চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবারো পদ্মায় ভাঙন

জহুরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০১৭, ২১:৩০

বর্ষায় পানি বৃদ্ধির সাথে-সাথে আবারো রাক্ষুসে হয়ে উঠেছে পদ্মা। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নে ভাঙন ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি, বসতভিটা, আমবাগান ও ফসলি জমি। আর এলাকার মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ইউপি ভবন, বিজিবি ক্যাম্প, হাট, মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ বেশ কয়েক বছর যাবত আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলে রয়েছে বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা।

কিছুদিন আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের রোডপাড়া এই গ্রামটি মুখরিত ছিল মানুষের আনাগোনায়। বন্যা শুরু না হতেই রাক্ষুসে পদ্মা আবারো থাবা বসিয়েছে ইউনিয়নটিতে। ভাঙনের কবলে পড়ে তা চিরতরে মুছে যেতে বসেছে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, শতাধিক ঘরবাড়ি, বসতভিটা, আমবাগান ও ফসলি জমি। শুধু বসতভিটাই নয়, দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না হলে চরবাগডাঙ্গা, আলাতুলি, দেবীনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়ন অচিরেই হারিয়ে যাবে পদ্মার করাল গ্রাসে। বন্যার ভয়াবহতা বাড়লে যোগ হবে দুর্ভোগের নতুন মাত্রা। এই অবস্থায় পদ্মা পাড়ের মানুষগুলোর দিনকাটছে চরম আতঙ্কের মধ্যে। ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।

পদ্মার বাম তীরে বাংলাদেশ আর ডান তীরে ভারতীয় ভূখণ্ড থাকলেও, এই অংশের বাম তীরেও রয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ড। নদী ভাঙন রোধ না হলে অচিরেই দেশের ভূখণ্ড চলে যাবে ভারতের দখলে। আর বছর বছর নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব এ মানুষগুলোকে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাসের বানী রাজনীতিবিদরা শুনিয়ে আসলেও; বাস্তবে নেই প্রতিফলন। এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, বিশেষজ্ঞদের মত, যৌথ নদী চুক্তির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতের। সেই সাথে প্রয়োজন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে বাস্তবতার নিরিখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।

রোডপাড়া গ্রামের লুৎফল রহমান জানান, পদ্মার ভাঙনে আমার সবকিছুই কেড়ে নিয়ে গেছে। আমার মতো অনেকের এ অবস্থা। তারা এখন আতংকে আছে পদ্মার ভাঙন নিয়ে। অথচ কয়েকদিন আগেও এই জায়গা জমিগুলো সবই ছিল। এ রকম হাজারো ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন লুৎফর রহমান।

আব্দুস সালাম জানান, পদ্মা নদী আমার জায়গা জমি সবই শেষ করে দিয়েছে। এখন শুধু আছে একটি কুড়ে ঘর যেখানে আমার পরিবার নিয়ে মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সরকার আমাদের দিকে তাকিয়ে হলেও যেন ভাঙনরোধে বাঁধটি নির্মাণ করে।

শফিকুল ইসলাম জানান, দ্রুত পদ্মানদীতে বাধ নির্মাণ না করলে কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নটি ভারতে মানচিত্রের যোগ হবে।

আনোয়ার হোসেন জানান, চরবাগডাঙ্গার পদ্মার ভাঙন এমপি, মন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

শিল্পী রানী জানান, ৬৫ বছর বয়সে আমি বেশ কয়েকবার বাড়ি ঘর পদ্মানদীর ভাঙনে সরিয়ে ফেলি। আর জমি জায়গা খেয়ে ফেলেছে এই রাক্ষুসী পদ্মা।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর আলী জানান, হুমকির মুখে পড়েছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বিজিবি ক্যাম্প, একটি মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ৭টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, অসময়ে ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় এ ভাঙন। প্রায় ৫শ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে নদী। এ অবস্থায় দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাঁধ নির্মাণের অনিশ্চয়তার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই দায়ী করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ আব্দুল ওদুদ।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :