্রমিয়া রহমান (প্রার্থনা)।

‘অনিল বাগচীর একদিন’ সিনেমার সংগীত পরিচালক সানী জুবায়ের নির্বাচিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে। শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন সুবীর নন্দী ও এস আই টুটুল।

‘মহুয়া সুন্দরী’ সিনেমার ‘তোমারে ছাড়িতে বন্ধু’ গানের জন্য সুবীর নন্দী এবং ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ চলচ্চিত্রের ‘উথাল পাতাল জোয়ার’ গানের জন্য টুটুল এ পুরস্কার পেয়েছেন।

এবারের শ্রেষ্ঠ গায়িকা হয়েছেন প্রিয়াংকা গোপ (আমার সুখ সে তো, চলচ্চিত্র: অনিল বাগচীর একদিন), শ্রেষ্ঠ গীতিকার আমিরুল ইসলাম (উথাল পাতাল জোয়ার, চলচ্চিত্র: বাপজানের বায়োস্কোপ), শ্রেষ্ঠ সুরকার এস আই টুটুল (উথাল পাতাল জোয়ার, চলচ্চিত্র: বাপজানের বায়োস্কোপ)।

প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ‘অনিল বাগচীর একদিন’ চলচ্চিত্রের জন্য।

অন্যান্য শাখায় পুরস্কার পেয়েছেন – শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: মেহেদী রনি (বাপজানের বায়োস্কোপ), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: সামুরাই মারুফ (জিরো ডিগ্রী), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: মাহফুজুর রহমান খান (পদ্ম পাতার জল), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রতন কুমার পাল (জিরো ডিগ্রী), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: মুসকান সুমাইকা (পদ্ম পাতার জল) এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: শফিক (জালালের গল্প)।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/জেআর/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :