‘এভাবেই কি ভাসবে ঢাকা?’

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১৯:১১ | প্রকাশিত : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১৭:৩৯

‘এভাবেই কি ভাসবে রাজধানী ঢাকা? আমাদের দুর্দশার কি কোন সমাধান হবে না। এই নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে একের পর এক কত ধরনের প্রকল্প নিচ্ছে কিন্তু কোন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না’- এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়লেন বেসকাররি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাহবুব ইফতেখার খান।

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষেরা পরেছেন চরম বিপাকে।

মতিঝিলের রাস্তায় ফুটপাত ধরে যাচ্ছিলেন বেসকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইকবাল মাহমুদ। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেই ফেললেন, ‘এখন রাজধানী ঢাকায় চলতে গেলে নৌকার দরকার, সরকার তো রাজধানীর জলাবদ্ধতা দুর করতে পারলো না, তাহলে সরকার যেন জনগণকে একটা করে নৌকা দেয়।’

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জলজট আর যানজটে রাজধানীর মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। গত রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও বুধবার সকাল থেকে প্রায় টানা বর্ষণ হয়েছে। এতে রাজধানীতে জলজটে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী এবং অফিসগামী মানুষগুলোর কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

টানা বর্ষণে রাজধানীর প্রায় অধিকাংশ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। বৃষ্টিতে জলজটে গণপরিবহনের সংকটের কারণে সুযোগ বুঝে রিকশাচালক, সিএনজিচালকেরা ভাড়া হাঁকাচ্ছেন দ্বিগুনেরও বেশি। বাধ্য হয়ে অনেকেই তাদের দাবি মেনে নিয়ে যাত্রীরা যাচ্ছেন গন্তব্যে। বৃষ্টির ভোগান্তির পাশাপাশি রিকশা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের এমন ব্যবহারে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে এবারে ৩৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি নিয়ে এসেছে দুর্যোগ। রাজধানীতে এখন উঁচু বা নিচু কোন পার্থক্য নেই। রাজধানীল সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে রাজপথ, ঘরবাড়ি সব ডুবিয়ে দিয়েছে রাত থেকে চলা টানা এই বর্ষণে।

বৃষ্টিতে নতুন ঢাকা-পুরান ঢাকার কোনো পার্থক্য ছিল না দুপুর পর্যন্ত এখন। সব এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে ‍ঝুম বৃষ্টি। রাজধানীর রায়েরবাগ, বংশাল, দনিয়া, ধোলাইখাল, খিলক্ষেত, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকার আর কে মিশন রোড, খিলগাঁও, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, এলাকার কোথাও হাঁটু, কোথাও বা তার চেয়ে বেশি পানি জমে তৈরি হয় জলজট।

রজধানীর এই জলজট নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছে, আবার অনেকে বলছে, বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নেয়ায় আজ জলজটে রাজধানীবাসীকে ভুগতে হচ্ছে। বেসকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আসলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে অনেক প্রকল্প নিলেও, বাস্তবমুখী কোন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না। এ কারনে এই জলাবদ্ধতায় ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে।’

এদিকে বৃষ্টির পাশাপাশি যানজট ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়েছে আরও কয়েকগুণ। সকাল থেকেই রাজধানীর মতিঝিলের রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে ছিল, এতে ওই এলাকা ছিল যানজটের কবলে। ওই সব এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে স্থবির হয়ে পড়ে সড়কগুলো।

দৈনিক বাংলায় যানজটে স্থবির হয়ে ছিল। এখানেই যানজটে গাড়ি নিয়ে বসে অপেক্ষা করছেন প্রাইভেট গাড়ি চালক আল আমীন। ঢাকাটাইমসকে তিনি তিনি বলেন, ‘এই যানজটের কারণ হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঢাকা শহরের জলাবব্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনে ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরে থাকে। এ কারণে পানি সরে যেতে পারছে না। ড্রেনগুলি পরিস্কার করতে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ।’

ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ নিয়ে জানতে চাইলে বেসকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরিফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকায় যেন নূহ নবীর প্লাবন হয়েছে, শহরের মানুষের কাজকর্ম থেমে গেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এই অবস্থা থাকলে ঢাকা শহর আর স্বপ্নের শহর থাকবে না, এটা একটি দুঃস্বপ্নের নগরী হয়ে যাবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার বৃষ্টি কমে যেতে পারে। এদিকে আজ সকাল থেকে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো থেকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে এই সংকেত দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৩ নম্বরের বদলে এখন শুধু নৌবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/জিএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :